সারমেয়দের উপর হিংসার বিরুদ্ধে বার্তা দেবে নতুন ছবি ‘পারিয়া’। — ফাইল চিত্র।
বাংলা বছরের শেষ দিন। দুপুরে মোবাইলের ওয়েদার অ্যাপ বলছে তাপমাত্রা প্রায় ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। এ দিকে প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করেই শ্রীলেখা মিত্র হাজির হয়েছেন থানায়। নিখোঁজ কিছু পথকুকুর। হেনস্থা করা হচ্ছে তাদের খাবার খাওয়ান যে বৃদ্ধ মহিলাটি, তাঁকে। এ দিকে থানার অফিসার অভিযোগ দায়ের করার পরিবর্তে সাদা কাগজে কুকুরের স্কেচ করতে ব্যস্ত!
বাস্তব জীবনে পথকুকুরদের পাশে দাঁড়াতে শ্রীলেখাকে এ রকম ভাবে দেখে অভ্যস্ত অনেকেই। তবে এ বারে সবটাই ঘটছে সিনেমায়। তথাগত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘পারিয়া’র শুটিং চলছিল জোকার শ্রী নারায়ণ স্টুডিয়োতে। ছবিতে পথকুকুরদের জন্য কাজ করে এ রকম একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার শ্রীলেখা ওরফে সংঘমিত্রা। বেশ কয়েক বার দৃশ্যটির টেক করলেন পরিচালক। গরমে ইউনিটের অবস্থা কাহিল। তথাগত হাফ প্যান্ট এবং সাদা টি-শার্টে মনিটরে বসে। বলছিলেন, ‘‘গরম তো থাকবেই। বুঝতে পারছি সকলেরই অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু গরমকে বিশেষ পাত্তা না দিয়েই সকলে কাজ করছেন দেখে ভাল লাগছে।’’ ইতিমধ্যে শটের ফাঁকে উঠে এসে স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে মুখ পেতে দিলেন শ্রীলেখা। ঘাম শুকিয়ে না নিলে পরের শটে কন্টিনিউটি থাকবে না যে।
শুটিং ফ্লোরে অঙ্গনা, শ্রীলেখা, বিক্রম এবং তথাগত। ছবি: সংগৃহীত।
আগের দিন গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে ছবির অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিং। কিন্তু ইউনিটের কারও চোখেমুখে কিন্তু ক্লান্তির ছাপ নেই। পথকুকুরদেরই ‘পারিয়া’ নামে ডাকা হয়। তথাগত বলছিলেন, ‘‘পারিয়া অর্থাৎ অচ্ছুত। রাস্তার কুকুরদের এই নামে ডাকা হয়।’’
ছবির মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার বিক্রমের শুটিং ছিল না। কিন্তু ইউনিটের সঙ্গে এতটাই মিলেমিশে গিয়েছেন অভিনেতা, যে এক ফাঁকে ফ্লোরে হাজির। নিজের চরিত্র নিয়ে এখনই খুব একটা খোলসা করতে চাইলেন না তিনি। শুধু জানালেন, ছবিতে তাঁর চরিত্রটির কোনও নাম নেই। ছবিতে বিক্রমের লুকেও থাকছে চমক। তবে সেই লুক ক্রমশ প্রকাশ্য। চরিত্রের জন্য বিক্রমকে তিন মাস মিক্সড মার্শাল আর্টস-এর প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। ছ’মাস ধরে শরীরকে করেছেন আরও মেদহীন। মেকআপ রুমে বসে বলছিলেন, ‘‘এখান থেকে বেরিয়েই জিমে যাব। এই প্রথম কোনও ছবিতে আমাকে অ্যাকশন করতে হচ্ছে।’’ শুটিং শুরুর দিন কয়েক আগেই অ্যাকশন রিহার্সাল করতে গিয়ে বিক্রমের বাঁ পায়ের কড়ে আঙুল ভেঙে যায়। অভিনেতা বললেন, ‘‘বড় জুতো পরে ঘুরছি। এখন অনেকটাই ভাল আছি। ওষুধ খেয়েই শুটিং করছি।’’
ফ্লোরে তখন লাঞ্চ ব্রেক ঘোষণা করেছেন পরিচালক। শ্রীলেখাকে পাওয়া গেল মেকআপ রুমে। এই গরমে শুটিং কতটা উপভোগ করছেন তিনি? গরমকে হার মানাতে মেনুতে রয়েছে কাটা ফল ভাত এবং পাতলা মাছের ঝোল। লাঞ্চ করতে করতেই হেসে বলছিলেন, ‘‘আমি তো সবাইকে বলি ফ্লোরে কিচ্ছু চাই না, শুধু এসিটা দিয়ো।’’ বিক্রম এবং তথাগতর পোষ্যপ্রীতি কারও অজানা নয়। এক ছবিতে একাধিক পোষ্যপ্রেমী। এটা কি কাকতালীয়, না কি সুচিন্তিত কাস্টিং? শ্রীলেখা বললেন, ‘‘উত্তরটা তথাগত ভাল দিতে পারবে। তবে শুনেছি ছবির ঘোষণার পর সমাজমাধ্যমে অনেকেই নাকি বলেছিলেন এই ছবিতে শ্রীলেখাকে দেখতে চান।’’ এই প্রসঙ্গেই অভিনেত্রী বললেন, ‘‘আমি তো ওদের বলেছিলাম পারিশ্রমিক না দিলেও আমি ছবিটার অংশ হতে চাই।’’ ফ্লোরে তখন অঙ্গনা রায়ের ক্লোজ় শট নিচ্ছেন তথাগত। সাম্প্রতিক ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ ওয়েব সিরিজ়ে অঙ্গনার অভিনয় পছন্দ হয়েছে দর্শকের। এই ছবিতে তিনি শ্রীলেখার সংস্থায় কর্মরত কমলিনীর চরিত্রে।
ক্লোজ় শট নেওয়া শেষ হতে তথাগত সময় দিলেন। পথকুকুরদের উপর হিংসার বিরুদ্ধে বার্তা দেবে ‘পারিয়া’। তাই ছবিটাকে ‘ব্যক্তিগত প্রতিশোধ’ হিসেবেই দেখতে চাইছেন ‘ভটভটি’ ছবির পরিচালক। এই ছবির ভাবনা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আসলে আমি নবারুণ ভট্টাচার্যর ‘লুব্ধক’ নিয়ে ছবি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই বাজেট আমার ছিল না। তাই একটা সময়োপযোগী অ্যাকশন ছবির ভাবনা থেকেই এগিয়ে আসা।’’ ছবিতে নাকি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ছাড়াও প্রচুর পথকুকুরদের দেখা যাবে। কী ভাবে সম্ভব হল? তথাগত বললেন, ‘‘দীর্ঘ দিন আমি যে পোষ্যপ্রেমীদের সঙ্গে কাজ করছি তাঁরা আমার আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। তাঁদের কুকুরদের নিয়েই শুটিং করছি।’’ এর পর আবার শুটিং শুরু হবে। অগত্যা পরিচালককে আর আটকে রাখা গেল না। মনিটরের সামনে থেকে কানে এল, ‘অ্যাকশন’।
প্রতীক চক্রবর্তী এবং অভিনব ঘোষ প্রযোজিত ‘পারিয়া’র শুটিং শেষ হবে আগামী মাসে। ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য, দেবাশিস রায় প্রমুখ। ছবির সিক্যুয়েলের পরিকল্পনাও রয়েছে নির্মাতাদের। ভিএফএক্স-এর কাজ সময়ে শেষ হলে ছবিটি আগামী বছরের শুরুতে মুক্তি পেতে পারে।