(বাঁ দিকে) নন্দিতা রায়। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
‘বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান’, এই মুহূর্তে বাংলা সিনেমা নিয়ে এটাই বহুলপ্রচলিত শব্দবন্ধ। কারণ, দর্শক কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া, গত কয়েক মাসে টলিউডে টালমাটাল অবস্থা। কখনও ফেডারেশনের সঙ্গে পরিচালকদের দ্বন্দ্ব। কখনও আবার টেকিনিশিয়ানদের ক্ষোভ পরিচালকদের বিরুদ্ধে। এর মাঝে নতুন নিয়ম জারি করেছে ইম্পা (ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন)। প্রযোজকদের ছবিপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই টলিপাড়ায় শুরু হয়েছে চাপানউতর। বাংলা সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। যদিও এ সবের মাঝেই যেন সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হল উইন্ডোজ় প্রযোজনা সংস্থার। আগামী ৮ অক্টোবর মুক্তি পেতে চলেছে ‘বহুরূপী’। এখনও অগ্রিম বুকিং শুরু হয়নি এই ছবির। কিন্তু, বাংলা সিনেমার এই মন্দার বাজারেও ছবিমুক্তির আগেই ৫০ লক্ষ টাকা আয় করে ফেলল প্রযোজনা সংস্থা। কোন পন্থায় সম্ভব হল এমন লক্ষ্মীলাভ? আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
এ বছরের পুজোয় উইন্ডোজ় প্রযোজনা সংস্থার উপহার ‘বহুরূপী’। নব্বইয়ের দশকের এক ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনা এই ছবির প্রেক্ষাপট। যাঁকে ঘিরে গল্প সেই অপরাধীর ভূমিকায় স্বয়ং শিবপ্রসাদ। তাঁর বিপরীতে কৌশানী মুখোপাধ্যায়। ছবির প্রথম গান ‘শিমুল-পলাশ’ ইতিমধ্যেই লোকের মুখে মুখে ঘুরছে। তার পর মুক্তি পেয়েছে ‘আজ সারা বেলা’। তৃতীয় গান ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’ মুক্তি পেয়েছে বুধবার। এ বার ছবির গানের স্বত্ব বিক্রি হল ৫০ লক্ষ টাকায়। শিবপ্রসাদের কথায়, “শুধু ‘বহুরূপী’র গানের স্বত্ব বিক্রি হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকায়। এ ছাড়াও, আমার ‘বস্’ ছবিটির স্বত্বও বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আগামী বছর যে দু’টি ছবি মুক্তি পাবে তাদেরও গানের স্বত্ব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কিনেছে জঙ্গলি মিউজ়িক।”
এই সাফল্যের কৃতিত্ব শিবপ্রসাদ দিতে চান শিল্পী থেকে সুরকার— সকলকে। তিনি বলেন, “এটা বাংলা সিনেমার জন্য বিরাট খবর। তা-ও আবার এমন একটা মূল্যে। আগে কোনও বাংলা ছবির ক্ষেত্রে এমন হয়েছে কি না জানি না। তবে আমাদের পরিচালিত ছবির ক্ষেত্রে প্রথম।”
‘বহুরূপী’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে।
উইন্ডোজ়ের ছবিতে গান যে একটা অনুঘটকের কাজ করে তা মানছেন শিবপ্রসাদ নিজেই। সম্প্রতি তাঁদের ‘গোত্র’ ছবির ‘রঙ্গবতী’ গানটি ২৫.৫ কোটি মানুষ দেখেছিলেন। পরিচালকের কথায়, “গান হিট করলে সিনেমার আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়। এমন অনেক দর্শক রয়েছেন যাঁরা গানের জন্য সিনেমা দেখতে যান। সেই আকর্ষণ আজও রয়েছে। তাই সিনেমা হিট করতে গানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।”
একটা সময় ছিল যখন লোকসঙ্গীত একেবারে হাতেগোনা দর্শকের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকত। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশ্য পরিবর্তন এসেছে। নতুন প্রজন্মও র্যাপ জ্যাজ়ের মাঝে লোকসঙ্গীতে মজেছেন। তবে বাংলায় র্যাপের জন্ম যে লোকসঙ্গীতের হাত ধরেই সে কথা জানালেন শিবপ্রসাদ। সেই মতো ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’ গানের শুরুতে ব্যবহার করেছেন বাংলার নিজস্ব এই র্যাপকে। শিবপ্রসাদের কথায়, “আমাদের এই ছবির গানগুলো ভীষণ রকম মাটির গান। বাঙালিয়ানায় মোড়া। ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’ গানের শুরুতে যে মজার র্যাপটা আছে তা সারা পৃথিবীতে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। বাংলায় র্যাপ তৈরি করেছেন বহুরূপীরাই। এগুলি খুঁজে বার করে আনাটাই কাজ।”