অভিজাত পরিবারের মেয়ে। আভিজাত্যের স্পর্শ ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বে। বাচনভঙ্গির পাশাপাশি দর্শকরা মুগ্ধ ছিলেন তাঁর সাজের রুচিতেও। দূরদর্শনের প্রথম দিকের যে কয়েক জন সংবাদ পাঠক ও পাঠিকা দর্শকমনে এখনও উজ্জ্বল, সালমা সুলতান তাঁদের মধ্য়ে অন্য়তম।
সালমার জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৬ মার্চ। তাঁর বাবা মহম্মদ আসগর আনসারি ছিলেন ভারত সরকারের কৃষি মন্ত্রকের সচিব। আফগানিস্তানের বিখ্য়াত দুরানি সাম্রাজ্যের শাসক শাহ সুজা ছিলেন তাঁদের পূর্বপুরুষ। সালমার দিদি মৈমুনা পরবর্তী কালে ভোপাল থেকে দীর্ঘদিন কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন।
মধ্যপ্রদেশের সুলতানপুরের স্কুলের পরে সালমা ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হন দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ কলেজ ফর উইমেন থেকে। দূরদর্শনে অডিশন দিয়ে তিনি সংবাদপাঠিকা হিসেবে মনোনীত হন ২৩ বছর বয়সে।
সালমার আগে দূরদর্শনের প্রধান সাংবাদপাঠিকা ছিলেন প্রতিমা পুরী। প্রতিমার জায়গায় সালমা দূরদর্শনে যোগ দেন ষাটের দশকের মাঝামাঝি। সংবাদপাঠিকাদের মধ্যে স্টাইল স্টেটমেন্ট শুরু করার বিষয়ে পথ দেখিয়েছিলেন সালমা।
সালমা খবর পড়তেন খোলা চুলে। তাঁর বাঁ কানের পিছনে চুলের সঙ্গে লাগানো থাকত একটি গোলাপ। একরঙা শাড়ি পরতেন সনাতনী ও আভিজাত্যপূর্ণ ধরনে। তাঁর এই শাড়ি পরার ধরন তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল পরবর্তী সংবাদপাঠিকাদের মধ্য়ে।
শুধু নিজের কাজের জায়গাতেই নন। সালমা তাঁর সমসাময়িক প্রজন্মের কাছে স্টাইল আইকন হয়ে উঠেছিলেন। মহিলা দর্শকরাও সালমাকে অনুসরণ করে কানের পিছনে ফুল দিতেন।
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গাঁধী নিহত হওয়ার সংবাদ পড়েছিলেন সালমা সুলতান-ই। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তিনি ছিলেন দূরদর্শনের প্রধান মুখ। সংবাদপাঠের কাজ থেকে সরে যাওয়ার পরেও যুক্ত ছিলেন দূরদর্শনের সঙ্গে।
প্রযোজনা সংস্থা শুরু করে সালমা দূরদর্শনে বেশ কিছু ধারাবাহিক পরিচালনা করেন। তাঁর পরিচালনায় ‘পঞ্চতন্ত্র সে’, ‘সুনো কহানি’, ‘স্বর মেরে তুমহারে’ জনপ্রিয় হয়েছিল।
মেয়েদের সমস্যা নিয়ে ২০০৪ সালে সালমা পেশ করেছিলেন ‘জ্বলতে সওয়াল’। রবিবার সকালে সম্প্রচারিত হওয়া এই অনুষ্ঠানও ছিল দর্শকদের পছন্দের প্রথম সারিতে।
সালমার স্বামী আমির কিদোয়াই ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডের উচ্চপদস্থ আধিকারিক। সালমা ও আমিরের দুই সন্তানের মধ্য়ে ছেলে সাদ পেশায় ইনকাম ট্য়াক্স কমিশনার। মেয়ে সানা একজন কোরিয়োগ্রাফার।
অতীতের ব্যস্ততা থেকে বহুদূরে পরিবার ও পরিজনদের সঙ্গেই সময় কাটে এক সময়ের জনপ্রিয় সংবাদপাঠিকা সালমা সুলতানের।