রাঁচীর মতো কম বাঙালি অধ্যুষিত জায়গায় বাংলা থিয়েটারের জন্য সোমনাথের লড়াই এই কাজে যুক্ত হতে আরও বেশি আগ্রহী করেছে সৌরভকে। ছবি: সংগৃহীত।
পুরোদস্তুর কর্পোরেট জীবন কাটানো কিছু বাঙালি রাঁচী শহরে এত দিন স্কুল, কলেজ, অফিসে থিয়েটার করেন। সেটিই ছিল তাঁদের সাময়িক বিনোদন, শখ। প্রবাসীদের মিলিত হওয়ার পরিসর। কলকাতার ‘ ইচ্ছেমতো’ নাট্যদলের কর্ণধার সৌরভ পালোধী তাঁদের মনে বুনে দিয়েছেন গুরুতর থিয়েটার-ভাবনা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিছক মিলেমিশে সময় কাটানোর জায়গা থেকে নয়, বড় পরিসরে মূলধারার থিয়েটার যেমনটা হয়, তেমন উদ্যোগ নিয়েই এ বার তাঁরা মঞ্চস্থ করবেন মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘নীল রঙের ঘোড়া’ নাটকটি। তত্ত্বাবধানে থাকবেন সৌরভ ও তাঁর দল।
সৌরভ জানান, শুরু হয়ে গিয়েছে মহড়া। তিনি এবং তাঁর লাইট ডিজ়াইনার রাঁচীতে গিয়ে মঞ্চের আলোকসজ্জা করছেন। কলকাতার নানাবিধ ব্যস্ততা সামলে রিহার্সাল করানোর জন্য প্রায়শই রাঁচীতে যেতে হচ্ছে সৌরভকে।
চারপাশের অন্তহীন লোভের দুনিয়াকে আঘাত করতে থাকবে এই নাটক। — নিজস্ব চিত্র।
সৌরভ বললেন, “কর্পোরেট জীবনের বাইরে এসে বারো-চোদ্দো ঘণ্টা ওঁরা রিহার্সাল করছেন। বুঝতে পেরেছেন, এই ভাবেই করতে হয় থিয়েটার। এত সিনসিয়ারলি করছেন, এটা দেখে ভাল লাগছে। রাঁচীর মতো শহরে মূলধারার থিয়েটার হবে, এটাও আনন্দের।”
সৌরভ জানালেন, নাটকের নাম ‘নীল রঙের ঘোড়া’ হলেও এখানে আসলে রেসের মাঠ নেই, ঘোড়াও নেই। নাটকে নীল রং একটা স্বপ্নের ব্যঞ্জনা তৈরি করে, ঘৌড়দৌড় হয়ে ওঠে অন্তহীন লোভের প্রতীক।
কলকাতার নানাবিধ ব্যস্ততা সামলে রিহার্সাল করানোর জন্য প্রায়শই রাঁচীতে যেতে হচ্ছে সৌরভকে। — নিজস্ব চিত্র।
নাটকের মূল চরিত্রটি রেসের মাঠে টাকা লাগায় এবং জেতে। সে মনে করে, কেউ যেন আগের রাত্রে এসে তাকে পরের দিনের ফলাফল জানিয়ে যায়। তাই সে যা বলে, সেটাই ফলে যায়। আসলে সে আন্দাজে মিলিয়ে দিতে পারে। একটা সময় সে নিজে আর খেলতে না চাইলেও পরিবারের চাপে তাকে খেলতে হয় সর্বস্ব বাজি রেখে। চরিত্রটির মধ্যে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। নিঃসঙ্গ মানুষটি নিরন্তর তার অতীত এবং ভবিষ্যতের সঙ্গে কথা বলতে থাকে। এগোয় ঘটনাপ্রবাহ।
বড় পরিসরে মূলধারার থিয়েটারের মতো উদ্যোগ নিয়েই এ বার তাঁরা মঞ্চস্থ করবেন নাটকটি। — নিজস্ব চিত্র।
চার পাশের অন্তহীন লোভের দুনিয়াকে আঘাত করতে থাকবে এই নাটক। সৌরভ বললেন, “এটি একটি অ্যাবসার্ড নাটক। লোভ, স্বপ্ন এবং রাজনীতি— এই তিনটি বিষয়ই নাটকটির মূল ভিত। আপাতদৃষ্টিতে পারিবারিক বলে মনে হলেও এই নাটক আদতে রাজনৈতিক।”
‘কৃষ্টি’ নাট্যদলের সোমনাথ কুণ্ডুর কথা উঠে এল সৌরভের কথায় । তিনি এই নাট্যদলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। উচ্চপদস্থ কর্পোরেট-কর্মী এই মানুষটির অনেকটা দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। অভিনয় করছেন না বটে, তবে নিজের পেশাগত ব্যস্ততার সঙ্গে সমঝোতা করে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। ভবিষ্যতেও মূলধারার থিয়েটার নিয়ে এমন বড় কাজ করার স্বপ্ন দেখছেন।
রাঁচীর মতো কম বাঙালি অধ্যুষিত জায়গায় বাংলা থিয়েটারের জন্য সোমনাথের লড়াই এই কাজে যুক্ত হতে আরও বেশি আগ্রহী করেছে সৌরভকে।
আগামী ২৩ এপ্রিল রাঁচীতেই হবে নাটকটির প্রথম অভিনয়।