বলিউডের ‘মাস্টারজি’ সরোজ খানের মৃত্যুতে আর সকলের মতো কোরিয়োগ্রাফার-ডিরেক্টর ফারহা খানও শোকপ্রকাশ করেছেন। সরোজকে নিজের অনুপ্রেরণা বলেও আখ্যা দিয়েছেন। তবে বলি-পাড়ায় কান পাতলে এখনও শোনা যায় সরোজ-ফারহার প্রতিদ্বন্দ্বিতার গুঞ্জন। ঠিক কবে থেকে এর সূত্রপাত? কেনই বা তাঁদের মধ্যে এই রেষারেষি?
ঘটনার সূত্রপাত মনসুর খানের ফিল্ম ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’-এর সেট থেকে। ১৯৯২-তে মনসুরের ওই ফিল্মে হিরো ছিলেন আমির খান। আমিরের বিপরীতে ওই ফিল্মে আয়েশা জুলকাকে দেখা গেলেও প্রথম দিকে তাতে গীতাঞ্জলি নামে এক অন্য নায়িকাকে নেওয়া হয়েছিল। কোরিয়োগ্রাফার হিসাবে চুক্তি হয়েছিল সরোজ খানের সঙ্গে। ফারহা খান ছিলেন মনসুরের সহকারী পরিচালক।
‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ রিলিজের পর দেখা যায়, আমির খান তাতে নায়ক থাকলেও নায়িকার পাশাপাশি বদলে গিয়েছে কোরিয়োগ্রাফারও। সরোজ খানের বদলে ফারহাকে দেখা গিয়েছিল ফিল্মের কোরিয়োগ্রাফার হিসাবে। ওই ঘটনার জেরে তাঁদের সম্পর্কেও প্রভাব পড়েছিল।
নিজেদের মধ্যে রেষারেষির কথা ফারহা বার বার অস্বীকার করলেও সরোজ শুনিয়েছেন অন্য কাহিনি। তিনি জানিয়েছেন, ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’-এর জন্য ফিল্ম ইউনিটের সঙ্গে ১৭ দিনের জন্য কোডাইকানাল যেতে হয়েছিল তাঁকে। ওই ক’দিনে তিনটি গানের শুটিং করার কথা ছিল।
সরোজের দাবি, ১৭ দিনে তিনটির বদলে ‘জো জিতা… ’-এর মাত্র একটি গানেরই শুটিং সেরে উঠতে পেরেছিলেন মনসুর খান। এর মধ্যে সরোজের নিজের ডেটও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ওই ফিল্ম ছেড়ে তাঁকে সে সময় শিমলায় যেতে হত। জ্যাকি শ্রফের ফিল্ম ‘কিং আঙ্কল’-এর শুটের জন্য। অথচ ফিল্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ গান ‘পহেলা নশা’-র শুটিং তখনও হয়নি।
নিজের ডেট শেষ হওয়ার বিষয়টি সরোজ জানিয়েছিলেন মনসুরকে। জানান, বাকি গানের শুটিং না হলেও তাঁকে ফিল্ম ছেড়ে যেতে হবে। সে সময় মনসুর নাকি সরোজকে বলেন, ‘পহেলা নশা’-র কোরিয়োগ্রাফ করা স্টেপগুলো তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্টদের দিয়ে যেন আমির খানকে শিখিয়ে দেওয়া হয়। যাতে আমির তা রিহার্সাল করতে পারেন। সরোজকে নাকি শিমলা যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছিলেন মনসুর।
মনসুরের কথায় রাজি হয়ে যান সরোজ। ‘পহেলা নশা’-র স্টেপগুলি দেখিয়ে দিয়ে নিজের দুই অ্যাসিস্ট্যান্টের উপর দায়িত্ব দিয়ে তিনি চলে যান শিমলা। এর পর বদলে যায় ওই ফিল্মের বাইরের চিত্রনাট্য। শিমলা থেকে ফিরে সরোজ জানতে পারেন, ওই ফিল্মের কাজ বন্ধ।
মাস কয়েক পর অবশ্য ফের শুরু হয় ‘জো জিতা… ’-এর শুটিং। এ বার গীতাঞ্জলির বদলে আমির খানের নায়িকা হিসাবে দেখা যায় আয়েষা জুলকাকে। কিন্তু সে সময় নাকি সরোজের কাছে ডেট ছিল না। ফলে মনসুরকে অন্য কোনও কোরিয়োগ্রাফারের সাহায্য নিতে বলেন তিনি। তখন মনসুর নাকি ফারহার সাহায্য নেন। এর পর ডেট-সমস্যার জন্যই নাকি ওই ফিল্মে আর কাজ করতে পারেননি সরোজ।
সরোজের বরাবরই দাবি ছিল, তাঁর কাছে ডেট না থাকায় ওই ফিল্মে কাজ করা হয়নি। সেই সঙ্গে সরোজের আরও দাবি, ফারহা এবং তাঁর ভাই সাজিদ খান নাকি বরাবরই রটিয়ে বেড়িয়েছেন, ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ থেকে তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল।
সরোজের অভিযোগ, ‘জো জিতা… ’-এ পুরো কোরিয়োগ্রাফি তিনি করলেও ফারহা শুধুমাত্র তা প্র্যাকটিস করিয়েছেন। এবং কোরিয়োগ্রাফার হিসাবে বাহবা কুড়িয়েছেন ফারহা। যদিও সে অভিযোগ কখনই স্বীকার করেননি ফারহা খান।
সরোজের এই কাহিনি নিয়ে ফারহার পাল্টা দাবি, ‘জো জিতা… ’-এ শুটিংয়ের সময় আচমকাই নাকি কোডাইকানাল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সরোজ খান। তিনি কখন ফিরবেন, তা জানা ছিল না কারও। ফলে মনসুর খান তাঁকে ফিল্মের কোরিয়োগ্রাফারের দায়িত্ব দেন।
‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ রিলিজের পর তা সুপারহিট হয়। কোরিয়োগ্রাফার হিসাবে বলিউডে নিজস্ব ছাপ তৈরি করেন ফারহা খান। এক সময় তো বলিউডে সরোজ খানের প্রতিদ্বন্দীও হয়ে ওঠেন তিনি।
‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ পর্বের পরও সরোজ-ফারহার সম্পর্ক থিতু হয়নি। উল্টে তাঁদের মধ্যে তিক্তটা আরও বেড়েছে। ফের সে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে ফারহার ফিল্ম ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এর সঙ্গে। অনেকেই বলেন, ওই ফিল্মের একটি চরিত্রের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে সরোজ খানের।
‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এ কিকু সারদার চরিত্রটি সরোজ খানকে নিয়ে বরাবরই ব্যঙ্গ করে গিয়েছে। এমনটাই নাকি অভিযোগ সরোজের। তবে সে বারও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ফারহা।
‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এর প্রোমোশনে কপিল শর্মার শোতে গিয়েও সরোজ খানের উপর নানা ব্যঙ্গ চলতেই থাকে ফারহা খানের টিমের। ওই শোতে কিকু শর্মার অ্যাক্ট নিয়েও সরব হন সরোজ খান।
এক বার তো সরোজ খান বলেই ফেলেছিলেন, তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ফারহার। এমনকি, তিনি এ-ও বলেন, ফারহার লজ্জা হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন ছিল, নিজের ফিল্মে তাঁকে নিয়ে কেন ব্যঙ্গ করলেন ফারহা? সরোজের সব অভিযোগ উড়িয়ে ফারহার বক্তব্য ছিল, সরোজ খানকে সকলে অত্যন্ত ভালবাসেন।