পরিচালক শমীক রায় চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত।
টলিপাড়ার ভাল ছবির সংখ্যা কমেছে, এমন অভিযোগ রয়েছে দর্শকমহলে। আবার ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের অভিযোগ, বড় প্রযোজনা সংস্থার দাপটে নাকি অনেক সময় এঁটে উঠতে পারে না তুলনায় ছোট প্রযোজকের ছবি। এই সময় টলিউডে নতুন প্রজন্মের যে পরিচালকরা কাজ করছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম শমীক রায়চৌধুরী। তাঁর প্রথম ছবি ‘বেলাইন’ এর জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। গুটি কয়েক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। তার পর প্রথম দু’সপ্তাহে তেমন একটা সাড়া যে পেয়েছিলেন, তা নয়। কিন্তু চতুর্থ সপ্তাহ থেকে যেন চিত্রটা বদলে গেল। শমীকের প্রথম ছবি নিয়ে প্রশংসা শুরু হয় সমাজমাধ্যমে। এমনকি টলিপাড়ার পরিচালকমহলেও প্রশংসিত এই ছবি। তাঁর প্রথম ছবি বেশ গাঢ় ও ধূসর মনস্তত্ত্বের গভীর ছাপ রয়েছে।
এরই মধ্যে শমীক দ্বিতীয় ছবি ‘মায়া সত্য ভ্রম’ শুটিং শেষ করেছেন। তবে প্রথম ছবির প্রশংসা তাঁকে উদ্যাপনে মাতিয়ে রাখেনি। বরং উৎসাহ দিয়েছে নতুন কাজ করতে। তাঁর দ্বিতীয় ছবি তৈরির নেপথ্য কাহিনি শোনালেন শমীক।
নতুন ছবিতে রহস্যের স্তর যেমন রয়েছে, তেমনই উঠে এসেছে বর্তমান ভারতের বাস্তব রূপ। আধ্যাত্মিকতা ও মনুষ্যধর্মের নির্দিষ্ট দর্শনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এই ছবি। অপরাধ, রহস্য এবং রোমাঞ্চে আবর্তিত হবে ছবি। শমীকের কথায়, ‘‘প্রথম ছবি ‘বেলাইন’-এ যেমন দৃশ্যের জ্যঁর বদলে যায় চলতে চলতে, এই ছবিতেও প্রথম থেকে দর্শক যে জ্যঁরের গল্প বলে মনে করবেন, হঠাৎই তার মধ্যে খুঁজে পাবেন নতুন বাঁক। আমার ছবির ক্ষেত্রে গল্পের ধারাগুলি আলদা হলেও, কথনভঙ্গিটি একই।’’
প্রথম ছবির প্রশংসা বাড়তি চাপ তৈরি করে। সঙ্গে তৈরি হয় প্রত্যাশা। তবে শমীকের দাবি তিনি কেবল নিজের কাজটাই করতে চান বলা ভাল সিনেমা বানাতে চান। শমীকের কথায়, ‘‘আমি সাফল্য পেলেই উদ্যাপনে গা ভাসিয়ে দিতে রাজি নই। যে কোনও স্বীকৃতি নতুন কাজে নিজেকে ডুবিয়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। ‘বেলাইন’ মুক্তির চতুর্থ সপ্তাহে যখন ইতিবাচক কথা বলতে শুরু করলেন সকলে, তখন পাহাড়ে চলে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয় ছবির গল্পটা লিখতে শুরু করি।’’
এ ছবির শুরুতেই ইনস্পেক্টর সঞ্জয় কোনারের আট বছরে ছেলে নিঁখোজ। এর পর নিখোঁজ হয়ে যান স্যুইডিশ ফিল্ম প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং গবেষক। প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা দু’টি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু তার পর তদন্তে উঠে আসে এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব ত্রিলোকদর্শী বাবার নাম। ভারতীয় সমাজের বাস্তবতাও সংস্কৃতিকেও যেন জুড়তে চেয়েছেন পরিচালক। যদিও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে বরং বাস্তবতার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। পরিচালকের কথায়, ‘‘বাস্তব অনেক বেশি ধূসর। আসলে আমরা বাহ্যিক যে আলোটা দেখতে পাই তাঁর অন্তর্নিহিত অন্ধকারটা রয়েছে এই ছবি।’’
যদিও বর্তমান সময়ে সিনেমায় যখনই আধ্যাত্মিকতা জুড়েছে তখনই কোনও না কোনও ভাবে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। যদিও সে সব নিয়ে খুব একটা ভাবিত নন শমীক। বরং তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘‘সভ্য মানুষ, যাঁদের বোধবুদ্ধি আছে, তাঁরা এই ছবিটার অর্থ বুঝবে। এর পর যদি কারও এই ছবি দেখে কখনও ভাবাবেগে আঘাত লাগে তাঁরা এই ছবির দর্শক নন।’’