সাহানা।
ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়ো। নতুন ধারাবাহিকের পোশাক নিয়ে আলোচনা করছেন তিনি। পলকা ডটস্। ববি প্রিন্ট...। তার মাঝেই স্টুডিয়োর বাইরে চেয়ার পেতে আড্ডা শুরু হল।
যদি বলি আপনি এমন একটা মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত আছেন যা জনপ্রিয় কিন্তু সমাজের ক্ষতি করছে!
মানে? আর একটু বলুন।
ধারাবাহিক মানেই এক পুরুষের দুটো প্রেম। কুটকাচালি। আর শুধু সমস্যা দেখানো। রোজ এই সব দেখতে দেখতে সমাজে অবক্ষয় নেমে আসছে নাকি?
আমি তো উলটো কথাই বলব। প্রত্যেকটা চ্যানেল কিন্তু মানুষের মধ্যে গিয়ে, রিসার্চ করে তবেই গল্পের দিক নির্ণয় করে। আমিও চ্যানেলে বেশ কিছু দিন ধরে কাজ করার সূত্রে দেখেছি সমাজটাই এরকম। আমার কাছে শুনুন, গ্রামের ঘরে ঘরে স্বামীদের দুটো বিয়ে। রাতে তারা মদ্যপ স্বামীর কাছে মারও খাচ্ছে। এই সব মেয়েরা সিরিয়ালের মেয়ের সঙ্গে নিজেদের রিলেট করে। তারা দেখে কী ভাবে তারা রিঅ্যাক্ট করবে? আর শুধু গ্রাম কেন? শহরেও অজস্র উদাহরণ আছে যেখানে শাশুড়ির অত্যাচার চলে, পুরুষরা যে কোনও মুহূর্তে আরেকটা বিয়ে করে নিতে পারে। পরকীয়া হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী আলাদা সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। এটা তো সমাজেই হচ্ছে। ধারাবাহিক থেকে মেয়েরা শিক্ষা নিচ্ছে। আমি তো বলব ধারাবাহিক হল শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান।
ধারাবাহিকের দর্শক তাহলে পরকীয়াই দেখতে চাইছে?
ধারাবাহিক কিন্তু খবরের কাগজের মতো। আজ যা গরম। কাল তা বাসি। ওভাবে বলা যায় না দর্শক ঠিক এটাই চায়। তবে আমি চর্বিতচর্বণ বা গতে বাঁধা ফর্মুলায় বিশ্বাস করি না। আমার একঘেয়ে কাজ ভাল লাগে না।
আরও পড়ুন, বন্ধুর ছক-ভাঙা যৌন ঝোঁক ছবিতে
আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই তো ছটফট করছেন। এখন ধারাবাহিক, পরক্ষণেই ওয়েব সিরিজ...
আমার দিন দু ভাবে ভাগ করা। একটা ধারাবাহিকের জন্য। আরেকটা ওয়েবের জন্য। তবে আমি ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে বরাবর নিজেকে ভেঙেছি। ভেতর থেকে কিক এলে তবেই বুঝেছি দর্শকের ভাল লাগবে। কত দিন আগে আমি চাইল্ড প্রটাগনিস্ট নিয়ে কাজ করেছি 'মা' ধারাবাহিকে। আবার 'রমণীর গুণে' করছি। 'বেহুলা' করেছি।
টিআরপি-র চিন্তা নেই আপনার?
টিআরপি-র চিন্তা থাকলে এত বার ভাঙতে পারতাম! 'গোয়েন্দাগিন্নী' কেউ ভাবেইনি এরকম সাড়া ফেলবে। অন্য দিকে 'ভূতু' একদম অন্য গল্প। আবার 'জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি' যখন করতে চাইলাম তখন সবাই বলল ফরমুলায় ফেলা চলবে না। কিন্তু আজও চলছে।
যদি বলি আপনি এসভিএফ-এর জন্যই এত ভাল চলছেন?
সত্যি তাই। শ্রীকান্ত আর মণি আমাকে এত ভাঙতে দেয়।আসলে ওরাও ফরমুলা পছন্দ করে না। আমি যদি কখনও বলি একটু ফরমুলায় ফেলে কাজ করি না, টিআরপিও বাড়বে। ওরাই বারণ করে। বলে এই ধাঁচটা আমার নয়। ওদের জন্য সাহসটা নিতে পারি।
‘দুপুর ঠাকুরপো’র একটি দৃশ্য।
কিন্তু এসভিএফ এর মতো ব্র্যান্ড যখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে 'হইচই' নিয়ে এল সেখানে 'দুপুর ঠাকুরপো'-র মতো যৌনতার সুড়সুড়ি দেওয়া কনটেন্ট আনতে হল?
বাঙালিকে একটু বড় হতে হবে এ বার। দেখুন রকে যে ছেলেরা আড্ডা মারে তারা কি দেশনায়কদের নিয়ে কথা বলে? নাকি পাশের বাড়ির বৌদি কত ভাল দেখতে, দাদা অতটা নয়-এই নিয়ে আলোচনা করে? যে মানুষ ধারাবাহিকে নিজেকে খুঁজে পায় না। ছবিতেও পাচ্ছে না। সে যাতে 'হইচই'-এ নিজেকে খুঁজে পায় সেই জন্যই 'দুপুর ঠাকুরপো'। আমার বক্তব্য ওরা বন্ধুদের মধ্যে, লুকিয়ে লুকিয়ে যৌনতা নিয়ে আলোচনা না করে প্রকাশ্যে, স্বাভাবিকভাবে করুক। যৌনতা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। দেখি কিন্তু এই দর্শক তো বাংলায় আছে। তারা কোথায় দেখবে? তাই 'দুপুর ঠাকুরপো'।এই প্রজন্ম নিজেদের রিলেট করতে পারছে। বাংলা কনটেন্টের সঙ্গে একাত্ম হচ্ছে। আর মজার কথা এরাই 'দুপুর ঠাকুরপো' দেখার পর 'হইচই'-য়ে ব্যোমকেশ দেখছে। 'হ্যালো' দেখছে। এটাই তো চেয়েছি আমরা। আর কতদিন যৌনতা নিয়ে ঢেকেচেপে থাকব আমরা?
সামনে কী আসছে?
'নিশির ডাক' আর 'রানু পেল লটারি'। এই দুটো ভাবনার মধ্যে নতুনত্ব আছে। দেখা যাক।
আরও পড়ুন, বিয়ের বিমা করিয়েছেন দীপবীর, বিষয়টা ঠিক কী, জানেন?
ছবি করতে ইচ্ছে করে না?
নাহ। আমি শ্রীকান্তকে বলেছিলাম, তোমার কাছে সবাই ছবি করব বলে আসে। আমি কোনওদিন ছবি করার কথা বলব না। তবে বলা যায় না পাঁচ বছর পর ছবি করতে পারি। বলা যায় না কিন্তু...
বড় বাজেট নিয়ে ধারাবাহিক করার ইচ্ছে আছে?
আমি 'অগ্নিজল' করতে গিয়ে দেখেছি বিশাল সেট, গ্র্যান্জার এ সব দিয়ে মা, মাসিদের মন ভরানো যায় না। গল্প যদি ভাল হয় শুটিং খারাপ হলেও ধারাবাহিক জনপ্রিয় হবে। বাঙালি ভাল গল্প চায়। সেটা বলতে পারলেই হল।
‘গোয়েন্দা গিন্নী’র একটি দৃশ্য।
আপনিও তা হলে মনে করেন সিরিয়াল মা,মাসিদের?
মা, মাসি, জেঠি সব্বার। যে সময় সিরিয়াল চলে পুরুষরা বাড়িতে থাকে না। ওয়ার্কিং মহিলারাও দেখার সময় পান না। বাড়ির মহিলাদের ওই সময়টা নিজেদের সময়। ওই সময়টা তারা ধারাবাহিক দেখেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে গেলে, কেরিয়ার তৈরি করতে গেলে শোনা যায় সাহানাকে খুশি করতে হবে?
আমি এসভিএফ-এর ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর। আমার পছন্দের গুরুত্ব তো থাকবেই। তবে আমি কাজের লোক চিনতে পারি। এই সৃজিত এখন এত ভাল কাজ করছে ও 'চারুলতা' বলে ধারাবাহিক করেছিল। কেউ সে ভাবে দেখেনি। আমি দেখেই বলেছিলাম ওকে দিয়ে 'বেহুলা' করাবো। তাই করিয়েছিলাম। অনুপম যেমন 'গোয়েন্দাগিন্নী' পরিচালনা করল। ভাল কাজের কোনও বিকল্প নেই। আমি ভাল কাজ খুঁজি।
আপনি তাহলে ধারাবাহিকের সম্রাজ্ঞী?
না না, ওটা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। লীনাদি ধারাবাহিকটাই শুধু ধরে আছেন। উনি সম্রাজ্ঞী। আমি সকালে ধারাবাহিক, দুপুরে ওয়েব।
গল্পের সম্রাজ্ঞী তাহলে?
নানা এসব বলবেন না। এই জগতে টিআরপি পড়ে গেলে কালই থাকবো না। সম্রাজ্ঞী তো দূরের কথা।
গল্প ফুরিয়ে এলে কী করবেন?
খেতে পাবো না। তবে নিজের দমে ফিরে আসার আত্মবিশ্বাস আছে।
(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)