বর-কনের সঙ্গে সন্দীপ্তা।
ত্বরিতা আর সৌরভের বিয়ে! মানে আমার বন্ধুদের বিয়ে! সেটা একদম পিকচার পারফেক্ট না হলে চলে?
বিয়ের অনেক আগে থেকেই তাই প্ল্যানিং শুরু করে দিয়েছিলাম আমরা। যেমন-তেমন ভাবে নয়। রীতিমতো খাতা-কলম, পেন-পেনসিল নিয়ে ক্যাফেতে বসে গম্ভীর আলোচনা চলেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কী গান হবে, কেমন নাচ হবে, কে কোন গানে পারফর্ম করবে, সব কিছু ঠিকঠাক করেছি।
সঙ্গীতের জন্য আমি ত্বরিতাকে নাচ কোরিওগ্রাফ করে পাঠিয়েছিলাম
বন্ধুর বিয়েতে নাচানাচি না হলে কি ভাল লাগে? ওদের সঙ্গীতে সেই শখ মিটিয়েছি আমরা। কনেকে নাচ শেখানোর দায়িত্ব আমি নিয়েছিলাম। নিজে পুরো নাচটা কম্পোজ করে ত্বরিতাকে পাঠিয়ে রেখেছিলাম। ওটা দেখে ও পুরো নাচটা তুলেছে। তারপর একদিন একসঙ্গে প্র্যাকটিস করেছি। অমিত ত্রিবেদীর একটা ম্যাশ আপ বেছে ছিলাম আমরা। এ ছাড়া অন্যান্য বন্ধুরাও নেচেছে। গান এডিটের দায়িত্ব ছিল সৌরভের। বরকে দিয়ে কাজ করাতেও ছাড়িনি!
তবে সব থেকে মজা হয়েছে ত্বরিতা-সৌরভের পারফরমেন্সে। আমরা তো এখানে সবাই শাহরুখ খানের ফ্যান। বর-কনেও তাই ‘সুরজ হুয়া মধ্যম’ গানে নেচেছে। পুরো ব্যাপারটা জাস্ট দারুণ রোম্যান্টিক ছিল! এক্কেবারে সিনেমার মতো।
গায়ে হলুদ ত্বরিতার, ফোটো সেশন আমাদের
ত্বরিতার গায়ে হলুদে সকাল থেকে ওর সঙ্গেই ছিলাম আমি। ‘ব্রাইডসমেট’ বলে কথা! আমাকে ও আগে থেকেই বলে রেখেছিল হলুদ রঙের শাড়ি পরে যেতে। ম্যাডামের কথা মতোই হলুদ শাড়ি পরে হাজির হয়েছিলাম। সেখানকার বাকি মহিলারাও ওই রঙের শাড়ি পরেছিলেন।
বন্ধুর আবদারে হলুদ শাড়িতে সন্দীপ্তা।
গায়ে হলুদ হতেই আমাদের ফোটো সেশন শুরু। আর আমি তো ছবির ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে। কতবার কত রকম ভাবে যে ছবি তুলেছি! একবার শাড়ির আঁচল উড়িয়ে, আরেকবার অন্য রকম অ্যাঙ্গেলে। ফোটোগ্রাফারের কাছে আবদারের শেষ ছিল না!
ওদের বিয়ের সব ছবি আমরা #ত্বরাভওয়েডিং দিয়ে পোস্ট করেছি। দু'জনের নাম মিলিয়ে এই হ্যাশট্যাগ বানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণী ছবির অফারের সঙ্গে এসেছিল ‘কাস্টিং কাউচ’-এর প্রস্তাব, কী করলেন বিবৃতি?
বিয়েতে আমি ত্বরিতার নিত কনে হয়ে ঘুরে বেরিয়েছি
সৌরভ বিয়ে করতে এসেছিল বিএমডব্লিউ নিয়ে। এক্কেবারে রাজকীয় মেজাজে! ত্বরিতাকে মণ্ডপ অবধি আনা হয়েছিল পিঁড়িতে বসিয়ে। এরপর শুরু হল খেলা! বর বড় না বউ বড়। সৌরভ তো এমনিতেই লম্বা। ওকে যত ওর বন্ধুরা কোলে উঠিয়ে উপরে তুলছে, আমরাও ত্বরিতার পিঁড়ি আরও উপরে তুলে দিচ্ছি। শেষমেশ কনে পক্ষের কাছে হারতে হল বর যাত্রীকে।
ওদের বিয়ের মণ্ডপটা পুরো সাদা কাপড়, এলইডি লাইট আর লাল ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। ভীষণ রোম্যান্টিক লাগছিল দেখতে। আমি সারাক্ষণ ত্বরিতার সঙ্গে থেকেছি। নিজেরই নিজেকে নিত কনে মনে হচ্ছিল। এতে আমার দুটো লাভ হয়েছে। এত ঠাণ্ডায় আগুনের কাছে থাকতে পেরেছি আর ত্বরিতার কাছে থাকাও হয়ে গেল!
সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে ত্বরিতা এবং সন্দীপ্তা।
ওদের বিয়েতে এতদিন পর আবার একসঙ্গে এত চেনা মানুষকে একসঙ্গে দেখে খুব আনন্দ হয়েছে। গৌরব-দেবলীনা এসেছিল। কালো শাড়িতে কী চমৎকার দেখাচ্ছিল দেবলীনাকে। আর ধুতি-পাঞ্জাবি-চাদরে গৌরব তো এক্কেবারে ‘মথুর বাবু’। ওকে দেখেই আমি এই কথাটাই বলেছিলাম! ‘রাণী রাসমণি’র প্রায় গোটা টিম সেখানে ছিল। স্বয়ং গদাধর এসেছিলেন শাশুড়ি মাকে আশীর্বাদ করতে! ছোট্ট সারদাও এসেছিল মায়ের বিয়ে দেখতে। কী ভীষণ মিষ্টি মেয়েটা!
গুজরাতের পর এত ভাল জিলিপি ত্বরিতার বিয়েতেই খেলাম!
আমার সাজগোজ করতে খুব একটা সময় লাগে না। কিন্তু খাওয়া দাওয়াটা সব সময় মন দিয়ে করি। একেই আমি ভীষণ ফুডি, তার উপর আমার সব ফেভারিট ডিশ ছিল ওর বিয়েতে। কত রকমের স্যালাড, কড়াইশুঁটির কচুরি, মটন কিমা, হলুদ পোলাও, মটন মশলা, কী ছিল না লিস্টে! কিন্তু সব থেকে বেশি ভাল লেগেছে গরম গরম জিলিপি। গুজরাতের পর এত ভাল জিলিপি আমি ত্বরিতার বিয়েতে খেলাম। এ ছাড়াও বেকড মিহিদানা, নলেন গুঁড়ের কুলফিও ছিল।
আরও পড়ুন: শ্রাবন্তী নয়, অন্য এক ‘মনের বন্ধু’ খুঁজে পেলেন রোশন
সব মিলিয়ে আনন্দ-নাচগান-খাওয়া দাওয়া নিয়ে জমিয়ে কেটেছে বন্ধুর বিয়ে। ত্বরিতা এবং সৌরভ একা হাতে খুব ভাল ভাবে সবটা সামলেছে। আপাতত আমাদের মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে। আজ সন্ধেবেলায় গিয়ে দেখব সেখানে সে কেমন রয়েছে। একটু খোঁজ-খবর নিতে হবে তো! তারপর পরশু বৌ-ভাত। কনেযাত্রী হয়ে মজা করার পালা।