ফারহাদ ভিওয়ান্ডিওয়ালা।
বাংলায় প্রথম কাজ করে কেমন লাগল?
বাংলায় কাজ করার অভিজ্ঞতা খুবই ভাল। লকডাউনে আমি কলকাতায় যেতে পারিনি। মুম্বই থেকেই রেকর্ডিং করি। কিন্তু গানের কম্পোজার প্রতীক কুণ্ডু আমার কোনও অসুবিধা হতে দেননি। প্রথমবার বাংলায় গান গেয়েছি। ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে নিজের মতো করে শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছেন। এ রকম অল্পবয়সী একটি ছেলের এত গুণ দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম। ‘কম্যান্ডো ৩’-এর পর আঞ্চলিক ছবিতে গান করব কি না সেই নিয়ে মনে দ্বিধা ছিল। তবে এখানকার মানুষের কাজের প্রতি নিষ্ঠা আমাকে অবাক করেছে…
বলিউডে বেশ বড় বাজেটের ছবিতে গান করেছেন। কিন্তু কাজের সংখ্যা এত কম কেন?
আমি গুজরাটি ও তামিল ভাষায় অনেক গান গেয়েছি । এ ছাড়াও আরও দুটি ছবি আসতে চলেছে যেখানে আমি গান করেছি। তাদের মধ্যে একটি এ মাসেই নেটফ্লিক্স-এ মুক্তি পাবে। এ ছাড়াও হাতে আরও দুটি ছবি রয়েছে। নিজের মতো করে আমি ভাল করে এগোচ্ছি। আমি মনে করি, যখন যে রকম কাজ আসবে আমি তা ভাল করে করার চেষ্টা করব। সংখ্যায় আমি কোনওদিনই খুব একটা বিশ্বাসী নই।
আপনার সমসাময়িক অরিজিৎ সিংহ, অঙ্কিত তিওয়ারি, আরমান-অমল জুটি তুলনামূলক অনেক বেশি কাজ করছে। খ্যাতিও অনেক বেশি। খারাপ লাগে না?
না। আমার খারাপ লাগে না। আজ অরিজিৎ যে সাফল্য পেয়েছে, তা ওঁর পরিশ্রমের ফল। আমি মনে করি ভাগ্য এবং সময় মানুষকে নিজের জায়গায় ঠিক পৌঁছে দেয়। আমি যদি জীবনে কিছু না করতে পারি, সেই দায়ভার পুরোটাই আমার। আমি মনে করব আমি যোগ্য ছিলাম না বা নিজের সবটা দিয়ে কাজ করতে পারিনি। অন্যকে নিজের ব্যর্থতার জন্য দায়ী করতে পারব না। আমি কাউকেই নিজের প্রতিযোগীতা বলে মনে করি না। আমি সুফি থেকে রক সবই গাইতে পারি। কাজের অভাব হবে না।
বলিউডে সত্যিই নেপোটিজম, স্বজনপোষণ আছে?
(উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে) পনের বছরে আমার এমন কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি। বরং ইন্ডাস্ট্রিতে আমার অভিজ্ঞতা বরাবরই ভাল। আনকোরা হয়েও প্রথম কাজ পেয়েছি অমিতাভ বচ্চনের ছবিতে। এ রকম ক’জনের সঙ্গে হয় বলুন তো!
তবে নেপোটিজম কিছুটা করোনার মতো। আমরা জানি এটা আছে। কিন্তু সবার হয় না। আসলে সবটাই পারস্পারিক সম্পর্কের উপর নির্ভর করে। আমার কেরিয়ারের শুরুতে বিনয়-গৌতমের মতো প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীতকার কাজ দিয়েছেন আবার প্রসন্ন শেখরের মতো নতুন একজনও ‘সরকার’-এর মতো বড় ছবিতে সুযোগ দিয়েছেন। আমি আবার পরবর্তী সময় বিক্রম মন্ট্রোসের মতো নতুন প্রতিভাদের সঙ্গ দিয়েছি। ইন্ডাস্ট্রি এ ভাবেই এগিয়ে চলে।
'সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস'-এ বিচারকের আসনে ছিলেন ফারহাদ
অমল-আরমানকে ওঁদের পরিবারের নাম কিছুটা এগিয়ে রাখে না?
একদমই রাখে না। আপনারা অনেকেই জানেন না অমল বেশ কয়েক বছর বলিউডের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক সেলিমের সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। কঠোর পরিশ্রমই ওঁদের আজ এই সাফল্য এনে দিয়েছে। এতে ওঁদের পরিবারের কোনও ভূমিকা নেই।
কুমার শানু, অভিজিৎ, শান, সোনু নিগমের মতো গায়করা এখন আর সেভাবে কাজ পান না…
ওঁরা তো প্রচুর শো করছেন এখন। যখন অভিজিৎ দা, শানুদা বলিউডে নাম করা শুরু করলেন, তখন তো কিশোর দাদা, রফি দাদারাও নিজের জায়গায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। (একটু থেমে) একবার ভেবে দেখুন টাইগার শ্রফের মতো সিক্স প্যাকওয়ালা একজন অল্প বয়সী নায়কের জন্য এখন যদি অভিজিৎ দা প্লে ব্যাক করেন তা হলে কেমন লাগবে! সময় বদলেছে, পুরনোদের নতুনদের জায়গা করে দিতে হবে। এটাই তো নিয়ম।
তার মানে আপনি বলছেন সময়ের সঙ্গে সবাইকেই সরে যেতে হয়…
সময়ের নিয়ম তা-ই বলে। দেখুন শানু দাদাদের জার্নিটা সত্যিই অনেক সহজ ছিল। ওঁদের সময় কোনও প্রতিযোগিতাই ছিল না। আগে বিখ্যাত হতে হলে বলিউড অবধি পৌঁছতে হত। আমাদের এই সময় ইউটিউবে গান গেয়েও লক্ষ লক্ষ ভিউ পাওয়া যায়। তাই যারা সেখানে গান করে খ্যাতি পাচ্ছেন, তাঁরাও আমাদের প্রতিযোগী। শানু দাদারা পনের-কুড়ি বছর ধরে বলিউডে রাজত্ব করেছেন।
পুরনো গানের রিমিক্স নিয়ে কী ভাবেন?
রিমিক্স করতে গিয়ে গানের আমেজ না হারিয়ে গেলে আপত্তি করার কিছু নেই। কিছু মানুষের এ নিয়ে আপত্তি আছে জানি। কিন্তু আপনি যা-ই করুন, কিছু মানুষ তাতে অসন্তুষ্ট হবেন। সবাইকে খুশি করে আপনি চলতে পারবেন না। তা ছাড়া যে গানগুলির রিমিক্স করা হয়, সেগুলির সত্ব আগে কিনতে হয় মোটা টাকায়। পুরো বিষয়টির একটি বাণিজ্যিক দিকও রয়েছে।
ফারহাদ সময় এবং পরিশ্রমে বিশ্বাসী
কেরিয়ারের সব চেয়ে বড় হিটের পরেই করোনা, কী ভাবে মানিয়ে নিলেন?
(কিছুটা হেসে) খুব অসুবিধা হচ্ছল প্রথমে। তবে আমরা তো প্লে ব্যাক করি। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে মূল অসুবিধা তাঁদের হয়েছে যারা শুধু শো করেন। প্রচুর টেকনিশিয়ান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। করোনা তো যুদ্ধের মতো। আঁচ সবার গায়েই কম বেশি পড়েছে। চেষ্টা করেছি সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।
প্রথম বাংলা গান নিয়ে কতটা প্রত্যাশা?
এই গান নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। আর কয়েকদিনের মধ্যেই ইউটিউবে মুক্তি পাবে ‘মানব না হার’। যশ, নুসরত, মিমি, এনা---- এঁরা প্রত্যেকেই শুনেছি বাংলার বড় নাম। ওঁদের ছবিতে কাজের সুযোগ পেয়ে সত্যিই আপ্লুত। এই প্রসঙ্গে যে মানুষটার কথা বলতে হয় তিনি এরিক পিল্লাই। বলিউডের প্রথম সারির সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। এর আগে বাংলায় ‘ওয়ান’ ছবির একটি গানে কাজ করেছিল। ওঁর মাধ্যমেই এই সুযোগ আসে আমার কাছে। এই গানেও ‘তেরা বাপ আয়া’র আমেজ পাবেন শ্রোতা। সেই গান যখন এত ভালবাসা পেয়েছে, আশা করি প্রথম বাংলা গানের ক্ষেত্রেও অন্যথা হবে না।
আবার নিশ্চয়ই বাংলায় আপনার গান শোনা যাবে
প্রার্থনা করুন তেমনটা যেন হয়। এরপর কাজ করলে কলকাতায় এসে কাজ করবো। শুনেছি অনেক কিছু দেখার আছে। ঘুরে দেখবো। চিনব শহরটাকে।