তীব্র ইচ্ছাশক্তি ছিলই। তার উপর ভর করেই পুণে পাড়ি দিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। উদ্দেশ্য অভিনয় শেখা।
পুণের এফটিটিআই থেকে অভিনয়ে ডিগ্রি নিয়েই চলে আসেন মুম্বইয়ে। মিঠুন জানতেন, বলি ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ পাওয়া সহজ বিষয় নয়।
তার উপর তাঁর কোনও পরিচিতি ছিল না। অন্য অনেকের মতো কোনও গডফাদারও ছিল না। তাই তাঁকে যে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, খুব ভাল করেই জানতেন।
নিজেকে সে ভাবেই তৈরি করেছিলেন মিঠুন। এমনই এক সময়ে যেন ঈশ্বরের মতো তাঁর সামনে এসে দাঁড়ান সেলিম খান।
সেলিম খানের সঙ্গে মিঠুনের দেখা হওয়াটা নেহাতই ভাগ্যক্রমে হয়েছিল। ওই একটা সাক্ষাত মিঠুনের জীবন অনেকটাই বদলে দিয়েছিল। তাঁকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল।
মিঠুন তখন সবেমাত্র পুণের এফটিটিআই থেকে অভিনয় শিখে মুম্বইয়ে এসেছেন। ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল না। কী ভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করা যায়, সে খোঁজ খবরই নিচ্ছিলেন।
মিঠুন মাঝে মধ্যেই জামা কাপড় বানানোর জন্য মুম্বইয়ের একটি দর্জির দোকানে যেতেন। দোকানের নাম ছিস ‘প্লে বয়’।
এক দিন সেই দোকানে ঢুকেই থমকে যান মিঠুন। সেই দোকানেই দাঁড়িয়েছিলেন সেলিম খান। সে সময় বলিউডের নামকরা স্ক্রিপ্ট রাইটার।
সেলিম খানের সঙ্গে এই প্রথম মুখোমুখি হলেও, তাঁকে খুব ভাল করেই চিনতেন মিঠুন। কিন্তু যেচে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করতে যাননি।
বরং দূরে দাঁড়িয়ে থেকেই দেখছিলেন মিঠুন। সেলিম খানই প্রথমে মিঠুনকে নিজের কাছে ডাকেন।
মিঠুন কাছে গেলে তিনি তাঁকে ফিল্মে অভিনয়ের চেষ্টা করতে বলেন। সেলিম খান সে দিন মিঠুনকে বলেছিলেন যে, তাঁর চোখে মুখে একটা খিদে রয়েছে। তাঁর জন্য ফিল্ম কেরিয়ারটাই উপযুক্ত।
তার পর কাগজে একটি ঠিকানা লিখে মিঠুনের হাতে দেন ও ওই ঠিকানায় যোগাযোগ করতে বলেন। ওই কাগজে পরিচালক যশ চোপড়ার ঠিকানা লেখা ছিল।
এত বড় মাপের এক জন মানুষের থেকে নিজের প্রশংসা শুনে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন মিঠুন। তিনিও যে অভিনয়ের উদ্দেশ্যেই মুম্বইয়ে এসেছেন, সেটাও জানান সেলিম খানকে।
পর দিনই ওই ঠিকানায় হাজির হয়েছিলেন মিঠুন। তবে সেই মুহূর্তেই যে যশ চোপড়া তাঁকে ফিল্মের অফার দিয়েছিলেন, এমনটা নয়। সে দিন শুধু পরিচয়টুকুই করেছিলেন তিনি।
সেটা ছিল ১৯৭৬ সাল। ওই বছরই মৃণাল সেনের ফিল্ম ‘মৃগয়া’-য় ডেবিউ করেন তিনি। আর প্রথম ফিল্মেই সেরা অভিনেতা হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পান।
এটা ঠিক যে, সেলিম খানের দেওয়া ঠিকানা তাঁর কোনও কাজে লাগেনি। কিন্তু ফিল্মে নামার আগেই এমন এক জন মানুষের থেকে যে প্রশংসা মিঠুন পেযেছিলেন, সেটাই ছিল তাঁর কাছে সম্পদের মতো।
যে পরিমাণ মনোবল মিঠুনের বেড়ে গিয়েছিল, তার উপর ভর করেই পরবর্তীকালে বলি এবং টলি ইন্ডাস্ট্রিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। সেলিম খানের সেই উপকার কোনও দিন ভোলেননি মিঠুন।