‘আলাপ’ ছবির শুটিংয়ে আবীর চট্টোপাধ্যায় এবং মিমি চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের প্রশিক্ষণ সেমিনার চলছে। মধ্যাহ্নভোজনে সকলেই ফুরফুরে মেজাজে। ব্যাঙ্কোয়েটে বুফের লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে অদিতি। প্লেটে খাবার নিয়ে সোজা হেঁটে গিয়ে নিজের টেবিলে বসে পড়ল সে। পাশের টেবিল থেকে আদিতির দিকে কৌতূহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল পাবলো। তার মনের মধ্যে কী চলছে ক্যামেরায় অভিব্যক্তি দেখে বোঝা কঠিন। শট শেষ হতেই মনিটরের সামনে ‘কাট’ বললেন পরিচালক প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী। পরিচালকের নতুন ছবি ‘আলাপ’-এর শুটিং চলছে। এই ছবিতে পাবলো আর অদিতির হাত ধরেই আরও এক বার বড় পর্দায় ফিরছে আবীর চট্টোপাধ্যায় ও মিমি চক্রবর্তীর জুটি।
শট শেষ হতেই খুনসুটিতে মাতলেন আবীর-মিমি। পরিচালক তত ক্ষণে পরবর্তী দৃশ্যের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। আবীর আর মিমি নিজেদের মধ্যে পরবর্তী দৃশ্য নিয়ে খানিক আলোচনা সেরে নিলেন। তার পর পরিচালক এক বার রিহার্সাল করবেন। দু’জনের চরিত্রের মধ্যে সমীকরণ খতিয়ে দেখবে ছবিটি। গঙ্গা তীরবর্তী একটি বিলাসবহুল হোটেলে শুটিং লোকেশন। ব্যাঙ্কোয়েটের বাইরে পরবর্তী শট। ব্যাকড্রপে অদিতি রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে আনমনা। এ দিকে ক্যামেরার সামনে ক্লোজ়ে পাবলো আর স্বাতীলেখা (স্বস্তিকা দত্ত) একান্তে আড্ডা দিতে ব্যস্ত।
শট শেষ হতেই পাওয়া গেল মিমিকে। শট দিতে গিয়ে বেশ কয়েক বার খাবার খেতে হয়েছে অভিনেত্রীকে। ডায়েট কি ভঙ্গ হল? মিমি হেসে বললেন, ‘‘না না! দেখে মনে হচ্ছে। আসলে সে রকম কিছুই খেতে হয়নি। কায়দাটা রপ্ত করতে হয়।’’ এই ছবিতে আবীরের সঙ্গে তাঁর রোম্যান্টিক অবতার দেখবেন দর্শক। ছবির প্রথম পোস্টারে ফ্রিজের গায়ে সাঁটা একাধিক চিরকুট দেখা গিয়েছে। সেই সূত্র ধরেই মিমি বললেন, ‘‘এটুকু বলতে পারি, ওই চিরকুটের সূত্র ধরেই আমাদের সম্পর্কের সূত্রপাত। এখন তো সম্পর্ক ফোনে শুরু হয়, আবার হয়তো একটা মেসেজেই ভেঙে যায়। এই ছবিটা কিন্তু সেখানে দর্শকদের স্মৃতিমেদুরতায় ভাসাবে।’’ আবীরকে অভিনেত্রী নিজের পরিবারের অংশ হিসেবেই মনে করেন। বললেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে যখন কাউকে চিনতাম না, তখন আবীর আমার সঙ্গে ছিলেন। তাই একসঙ্গে কাজ করতে গিয়েও হয়তো সেই রসায়নটা ফুটে ওঠে। বাকিটা দর্শক বলবেন।’’
‘আলাপ’-এর শুটিং ফ্লোরে মিমি চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
লাঞ্চ ব্রেকে আবীর তখন হোটেলের ঘরে বিশ্রাম করছেন। অভিনেতা বলছিলেন, ‘‘ডিওপি হিসেবে চাকীদার সঙ্গে আগে কাজ করেছি। আসলে প্রায় ১০ বছর আগে উনি আমাকে আর মিমিকে নিয়ে একটা ছবির পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সেই ছবিটা হয়নি। ভাল লাগছে এ বার যে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারলাম।’’ মিমির সঙ্গে তাঁর কাজ নিয়েও আশাবাদী আবীর। বললেন, ‘‘আমরা বেশ মজা করে শুটিং করছি। আশা করছি, পর্দায় সেই সমীকরণটাই ধরা পড়বে।’’
লাঞ্চের পর উপরে ডেকে পাওয়া গেল পরিচালকের। লাইট কমে আসছে। বিকালের গঙ্গার দিক থেকে ঠান্ডা হওয়ার বেগ। ঝটপট দিনের বাকি দৃশ্যগুলো সেরে নিতে চাইছেন পরিচালক। ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠিত সিনেমাটোগ্রাফার প্রেমেন্দু। ‘পলাশের বিয়ে’র পর মিমির সঙ্গে এটা তাঁর দ্বিতীয় কাজ। আবীরের সঙ্গে প্রথম। তবে এই ছবি নিয়ে খুব বেশি এখনই খোলসা করতে চাইছেন না পরিচালক। বললেন, ‘‘ আলাপ হচ্ছে সম্পর্কের পূর্বরাগ। সেখানে অদিতি-পাবলোর জীবনে যে সম্পর্ক তৈরি হয়, সেটা এক সময় প্রশ্ন তোলে যে এটা কী রকম সম্পর্ক? ভাল লাগা না কি ভালবাসা।’’ মূলত রোম্যান্টিক কমেডি। কিন্তু পরিচালকের দাবি, সেখানে লুকিয়ে রয়েছে বিভিন্ন স্তর। গত বছর বক্স অফিস সফল ছবি ‘রক্তবীজ’-এ আবীর-মিমি জুটি দর্শকদের পছন্দ হয়েছে। জুটিকে নতুন ভাবে হাজির করতে বাড়তি কোনও চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন না পরিচালক। প্রেমেন্দু বললেন, ‘‘এ বারের সমীকরণটা কিন্তু সম্পর্ণ আলাদা। তাই তুলনা করা ঠিক নয়।’’ আবীর প্রসঙ্গেই পরিচালক বললেন, ‘‘বিগত কয়েক বছরে আবীর যে ধরনের ছবি করছে, সেখানে ওর রোম্যান্টিক সত্তাটা সেই ভাবে ধরা হয়নি। আমি এই ছবিতে সেটাকে ফিরিয়ে আনতে চাইছি।’’
আবীর-মিমি যখন শট দিচ্ছেন, তখন এক পাশে চেয়ারে নিজের ফোনে ব্যস্ত স্বত্বিকা। ফরম্যাল পোশাকে অন্য রকম দেখাচ্ছে তাঁকে। বললেন, ‘‘আমি, আবীরদা আর মিমিদি— তিন জনের চরিত্র তিনটি আঙ্গিকে জীবনকে দেখে। আলাপ না হলে কোনও সম্পর্ক পরিণতি পায় না। এই ছবিতে সেই আলাপেরই বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।’’ শট দেখে আন্দাজ করা যেতে পারে তাঁর অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে পাবলো চরিত্রটির ‘বিশেষ’ যোগসূত্র রয়েছে। অভিনেত্রী কিন্তু এখনই এই বক্তব্যে সিলমোহর দিতে নারাজ। হেসে বললেন, ‘‘উত্তর লুকিয়ে রয়েছে ছবির মধ্যে।’’
পরিচালক প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী ও স্বস্তিকা দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায়, তন্বী লাহা রায়, কিঞ্জল নন্দ, সত্রাজিৎ সেন প্রমুখ। পরিচালকের কাহিনি অবলম্বনে চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। চলতি মাসেই সুরিন্দর ফিল্মস প্রযোজিত ছবিটির শুটিং শেষ হওয়ার কথা।