গত বছরের শেষ দিকে ‘কথা’ ধারাবাহিকে জুটি বাঁধেন সাহেব ভট্টাচার্য-সুস্মিতা দে। শুরুতে অপরিচিতই ছিলেন তাঁরা। তবে সিরিয়াল যত এগিয়েছে, গাঢ় হয়েছে তাঁদের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের ছাপ স্পষ্ট টিভির পর্দায়। ইতিমধ্যেই কথা ও এভি-র জুটি মন কেড়েছে দর্শকদের। গুঞ্জন, পর্দার রসায়নের আঁচ পড়েছে ব্যক্তিগত জীবনেও। তাঁদের নিয়ে বিস্তর আলোচনা। এর মাঝেই আনন্দবাজার অনলাইনের ক্যামেরাবন্দি হলেন সাহেব-সুস্মিতা। সারা দিনের শুট। তবে খুব ঝক্কি পোহাতে দিতে চাননি নায়িকাকে। সেই কারণে অভিনেতার বাড়িতেই নায়িকার সাজসজ্জার জন্য ছেড়ে দেওয়া হল ঘর। প্রথমে গল্ফগ্রিনে, তার পর শহরের এক ক্যাফেতে সাহেব-সুস্মিতার টুকরো কোলাজ।
ভোরবেলা শুট। সকাল সাড়ে আটটায় কল টাইম। এক মুহূর্তে বিলম্ব করেননি সুস্মিতা। ঠিক সময়ে গাড়িতে উঠে পৌঁছে যান অভিনেতার বাড়িতে। তখনও ঘুমোচ্ছেন সাহেব। সুস্মিতা পৌঁছতেই চোখ খুলল তাঁর। শুরু হল সাজসজ্জার পর্ব।
সাহেবের বোন সোনম ভট্টাচার্যের ঘরেই শুরু হল রূপটান পর্ব। প্রথম শুটে সুস্মিতা। পরনে লং ড্রেস। খোলা চুল, সঙ্গে ন্যুড মেকআপ। তৈরি হতে খুব বেশি সময় লাগেনি যদিও। তবে আগেভাগেই সাহেব জানিয়ে দেন, নায়িকা নাকি কথায় কথায় পড়ে যান। খানিক স্নেহের সুরে বলেন, “বড্ড ছোট, দেখেশুনে রাখতে হয়।”
প্রথম পোশাকে একেবারে তৈরি সুস্মিতা। পায়ে স্টিলোটোস গলিয়ে ঘর থেকে বাইরে বেরোবেন। ব্যস, অমনি হোঁচট! যদিও সাহেব ছিলেন অন্য ঘরে। নিজেকে সামলে নিয়েই সুস্মিতার অনুরোধ, কথাটা যেন সাহেবের কানে না যায়।
যত ক্ষণে সাহেব-সুস্মিতা শট দিতে নামলেন, তত ক্ষণে সাহেবের মা অবশ্য প্রাতরাশ সাজিয়ে হাজির। কচুরি, আলুর তরকারি সঙ্গে জিলিপি। প্রথম শটটা দিয়ে ফিরতেই নায়িকার পাতে সাজিয়ে দিলেন খাবার। ধীরেসুস্থে ‘ব্রেকফাস্ট’ সারলেন তিনি। তবে নায়িকা বলে কথা, তিনি তেলেভাজা কচুরি আর রসের জিলিপিতে কামড় দিচ্ছেন! সুস্মিতা জানান, ও সব ডায়েট মানেন না, বরং আত্মার তৃপ্তিটাই বড় তাঁর কাছে।
এর পর রংমিলান্তি পোশাকে একসঙ্গে নামলেন তাঁরা। গল্ফগ্রিনের খ্যাতনামী ওই সাদা বাড়ির সামনের রাস্তায়। তত ক্ষণে প্রতিবেশীরা যাতায়াত করছেন। নীচে নামতেই সাহেবকে দেখে প্রশংসা প্রতিবেশী কাকুদের। সুস্মিতা কচুরি-জিলিপি খেলেও সাহেব মুখে তোলেননি সে সব। সকালে উঠে কফি। তার পর এনার্জি ড্রিঙ্কে চুমক দিতে দিতেই শুট করলেন।
রাস্তা দিয়ে কখনও মোটরবাইক যাচ্ছে, কখনও আবার ফ্রেমের সামনে লোক। শেষমেশ হলুদ ট্যাক্সির সামনেই যেন ধরা পড়ল তাঁদের রসায়ন। সেখানেই ফাঁস হল সুস্মিতার পড়ে যাওয়ার ঘটনা। হেসে উঠে সাহেব বললেন, “ও পড়েছে মানে আমাদের শুট হিট।”
এর পর কনের লাল শাড়ির সাজে সুস্মিতা। সাহেবের পরনে লাল-সাদা পঞ্জাবি। একেবারে বিয়ের সাজে দু’জনে। সাহেবকে বরবেশে দেখে অভিনেতার মা যেন মনের কথা চেপে রাখতে পারলেন না। ছেলেকে বাস্তব জীবনেও এমন সাজে দেখার সাধ, কথাটা মুখ ফুটে বলতেই চুপ করিয়ে দিলেন অভিনেতা।
তবে সাজসজ্জার ফাঁকে ফাঁকে সুস্মিতার কখনও প্রশংসা করেছেন সাহেব, কখনও আবার তাঁকে নিয়ে মজা করেছেন। সুস্মিতা এমনিতেই শান্ত স্বভাবের। সাহেব জানান, শুধু শান্ত নন, দারুণ পরিশ্রমীও তিনি। শুটিংয়ে সবার প্রথমে আসেন, সবার শেষে বাড়ি ফেরেন। এ যুগের মেয়ে, তবে পার্টি ইত্যাদি নাকি একেবারেই পছন্দ নয় তাঁর। সাহেবের অবশ্য এ সব ক্ষেত্রে একেবারে বিপরীত মেরুতে বাস।
পরবর্তী লোকশন শহরের এক ক্যাফে। শুরুতেই মুষলধারে বৃষ্টি। ক্যাফের দাবার ছক কাটা বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতেই হারিয়ে গেলেন সুস্মিতা। জেন জ়ি যুগের মানুষ। অথচ সারা দিন ফোনের থেকে দূরে বসেই নাকি দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারেন।
শেষের শুটে সাদা শাড়িতে সুস্মিতা, খোঁপায় জুঁইয়ের মালা, লাল পাঞ্জাবিতে সাহেব। নায়ক অবশ্য একটু খুঁতখুঁতে শট নিয়ে, মাঝেমধ্যে প্রয়োজনে বকাঝকাও দেন অভিনেত্রীকে। তাতে খানিক অভিমানও ধরা পড়ে নায়িকার চোখেমুখে। যদিও কথায় প্রকাশ নেই সে সবের।
শুট শেষে খানিক জিরিয়ে নেওয়া। দু’জনেরই পছন্দ বেক্ড ফিশ। অর্ডার দেওয়া হল। সঙ্গে সাহেবের পছন্দ ক্রসোঁ। সুস্মিতাকে খানিক বোঝালেন, বেক্ড ফিস-এর সঙ্গে ক্রসোঁর যুগলবন্দি কতটা জমে। শেষে একই গাড়িতে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন দু’জনে।