সলমন
গত বছর ইদের ‘কমিটমেন্ট’ ছিল তাঁর। কিন্তু ভাইজানের চেয়েও শক্তিশালী ভাইরাস প্রায় দেড় বছর ধরে দুনিয়া জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। অগত্যা প্রতিশ্রুতির এক বছর পরে ভক্তদের ঘরে এলেন ভাইজান, দেশের সিনেমা হলের বদলে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের পর্দায়।
ভাইজানের ছবি বলতে যা বোঝায়, ঠিক সেই গোত্রের সলমন খানের ‘রাধে’। ধুন্ধুমার অ্যাকশন, কমবয়সি নায়িকা, কিছু গা-গরম করা সংলাপ, আইটেম নাম্বার... এই তালিকায় সাধারণত ছবির গল্পকে উহ্য রাখা হয়। কারণ গল্প এই সব ছবিকে চালনা করে না। বরং গল্পকে পথ দেখিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয় লার্জার-দ্যান-লাইফ হিরো। কখনও রাধে, কখনও বা চুলবুল পাণ্ডের বেশে। তবে ‘দবং থ্রি’-এর চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরে কিছুটা হলেও ট্র্যাক বদলেছেন সলমন এবং তাঁর ‘হিটমেকার’ পরিচালক প্রভু দেবা। ওটিটির পর্দায় দর্শকের ধৈর্য ধরে রাখা সিনেমা হলে দর্শক বসিয়ে রাখার চেয়ে কঠিন। তাই সলমনের ছবি হিসেবে ‘রাধে’ দৈর্ঘ্যে ছোট। পুরো দু’ঘণ্টারও নয়। কমিক রিলিফের নামে আজগুবি কাণ্ডকারখানাও খানিক কম এখানে! ছবিটি ‘ওয়ান্টেড’-এর মতো দুরন্ত না হলেও, ‘দবং থ্রি’-র মতো অসহনীয় নয়।
মুম্বইয়ের এনকাউন্টার স্পেশ্যালিস্ট রাধেকে (সলমন খান) তলব করা হয় যখন শহরের স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের বৃহত্তর অংশ মাদকের পাকেচক্রে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই চক্রের মাথা রানা (রণদীপ হুডা)। সলমনের ঊর্ধ্বতন অফিসারের চরিত্রে জ্যাকি শ্রফ। জ্যাকির বোন এবং সলমনের প্রেমিকা দিয়ার ভূমিকায় দিশা পাটনি। দুই স্থানীয় ডনকে ঘুঁটি করে রানার নাগাল পায় রাধে। এবং তাকে খতম করাই ছবির সারমর্ম।
রাধে
পরিচালক: প্রভু দেবা
অভিনয়: সলমন, দিশা, জ্যাকি, রণদীপ
৫.৫/১০
প্রায় আঠেরো বছর আগে ‘তেরে নাম’-এ রাধের চরিত্রে কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়েছিলেন সলমন। সে ছবিতে রাধে স্টাইলের হেয়ারকাট ছিল তখন সাড়াজাগানো। কিন্তু এই ছবির রাধে, সলমনের চেনা অবতারের সম্প্রসারণ। এক দুঁদে পুলিশ অফিসার, যার সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে থাকে জুনিয়রেরা, এমন এক চরিত্র যে, নারীদের সুরক্ষা ও সম্মানরক্ষার বার্তা দেয়, যুবসমাজকে নিজের মতো করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজে লাগায় সে...আসলে পর্দার রাধে পর্দার বাইরের সলমনেরই আর এক রূপ। ভাইজানের ছবিতে তাঁকে সেলিব্রেট করা পরিচালকের অলিখিত কর্তব্যও বটে! একটি দৃশ্যে দেখানো হয়, বান্দ্রার সেই বিখ্যাত গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের (সলমনের বাড়ি) সামনেই রাধেকে গাড়ি করে নামিয়ে দেয় দিয়া। আবার আর একটি দৃশ্যে রাধেকে দেখে এক বিজ্ঞাপন-নির্মাতা বলে, ‘‘এই চেহারা বলিউডের জন্য ঠিক নয়, ‘বিগ বস’-এ ভাল মানাবে।’’ অতিমারি আক্রান্ত দুনিয়ায় ইদের বিরিয়ানির সঙ্গে এমন সঙ্গলাভই তো প্রত্যাশা করেন সলমনের অনুরাগীরা!
সলমনের প্রতিদ্বন্দ্বীর চরিত্রে রণদীপ হুডাকে দর্শক আগেও দেখেছেন। তাঁদের দ্বৈরথ ছবির ইউএসপি। সলমনের এন্ট্রির দৃশ্য (কাচ চুরচুর করে ভেঙে পড়ছে তবু রাধের শরীরে একটাও আঁচড় নেই) বা শেষ দৃশ্যে হেলিকপ্টারে চড়ে রাধে-রানার মারপিট... ঘরে বসেও হাততালি, সিটি ও বড় পর্দার চেনা উন্মাদনাকে মনে করাবে। এ ছাড়া দিশা পাটনি ছবির দৃষ্টিসুখ এবং তাঁর পর্দার দাদা জ্যাকি ছবির কমিক রিলিফ। এই শিল্পীরাও সলমনের ছবিতে এখন নিয়মিত হয়ে গিয়েছেন।
তাই নতুন বা ছকভাঙা এমন কিছুই নেই এখানে, যা দর্শক আগে সলমনের ছবিতে দেখেননি। যে ‘চুম্বন’ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে লেখালিখি চলছে, আদতে তা কিন্তু দিয়ার টেপ লাগানো ঠোঁটে এঁকে দেয় রাধে। অর্থাৎ এখানেও সবার উপরে ভাইজানের ‘কমিটমেন্ট’ সত্য! ফ্যামিলি অডিয়েন্সের খাতিরে তিনি তাঁর নীতির সঙ্গে আপস করেননি...