Womens day special

‘সংসার এবং ইন্ডাস্ট্রি দু’ক্ষেত্রেই একা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি, এতেই আমার আনন্দ’, লিখলেন ঋতুপর্ণা

এখন আবেগের কোনও দাম নেই। কেউ দুঃখ গাইলে মানুষ তাঁকে এড়িয়ে যাবে, আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য কলম ধরলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

Advertisement
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩৬
Share:
Rituparna Sengupta shares her struggling  journey in industry and family dgtl

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

আজ শিবরাত্রি, আবার নারী দিবস। শিব আর শক্তির পাশাপাশি অবস্থান। কোনও রকম ভণিতা না করেই বলতে পারি মেয়েরা অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে সামলাতে পারে। ছেলেরা পারে না তা নয়। তবে মেয়েরা এ ক্ষেত্রে একটু এগিয়ে।

Advertisement

আমার ঠাকুমাকেই দেখেছি, রান্নাঘর থেকে বাইরের জগৎ– একা হাতে সামলাতে। আমি তো ওঁর হাতেই মানুষ। বাড়িতে তখন আত্মীয়স্বজনের আনাগোনা, ঠাকুমা ঢালাও বিছানা করে এক হাঁড়িতে তাঁদের যেমন খাওয়াত, তেমনি স্নিকার্স পরে পিঠে ব্যাগ নিয়ে বেড়াতে যেত। স্নাতক স্তরের পড়াশোনাও ছিল না ঠাকুমার। কিন্তু আমার মনে হয় মেয়ে হিসেবে এমন সহজাত ক্ষমতা ছিল যে একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব নিতে পারত। এই ক্ষমতা কিন্তু সময় বা পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয় না। ভেতরেই থাকে। আমি কখন আঁকার স্কুলে যাব, কখন পড়ব সব নখদর্পণে। ভোর ৬টায় আমায় ডেকে দিয়ে বলত, “ওঠ! কখন পড়বি, ন’টা তো বেজে গেল।"

শুধু কি আমি? মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জায়গা তৈরি করার ক্ষেত্রেও ঠাকুমা সজাগ ছিল। আমার পিসিরা সেই ভাবে মানুষ হয়েছিল। এক পিসি ব্যাঙ্কে কাজ করেছে, আর এক জন শান্তিনিকেতনে বাটিক শিখেছে। অন্য জন অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করেছে। আমি তিন কামরার ফ্ল্যাটের মধ্যেই এ সব হয়ে উঠতে দেখেছি।

Advertisement

আমার মা বিয়ের পরে ওই এক ভাবেই হঠাৎ জামালপুর থেকে কুড়ি জন আত্মীয় চলে এলে, তাঁদের হাসিমুখে আপ্যায়ন করেছে।

তবে মেয়েদের নিজের সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি। আমি যদি অসহায়, দুর্বল হিসেবে সকলের সামনে নিজেকে জাহির করি, লোকেও ওই চোখেই আমাকে দেখবে।

তখন আমাকে ঘিরে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের পরিবেশ তৈরি হবে। আমার ভাল লাগা, ইচ্ছা সব আমাকেই দেখতে হবে। না হলে তো কিছুই করা যাবে না। কারও কিচ্ছু এসে-যায় না। সময়ে এক এক করে প্রিয়জন হারিয়ে যাবে। মানুষ আরও বিচ্ছিন্ন হবে। কিন্তু এ নিয়ে যদি সারা ক্ষণ মনখারাপ করি তা হলে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনব।

এই তো আজ সকাল থেকে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে আমার শাশুড়ি হাসপাতালে। তাঁর সব দায়িত্ব আমার। মেয়ের খবর রাখা। ছেলেকে ফোন করা। সংসারের নানা কাজ... সবই চলছে ।

এখন সবাই জোরে দৌড়চ্ছে। আবেগের কোনও দাম নেই। আগে আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিয়ে ভাবতে একশো জন হাজির হয়ে যেত। এখন লোকে ফোনে পরামর্শ দিয়ে চলে যাবে। উল্টে বলবে 'ওর মধ্যে সারাক্ষণ হতাশা'। এড়িয়ে যাবে। নিজেকে করুণার পাত্র যেন কোনও মেয়ে তৈরি না করে।

আমি এখন মর্যাদা নিয়ে খুব ভাবি। মানুষের কাছে সব কিছু থাকলেও সে মর্যাদাহীন হলে বিপদ। আমি মাটিতে পড়লে নিজেকেই নিজে উঠিয়ে নিয়ে চলি। সংসার আর কাজ দুটোতেই বিশ্বাস করি। ইন্ডাস্ট্রিতেও দীর্ঘ দিন ধরে একা যুদ্ধ করছি। বড় প্রযোজনা সংস্থারা যে আমার সঙ্গে আছে, এমনও নয়। আমি নিজেই নিজের জায়গা তৈরি করেছি। নতুনদের সুযোগ দিয়েছি। আমি আমার সবটা দিয়ে কাজ করি। কান্না মুছে হাসি ফিরিয়ে আনি। আমি বৃদ্ধি করতে না পারি, সৃষ্টি তো করি...

না হলে থমকে যাব!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement