Entertainment News

রাজনৈতিক সিস্টেমকে প্রশ্নের মাসুল? আচমকা বন্ধ ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর প্রদর্শন

আচমকা কেন বন্ধ করে দেওয়া হল এই সিনেমা?দক্ষিণ কলকাতার এক সিনেমা হল থেকে জনৈক দর্শক বললেন, ‘‘আমাকে বলা হল, টেকনিক্যাল ইস্যুর জন্য সিনেমাটা দেখানো যাবে না।’’ আবার উত্তর কলকাতার এক হলের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে এক কলেজপড়ুয়া বললেন, ‘‘ভবিষ্যতের ভূত দেখতে এসেছিলাম। কাউন্টারে বলল, সিনেমা চলছে না। ওপর মহলথেকে অর্ডার আছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:৫৬
Share:

সদ্য শুক্রবারেই মুক্তি পেয়েছে অনীক দত্ত পরিচালিত ‘ভবিষ্যতের ভূত’। ঠিক এক দিনের মধ্যে অর্থাৎ শনিবারই এ রাজ্যের প্রায় সমস্ত সিনেমা হল থেকে সরিয়ে নেওয়া হল ছবিটি! এ দিন বিকেলে বিভিন্ন হলে যাঁরা ছবিটি দেখতে গিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশকেই বলা হয়েছে, ‘সিনেমা উঠে গিয়েছে’। আগে থেকে টিকিট কাটা থাকলে তার টাকা ফেরত দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে বিভিন্ন জায়গায়।

Advertisement

যাঁর ছবি তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই পরিচালক অনীক দত্ত কী বলছেন? তাঁর কথায়: ‘‘মুক্তির দিন তিনেক আগে প্রযোজকদের কাছে পুলিশের তরফে ছবিটি দেখতে চাওয়া। কিন্তু প্রযোজকেরা জানিয়ে দেন, ছবিটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র নিয়ে এসেছে। ফলে, ছবিতে এমন কিছু নেই যা থেকে সমস্যা হতে পারে। আমার মনে হয়, ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রযোজকেরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’’

আচমকা কেন বন্ধ করে দেওয়া হল সিনেমাটি? কোনও হল কর্তৃপক্ষই এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। দক্ষিণ কলকাতার একটি হলে এ দিন বিকেলে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ দেখতে গিয়েছিলেন মণিকুন্তলা সেন। তিনি বললেন, ‘‘আমাকে তো বলা হল, টেকনিক্যাল ইস্যুর জন্য সিনেমাটা দেখানো যাবে না।’’ উত্তর কলকাতার একটি হলের দর্শকদেরও একই অভিজ্ঞতা। ওই হলের সামনে দাঁড়িয়ে কলেজ পড়ুয়া দোলন বক্সী বললেন, ‘‘ভবিষ্যতের ভূত দেখতে এসেছিলাম। কাউন্টারে বলল, সিনেমা চলছে না। ওপর মহল থেকে অর্ডার আছে।’’ দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে এ দিন সন্ধ্যায় ছবিটি দেখতে গিয়েছিলেন রায়া দেবনাথ। পৌঁছে দেখেন, টিকিটের লাইনে প্রবল ভিড়। কাছে গিয়ে দেখেন, সকলে আগে থেকে কাটা টিকিটের দাম ফেরত নিচ্ছে। রায়ার কথায়, ‘‘আমাকে টিকিট কাউন্টার থেকে বলা হয়, ছবিটি চলছে না। এর পর আমি দক্ষিণ কলকাতার আরও একটি শপিংমলে যাই। সেখানেও একই কথা বলা হয়। কিন্তু কেন ছবিটি চলছে না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ ‘ভবিষ্যতের ভূত’: শাসকের দিকে আঙুল তুলে মানুষ ভূতে বিলীন হয়েছে

ছবি দেখতে গিয়ে এমন বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে ক্ষুব্ধ দর্শকরা। একই রকম ভাবে ক্ষুব্ধ ওই ছবির কলাকুশলীরাও। দেবলীনা দত্ত ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর কথায়: ‘‘আগে থেকে টিকিট কেটে যাঁরা সিনেমা দেখতে গিয়েছে তাঁদের হল থেকে বলা হয়েছে, ‘ওপর মহলের নির্দেশে সিনেমা চলে গিয়েছে’। কোট আনকোট বললাম। একটা শিল্পকে কেউ বার করে দিতে পারে না। সেন্সর বোর্ড পার করে এসেছে ছবিটা। ‘ওপর মহলের’ সংজ্ঞাটা কী? আমাদের একটু কারণ দেখানো হোক। এটা কি মগের মুলুক নাকি? আমরা চুপ করে বসে থাকব না। কিছু একটা করব।’’

একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ছবির অন্য এক অভিনেত্রী চান্দ্রেয়ী ঘোষ। তিনি বললেন, ‘‘আমি আজ দুপুর পর্যন্ত নিজে চেক করেছি, প্রায় সব জায়গায় হাউসফুল। বিকেলের পর থেকে নামিয়ে দেওয়া হল। বেশির ভাগ জায়গায় বলা হচ্ছে, টেকনিক্যাল ফল্ট। এ দিকে অন্য ছবি চলছে। রিডিকিউলাস...।’’


ছবির একটি দৃশ্য।

এ দিন ছবিটি দেখতে যাওয়া দর্শকদের প্রশ্ন, কী এমন রয়েছে যাতে ‘ওপরমহল’ তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হল? প্রথম দিনই যাঁরা সিনেমাটি দেখেছেন, তাঁদেরই কয়েক জনের ব্যাখ্যা, আসলে পরিচালক তাঁর ছবিতে বুঝিয়েছেন, কিছু মানুষ তাঁদের কাজ, চিন্তাভাবনা বা রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য জীবিত অবস্থাতেই কোণঠাসা হয়ে যায় এই সমাজে। দেখিয়েছেন, শাসক-ক্ষমতা বা সমসাময়িক সিস্টেমের দিকে যে বা যাঁরা আঙুল তুলেছেন তাঁরাই অবশেষে ভূতে বিলীন হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি, মাচা থেকে মঞ্চ, ভিলেনের মাথায় অক্সিজেন কম যাওয়া, চড়াম চড়াম থেকে হোক কলরব— সমসাময়িক অনেক ঘটনাই অনীক রেখেছেন তাঁর চিত্রনাট্যে। পাশাপাশি এই রাজ্যে আগের জমানায় ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। ওই দর্শকদের ব্যাখ্যা, ভূতেদের সাহায্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোটের পরিকল্পনার কথাও রয়েছে ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এ।

আরও পড়ুন, কেউ কেউ বলছেন এ বার আমাকে ভাতে মারা হবে, মারবে, রুটি খাব

গত নভেম্বরেই পরিচালক অনীক দত্তকে নিয়ে একটি বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। তখন কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব চলছে। উৎসবের মঞ্চ থেকেই তিনি নন্দন চত্বর জুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। একটি আলোচনা সভায় অনীক দত্ত কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, ‘‘সিনেমা এখন আর পরিচালক, প্রযোজকদের বিষয় নয়, নন্দন প্রাঙ্গণে যাঁর ছবি ছড়িয়ে আছে, বাস্তবে তিনিই বোধহয় সিনেমার একমাত্র ব্যক্তিত্ব।’’ মন্তব্যের সমর্থনে অনীকের যুক্তি ছিল, ‘‘একটি চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাঙ্গণে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবিসর্বস্ব হোর্ডিং, কাট আউট লাগানো হবে কেন? এটা অর্থহীন এবং মোটেই নান্দনিক নয়।’’

(কোন সিনেমা বক্স অফিস মাত করল, কোন ছবি মুখ থুবড়ে পড়ল - বক্স অফিসের সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement