সিজ়ন ফাইভের অন্তিম পর্ব, এক ঘণ্টা ষোলো মিনিটের এপিসোডের শেষে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা... পরের সিজ়নের জন্য অপেক্ষা নেই, আগামী পর্বের টেনশন নেই। সবটাই শেষ। কোনও সিরিজ়ের ফিনালে মানে নির্মাতা-দর্শক সকলেই চাপে। দু’পক্ষের প্রশ্ন, প্রত্যাশা পূরণ হবে তো? ‘মানি হাইস্ট’ সেই পরীক্ষায় সসম্মান উতরে গিয়েছে।
কাহিনি যে ভাবে শেষ হয়েছে তা প্রত্যাশিত ছিল। এমনকি প্রফেসর (আলভারো মর্তে) এবং অ্যালিসিয়া সিয়েরার (নাজওয়া নিমরি) যে আঁতাত হতে চলেছে, এটাও বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু এই সিরিজ়ের সবচেয়ে বড় ইউএসপি, মুহূর্ত তৈরি করা। তাই গল্পের গরু বারেবারেই গাছ থেকে চাঁদে লাফালেও, ‘মানি হাইস্ট’-এর রোমাঞ্চ কমেনি।
পঞ্চম সিজ়নের প্রথম পার্ট শেষ হয়েছিল টোকিয়োর (উর্সুলা করবেরো) মৃত্যু দিয়ে। সিরিজ়ের অন্যতম আকর্ষণকে স্ক্রিন থেকে সরিয়ে দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু ওই একটা চালই দর্শকের আবেগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিল। তবে অন্তিম পর্বের কথক টোকিয়োই। হাইস্টের শেষ পর্বে প্রত্যেকটা চরিত্রের মানসিক ওঠা-পড়া দর্শক প্রত্যক্ষ করতে পারেন, টোকিয়োর ভয়েসওভারের মাধুর্যে।
মানি হাইস্ট
(সিজ়ন ফাইভ, লাস্ট পার্ট)
পরিচালনা: অ্যালেক্স পিনা
অভিনয়: আলভারো মর্তে, নাজওয়া নিমরি, পেড্রো আলন্সো
৭.৫/১০
এই পর্বে দুটো এসকেপ ট্রিক সমান্তরালে চলতে থাকে। ব্যাঙ্ক থেকে সোনা বার করে আনা এবং নিজেরাও সুরক্ষিত ভাবে বেরিয়ে আসা। সেই খেলায় বারবার পাল্লা এ দিক, ও দিক হয়েছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রফেসর ও অ্যালিসিয়ার নতুন রসায়ন। শেষ পর্বে অ্যাকশন আগের তুলনায় অনেক কম। তা বলে রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত কম নেই।
গোটা তিনেক দৃশ্য এই সিরিজ়ের ফিনালেকে মনে করাবে বারবার। পুলিশের তাড়া খেয়ে লুকিয়ে থাকার মুহূর্তে অ্যালিসিয়া ও প্রফেসরের কথোপকথন। কিংবা তাদের বিদায়বেলার মুহূর্তটা। ভোলা যাবে না শেষ বারের মতো হাইস্ট-টিমের ‘বেলা চাও’ গেয়ে ওঠা। যখন মনে হচ্ছে দলের প্রতিরোধ এই বার ভেঙে পড়ল, তখনই টোকিয়োর সেই অমোঘ উক্তি— ‘যখন সব আশা শেষ, তখনও জানি তুমি অন্তত আছ’... মনে করিয়ে দেয় গার্ডিয়ান এঞ্জেল নিশ্চয়ই খেলা ঘুরিয়ে দেবে। ভোলা যাবে না শেষ কয়েক মিনিটের অসাধারণ আবহসঙ্গীত ও দৃশ্যায়ন।
এই পর্বেও বেশ কিছু দুর্বল জায়গা রয়েছে। অনেক জটিলতার খুব সহজ সমাধান দেখিয়ে দেওয়া হয়। চোরের উপর যারা বাটপাড়ি করে, তারা এত সহজে হার মেনে যায়? বিশেষত অতীতে ধোঁকা দেওয়ার দৃষ্টান্ত যখন তাদের রয়েছে। একদম শেষ পর্বে প্রফেসরের সঙ্গে পুলিশ কর্তা টমায়োর (ফার্নান্ডো কায়ো) নেগোসিয়েশন পর্ব কাহিনির টেনশন ধরে রাখে ঠিকই, কিন্তু খানিক জোর করে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও স্পষ্ট হয়। রাষ্ট্রশক্তির হাত থেকে এত সহজে বোধহয় নিস্তার পাওয়া যায় না। কিন্তু এটা তো অ্যান্টিহিরোর ফেয়ারিটেল ড্রামা। তাই প্রফেসর, লিসবন, রিয়ো, ডেনভারদের শেষ হাসি, দর্শকের মুখেও রেশ ছড়িয়ে দেয়। হাইস্ট ড্রামার তকমা এড়িয়ে ‘মানি হাইস্ট’ প্রেম-বন্ধুত্ব-সহমর্মিতার দলিল হয়ে ওঠে।
নির্মাতারা ঘোষণা করেছেন, বার্লিনকে (পেড্রো আলন্সো) নিয়ে তাঁরা নতুন সিরিজ় নিয়ে আসবেন। বার্লিন অর্থাৎ এই সিরিজ়ের মগজাস্ত্র। দ্বিতীয় সিজ়নে যে চরিত্রটি ‘নেই’ হয়ে গিয়েও সিরিজ় জুড়ে দাপিয়ে বেড়ায়। অতএব, ফের নতুন অপেক্ষা শুরু।