হার না মানা এক শিল্পীর গল্প

সৃষ্টির জন্য শিল্পীর মানসচক্ষুই শেষ কথা। তাই প্রায় দৃষ্টিহীন শিল্পী শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তোয়াক্কা না করে অবলীলায় দিয়ে যায় জীবনের সেরা কাজ। সেই গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘চিত্রকর’।

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:০৭
Share:

‘চিত্রকর’ ছবির একটি দৃশ্য

বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কোনও দিনই ছবি বানান না পরিচালক শৈবাল মিত্র। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে তাঁর পরিচালনায় তৈরি ‘চিত্রকর’।

Advertisement

সৃষ্টির জন্য শিল্পীর মানসচক্ষুই শেষ কথা। তাই প্রায় দৃষ্টিহীন শিল্পী শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তোয়াক্কা না করে অবলীলায় দিয়ে যায় জীবনের সেরা কাজ। সেই গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘চিত্রকর’। প্রায় অন্ধ এক বিখ্যাত চিত্রকর বিজন বসুর কাছে বিপুল অর্থের বিনিময়ে একটি ম্যুরাল তৈরির প্রস্তাব আসে। পেন্টিং শেষ হলেও মতবিরোধ হওয়ায় টাকা ফেরত দিয়ে ম্যুরাল ফিরিয়ে নেয় বিজন। তাকে পেন্টিং তৈরিতে সাহায্য করে তিথি। ছবিতে বিজন ও তিথির চরিত্রে যথাক্রমে দেখা যাবে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়কে।

বিজন চরিত্রটির অনুপ্রেরণা কিন্তু শুধু মাত্র শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় নন। শৈবাল বললেন, ‘‘জন লোগানের লেখা ‘রেড’ নাটক থেকে এসেছিল প্রাথমিক অনুপ্রেরণা। জন্মসূত্রে রুশ ইহুদি, মার্কিন শিল্পী মার্ক রথকোর জীবনের অন্যতম পর্যায় ‘সিগ্রাম ম্যুরাল এপিসোড’ ভীষণ ভাবে নজর কেড়েছিল। তা নিয়ে আমার ছবি তৈরি করার ইচ্ছেও ছিল। কিন্তু সেটা আমাদের কনটেক্সটে কী ভাবে বসাব, তা ভাবতে ভাবতেই মাথায় এসেছিল বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের ‘কত্তামশাই’ লেখাটা।’’ তার পর আর কী? শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্র শৈবাল দেখেছিলেন, রথকো আর বিনোদবিহারী প্রায় সমসাময়িক। তাই দুই জীবন মিলিয়ে শৈবাল তৈরি করেছেন ‘চিত্রকর’। ছবিটিতে তাই বিনোদবিহারীর ছায়া, রথকোর জীবন এব‌ং ‘রেড’ নাটকের একটি অংশও রয়েছে।

Advertisement

একটি ছবি তৈরির ভাবনা আর তাকে ফুটিয়ে তোলা দুটো আলাদা ভাষা। ‘চিত্রকর’ করাটা কতটা কঠিন ছিল? ‘‘বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। আসলে ম্যুরালগুলো এখন প্রায় ধ্বংসের পথে। শ্যুটিংয়ের পর সেগুলোকে ডিজিট্যালি রেস্টোর করতে হয়েছে। এ ছাড়া ছবিতে বিনোদদার পেন্টিংগুলোর মধ্য দিয়ে সফর দেখানো হয়েছে। যেখানে মাঝেমধ্যেই পেন্টিংয়ের মধ্য দিয়ে চরিত্ররা ঢুকছে, বেরিয়ে আসছে। সেই কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কাজগুলো কলকাতায় বসে করাটাও চ্যালেঞ্জ ছিল,’’ বলছেন শৈবাল। আর কতটা কঠিন ছিল বিজন চরিত্রটা? ধৃতিমান বলেন, ‘‘বিজন চরিত্রটার ভিত্তি বিনোদবিহারী ঠিকই। তবে চরিত্রটা কাল্পনিক। বায়োপিক নয়। তাই বিনোদবিহারীকে অনুসরণ করা হলেও অনুকরণ করতে হয়নি।’’ ‘শজারুর কাঁটা’র পরে ফের শৈবালের ছবিতে ধৃতিমান। এই চরিত্রের জন্য ধৃতিমানই কেন? ‘‘ধৃতিমানদার সঙ্গে শ্রদ্ধা-ভালবাসা মিলিয়ে একটা আলাদা সম্পর্ক। আমি বিনোদদার চেহারা যে হুবহু নকল করতে চেয়েছি, তা নয়। তবে ধৃতিমানদার চেহারাটা কাছাকাছি মনে হয়েছিল। এ ছাড়া অসাধারণ অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার লোভ তো রয়েছেই,’’ উত্তর পরিচালকের।

ছবিতে একই সঙ্গে উঠে এসেছে মডার্ন ও পোস্ট মডার্ন শিল্পের নানা আঙ্গিক। যেমনটা হয়েছে দুই মুখ্য চরিত্র বিজন আর তিথির ভাবনার আদান-প্রদানে। এ ছাড়াও পণ্য ও শিল্পের যে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হচ্ছে, উঠে এসেছে সে বার্তাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement