শাশ্বত
প্র: অনেক বছর পরে শৈবাল মিত্রের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
উ: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা গল্প নিয়ে আমাদের ছবি ‘তখন কুয়াশা ছিল’। আমার সঙ্গে রয়েছেন সৌমিত্র জেঠু (চট্টোপাধ্যায়) আর বাসবদত্তা (চট্টোপাধ্যায়)। শৈবালদার সঙ্গে আমার প্রথম হিন্দি মেজর কাজ ছিল ‘কালপুরুষ’। ওঁর কাছে তখন আমার নামের প্রস্তাব দিয়েছিলেন রবি জেঠু (ঘোষ)। ওই কাজটা করতে করতেই বুঝেছিলাম, ওঁর মতো পরিচালক পাওয়া যে কোনও অভিনেতার কাছে আশীর্বাদ। কারণ উনি জানেন, কী চাইছেন। অভিনয়ও করে দেখাতে পারেন। আর ঠান্ডা মাথার মানুষ তো!
ইদানীং সকলেই এত অস্থিরমতি যে, এমন পরিচালক পাওয়া ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে খুব ভাল।
প্র: ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ও মুক্তির অপেক্ষায়...
উ: বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এটি একটি ল্যান্ডমার্ক ছবি হতে চলেছে। প্রযোজক হওয়ার পরে দেব কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ছবি করছে। এমন ছবিও করেছে, যেখানে ও নিজে অভিনয় করছে না। প্রয়াগ ফিল্মসিটিতে বিশাল সেটে ঘোড়া-হাতি-রথ নিয়ে এ ভাবে শুট করা, বাংলা ছবিতে শেষ কবে হয়েছে মনে পড়ছে না। প্রচারের জন্যও দেব অনেক কিছু প্ল্যান করেছে।
প্র: দেব বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট তুলে ধরছেন ঠিকই। কিন্তু তাঁর প্রযোজিত ছবি এখনও সে ভাবে বক্স অফিস পায়নি...
উ: সেই চিন্তা থেকেই যায়। আমার মতে, ইন্ডাস্ট্রিকে আরও একটু সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে। সকলের ভালটা সকলকে বুঝতে হবে। হিন্দি ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু সেটা বোঝে। ‘জগ্গা জাসুস’-এর সময়ে একদিন আমি, রণবীর (কপূর) আর অনুরাগ (বসু) বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সিদ্ধার্থ রায় কপূর এসে ওদের সঙ্গে আলোচনা করলেন। বলেই দিলেন, একই বছরে রণবীরের দুটো ছবি আসবে না। আগে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’, পরে ‘জগ্গা...’ আমরা এখানে ভুল লড়াই করছি। এটা লড়াই করার জায়গা নয়।
প্র: অনেকে বলেন, বলিউডে ছবির সংখ্যা বেশি। তাই স্লট ছাড়ার ঝুঁকি তাঁরা নিতে পারেন।
উ: আমি উল্টো কথা বলব। বলিউডে ছবির সংখ্যা বেশি হয়েও ওরা একে অপরকে স্লট ছেড়ে দিচ্ছে। আমাদের ছবির সংখ্যা কম। হলের সংখ্যাও বেশি নয়। তা-ও আমরা জায়গা ছাড়তে পারছি না?
প্র: নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করছেন। তবে টলিউডের প্রথম সারির পরিচালকদের ছবিতে আপনাকে সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না কেন?
উ: কোন পরিচালক আমাকে নেবেন, সেটা তো আমি জোর দিয়ে বলতে পারি না।
প্র: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের শেষ কয়েকটি ছবিতে আপনি নেই...
উ: কৌশিকদা এখন পরপর বুম্বাদাকে (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) নিয়ে ছবি করছেন। যে দিন আমাকে নিয়ে ভাববেন, নিশ্চয়ই করব।
প্র: এর মধ্যে কোনও প্রস্তাবও পাননি?
উ: ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-এ ঋত্বিক চক্রবর্তীর চরিত্রটার প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন ডেট দিতে পারিনি।
প্র: নামী পরিচালকদের ছবিতে কাজ না করলে দর্শকের নজরের আড়াল হওয়ার ভয় পান?
উ: এত বছর কাজ করার পরে আর দর্শকের নজরে থাকতে হবে বলে মনে হয় না। একটু প্রচার কম হলেই ভাল। রোজ একই মুখ দেখাতে দেখাতে পচে যাওয়ার চেয়ে রয়ে-সয়ে দেখানোই শ্রেয়। সত্যি কথা বলতে, যে কোনও চরিত্র আর করতে ইচ্ছে করে না। শিবু (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) আমাকে যে চরিত্র অফার করেনি, তা নয়। তবে চরিত্রটায় করার কিছু ছিল না। তাই নানা কারণে এদের সঙ্গে আর কাজ হয়ে উঠছে না।
প্র: বাংলা ইন্ডাস্ট্রির গত কয়েক মাসের হালহকিকত দেখে কী ভাবছেন?
উ: আমার বেশ ভয়ই করছে। ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু ধুঁকে ধুঁকে চলছে। একটা বড় সাফল্য খুব জরুরি।
প্র: ‘বব বিশ্বাস’-এ আপনাকে কাস্ট না করার পিছনে কি টলিউড ভার্সাস বলিউডের অঙ্ক?
উ: আমার তো যা করার করে দিয়েছি। এক জিনিস বারবার না করাই ভাল। যে ইমেজটা রয়েছে, সেটাই ইতিহাসে থেকে যাবে।
প্র: যে চরিত্রকে আপনি বিখ্যাত করলেন, তার স্পিন-অফে বাঙালি দর্শক আপনাকেই প্রত্যাশা করেছিলেন।
উ: আমি তো গর্বিত। গব্বর সিংকে নিয়ে আলাদা করে ছবি হল না। বব বিশ্বাসকে নিয়ে হল। সুজয় ঘোষের সঙ্গে কথা হয়েছিল। স্ক্রিপ্টও শুনেছিলাম।
প্র: তার পর?
উ: তার পর কী হল, আমার জানা নেই (ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি)।
প্র: সাম্প্রতিক বাংলা সিরিয়াল নিয়েও আপনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উ: আমার শাশুড়ি মা, যিনি সিরিয়ালের পোকা, তিনি পর্যন্ত সিরিয়াল দেখে বলেন, ‘‘এই মেয়েগুলো কোন বাড়িতে থাকে?’’ মহিলা হয়ে তিনি এমন মন্তব্য করছেন, সেটা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। চারদিকে এত নারী ক্ষমতায়নের কথা! অথচ সিরিয়ালে এমন ভাবে নারী চরিত্র দেখানো হচ্ছে... আর দেখাচ্ছেন কারা? মহিলারাই। তাই বদল আসাটা খুব দরকার।