কাঞ্চনের মন্তব্যের পাল্টা রুদ্রনীল। গ্রাফিক : শৌভিক দেবনাথ।
কাঞ্চনকে আজ থেকে চিনি, তেমনটা নয়। সেই ‘স্ট্রাগল’-এর সময় থেকে আমি, কাঞ্চন, পরমব্রত, রাজ একসঙ্গে। এখন আমরা যে যার মতো রাজনৈতিক আর্দশ, দল, রং বেছে নিয়েছি। কাঞ্চন যেটা বলেছে জুনিয়র চিকিৎসকদের বেতন ও বোনাস নিয়ে, সেটাও শুনেছি। আসলে এই কথাগুলো তৃণমূলের নিজস্ব বক্তব্যের মতো শোনাচ্ছে। ব্যক্তি কাঞ্চন মল্লিকের কথা বলে মনে হচ্ছে না।
সবাই জানেন, যে ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত চলছে। কিন্তু তার বাইরেও প্রতিটি সংবেদনশীল, বুদ্ধিধর মানুষ জানেন, এটা একটা পরিকল্পিত ঘটনা। প্রায় সকলেই মনে করছেন একজন ব্যক্তির পক্ষে এ ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়, ফলে একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলেই মনে হচ্ছে। এমন ঘটনায় দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি পেশার মানুষ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাই এমন সময় যাঁরা প্রতিবাদ করছেন তাঁদের দমন-পীড়ন, হুমকি, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের ভয় দেখিয়ে প্রতিবাদ বন্ধ করার চেষ্টা করছে শাসকদল। কাঞ্চন মল্লিক অভিনেতা হয়েও সেই শাসকের প্রতিনিধি। ফলে ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস না করলেও, তৃণমূলের নিয়ম মেনে অন্য রাজনৈতিক নেতাদের মতোই কথা বলতে হচ্ছে আমাদের সহকর্মী ও বন্ধু কাঞ্চনকেও। ও সেই রাস্তাই বেছে নিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমি ওর করা মন্তব্যে ব্যথিত এবং বিরক্ত।
তবে, রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা বলে তার প্রভাব যে আমাদের বন্ধুত্বে পড়েছে তেমনটা নয়। আমাদের যখনই কোথাও দেখা হয়েছে আমরা রাজনীতি বাদ দিয়ে অন্য সব নিয়ে আলোচনা করি। তাই আমার বিশ্বাস, দলীয় নিয়ম মেনে এই ধরনের মন্তব্য করতে হচ্ছে। ঠিক যেমনটা দিন কয়েক আগে কুণাল ঘোষ করলেন। শিল্পীদের প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে কথা বলেছেন এবং সরকারি গাফিলতিকে এড়িয়ে গিয়ে অন্য একটা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন একদল তৃণমূল নেতা। কাঞ্চন যেন সেই কাজটাই করল। যদিও তৃণমূলের একাংশের নেতা চুপ করে গিয়েছেন জনবিক্ষোভ দেখে।
কাঞ্চনের এই মন্তব্যের ফলে একটা জটিলতা সৃষ্টি হল। ও কি মানুষের পক্ষে! না কি বিধায়ক হয়ে শাসকদলের রাজনীতির জালে জড়িয়ে গিয়েছে! এটা স্পষ্ট করা উচিত।
আমি, কাঞ্চন, সুদীপ্তা দীর্ঘ দিনের বন্ধু। কিন্তু কাঞ্চনের এই দুর্ভাগ্যপূর্ণ বয়ানের পর বন্ধুদের অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সেটা নজরে এসেছে। আমিও তাঁদের মতো একই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি। তবে এর পাশপাশি আমি এটাও যুক্ত করব, যাঁরা কাঞ্চনের করা মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা নিজেরাও জানেন, ব্যক্তি কাঞ্চন কখনও সংগঠিত অপরাধমূলক কাজের পক্ষে কথা বলেননি। এমন মনোভাবও ওর নেই। রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার কারণেই এমন মন্তব্য করে বসেছে।
আজ যখন এই কথাগুলো লিখছি, তখন লালবাজারে জুনিয়র চিকিৎসকরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাঁদের রুখে দেওয়ার জন্য লৌহপ্রাচীর তৈরি হচ্ছে। তাঁদের হাতে স্টেথোস্কোপ ছাড়া কিন্তু আর কোনও অস্ত্র নেই। সে দিন নবান্ন অভিযানে ছাত্রদের হাতেও কোনও অস্ত্র ছিল না। কাঞ্চন মল্লিক যে রাজনৈতিক দলের সদস্য, সেই দলই রাজ্য সরকার হিসাবে প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চাইছে। কাঞ্চন তার রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা পূরণ করতে গিয়ে এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছে। যদিও আমার মনে হয় এই সময় ওর আশু কর্তব্য হল, দ্রুত এই বক্তব্যের ব্যখ্যা দেওয়া। কিংবা ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করা।
আমরা এই মুহূর্তে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দল ভুলে রাস্তায় রয়েছি। প্রতিবাদে রয়েছি। সুদীপ্তার বক্তব্যে দেখেই বলছি, সরকারের নিরপেক্ষ থাকা উচিত ছিল। তারা পারেনি। যদিও কাঞ্চনের এই মন্তব্যে ওকে বন্ধু হিসেবে ‘ত্যাগ’ করেছেন কেউ কেউ। আমার কেবলই মনে হচ্ছে, কাঞ্চন ছাড়াও শাসকদলের প্রচুর বিধায়ক, সাংসদ আমাদের সহকর্মী ও পুরনো বন্ধু। যাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে, যারা চুপ করে গিয়েছে। কাঞ্চনেরও উচিত ছিল চুপ করে যাওয়া। আগ বাড়িয়ে হঠাৎ দলের লুম্পেনদের পক্ষ নিয়ে ও প্রতিবাদের বিপক্ষে মন্তব্য করল কেন বুঝলাম না।
সেই সঙ্গে আরও একটা কথা বলতে চাই বন্ধু কাঞ্চনকে, জনবিরোধী ও মানববিরোধী কর্মকাণ্ড চোখের সামনে দেখেও যদি বিধায়ক হয়ে বসে থাকতে চায়, তা হলে আমার কিছু বলার নেই। সিদ্ধান্তের ভার ওর উপরই ছেড়ে দিলাম।