Rashid Khan Death

ভাইফোঁটা নিত, বিপুল খ্যাতি সত্ত্বেও মাটির মানুষ

রাশিদের সঙ্গ আমার খুব ভাল লাগত। দেখা হলেই আমায় পান বানিয়ে দিত। ওর ছেলেমেয়েরা আমায় পিসি বলে ডাকে।

Advertisement

হৈমন্তী শুক্ল

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:১৮
Share:

ভাইফোঁটায় হৈমন্তী শুক্লের বাড়িতে উস্তাদ রাশিদ খান। —ফাইল চিত্র।

Advertisement

রাশিদের সঙ্গে আমার শুধুই গানের সম্পর্ক, এমন নয়। সম্পর্ক পারিবারিক। প্রতি বছর ভাইফোঁটা নিত আমার থেকে। আমায় কাছে গানের আবদার করত, গান শোনাত, গান নিয়ে গভীর ভাবনার কথা বলত। আমায় ‘বুড়ি’ বলে ডাকার একটা মিষ্টি ছেলে চলে গেল!

প্রচলিত অর্থ মানলে, সঙ্গীতে ওর আর আমার বিচরণক্ষেত্র এক নয়। কিন্তু আমার গানজীবনের সঙ্গে মার্গসঙ্গীতের যে ধারার যোগ, তার প্রতি নিরবচ্ছিন্ন শ্রদ্ধার বোধ দেখেছি রাশিদের মধ্যে। ‘তুমি এটা গাও না কেন, ওটা গাও না কেন’— এ ধরনের নানা কথা বলত। একসঙ্গে অনুষ্ঠানের জন্য চাপ দিত। এমনও হয়েছে, অনুষ্ঠানে একটা রাগ বা রাগিণী নির্বাচন করে তা গাইলাম আমরা। তার পর তারই আধারে কোনও বাংলা গান আমি গাইলাম আর রাশিদ কোনও হিন্দি বন্দিশ। বাংলা ভাষাটা বড্ড ভালবাসত। বাংলায় গাইতে চাইত।

Advertisement

যখন পরিচয় ছিল না আমাদের, তখনও পাগল ছিলাম রাশিদের কণ্ঠমাধুর্যে। পরিচয় ঘটামাত্র অচিরে তা নিবিড় হয়ে ওঠে। এত প্রাণোচ্ছ্বল মানুষ খুব কম দেখেছি। শাস্ত্রীয় গানে অমন বিপুল খ্যাতির পরেও মাটির মানুষ। রাশিদের গান শুনতে গিয়ে কখনও লাফিয়ে উঠেছি, কখনও অঝোর কেঁদেছি! রাশিদ গাইতে গাইতে সে-সব নজরও করত! পরে মজা করে বলত— ‘তুমি কী করছিলে জানো? এই রকম করছিলে! ওই রকম করছিলে!’ অবাক হয়ে ভেবেছি, দু’টো মানুষ কি এক? যে গাইছিল আর যে কথা বলছে এ ভাবে? পরে মনে হয়েছে, অমন স্বভাব না হলে কি আর এমন শিল্পী হয়!

কত বার কত জায়গায় একসঙ্গে গিয়েছি। সারা পথ শুধু গানের কথা! আমার বাবা পণ্ডিত হরিহর শুক্লের কথা, কী ভাবে শেখাতেন তিনি, বাবার শেখানো বন্দিশ— সে সব! সারাক্ষণ এক জন শিক্ষার্থীকে দেখেছি রাশিদের মধ্যে! অত বড় শিল্পী হয়েও মনের পড়ুয়াটাকে সুন্দর ভাবে বাঁচিয়ে রেখেছিল!

রাশিদের সঙ্গ আমার খুব ভাল লাগত। দেখা হলেই আমায় পান বানিয়ে দিত। ওর ছেলেমেয়েরা আমায় পিসি বলে ডাকে। কত বার নিয়ে গিয়েছে আমায় ওর শিক্ষার্থীদের কাছে গান নিয়ে কথা বলার জন্য। আমার বাড়ির অনুষ্ঠানেও কত বার এসে গান গেয়ে মাত করে দিয়েছে!

উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রখর শিল্পী হয়েও কাঠিন্য বা ছুতমার্গ ছিল না রাশিদের। এটা আমার খুব ভাল লাগত। শিল্পীর হৃদয় উদার কি না, তা ধরা দেয় সঙ্গীতের পরিবেশনায়। রাশিদ খান তার বড় প্রমাণ।

ঈশ্বরের কাছে অনুযোগ এটাই যে, খুব প্রয়োজন ছিল কি এত তাড়াতাড়ি ওকে কাছে টেনে নেওয়ার?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement