Maska

বিস্বাদ পদে পণ্ডশ্রম

ইরান থেকে ভারতে আসার সময়ে পারসিরা নিয়ে এসেছিলেন নিজেদের সংস্কৃতি। তাঁদের ধমনীতে বইছে সুস্বাদু সব রান্নাবান্না।

Advertisement

রূম্পা দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:৫৭
Share:

বান অর্থাৎ পাউরুটির বৈশিষ্ট্যই হল, তা নরম তুলতুলে। গোল বানের মাঝ বরাবর কেটে পুরু করে লাগানো মাখনের মস্কা। খেতে সুস্বাদু নিঃসন্দেহে। কিন্তু বেক করতে গিয়ে যদি সেই পাউরুটিই পুড়ে শক্ত হয়ে যায়? কিংবা অতিরিক্ত মাখনে জড়িয়ে যায় স্বাদকোরক? তা হলে মস্কাওয়ালার প্রচেষ্টা আর খানেওয়ালার খিদে… মাঠে মারা যায় দুটোই। ঠিক এমনটাই হয়েছে নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘মস্কা’র ক্ষেত্রেও।

Advertisement

ইরান থেকে ভারতে আসার সময়ে পারসিরা নিয়ে এসেছিলেন নিজেদের সংস্কৃতি। তাঁদের ধমনীতে বইছে সুস্বাদু সব রান্নাবান্না। তা ধরে রাখতেই নানা জায়গায় গজিয়ে উঠেছিল ইরানি কাফে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপবদলই দস্তুর। তাই মুম্বইয়ের সুপ্রাচীন রুস্তম কাফের উত্তরাধিকার রুমি ইরানি (প্রীত কামানি) আর কোনও মতেই মস্কাওয়ালা বা বেকার হতে চায় না। তার স্বপ্ন উড়ান দেয় রুপোলি পর্দার নায়ক হতে।

ছবিটা কী হবে, তা মোটামুটি প্রথম ১৫ মিনিট দেখলেই মালুম হয়। কারণ স্বপ্নের পথে পরিবারের বাধা বরাবরের। মা ডায়না ইরানিও (মনীষা কৈরালা) যে ছেলের স্বপ্নের চাইতে পারিবারিক ব্যবসাকেই প্রাধান্য দেবেন, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু একই চর্বিতচর্বণ চলতে থাকে। গল্পকে ফুডপর্নের মোড়কে বুনতে চেয়েছেন পরিচালক নীরজ উধওয়ানি। গুঁড়ো গুঁড়ো ময়দা ছড়িয়ে পড়ছে, দুধ ফেটিয়ে তৈরি হচ্ছে মাখন, ছুরি বসছে বানের পেট চিরে, তৈরি হয়েছে রঙিন সব খাবারদাবার… পর্দায় তা দেখতে মন্দ লাগার কথা নয়। তার সঙ্গে জুটেছে পারসি স্টাইল সাল্লি কিমা, পত্রানি মচ্ছি, প্রন পাতিয়ো জাতীয় নানা পদ। কিন্তু সে সবকে উপস্থাপনা করার জন্য গল্প থাকা চাই। না হলে ফুডগ্যাজ়ম চরিতার্থ করার ইচ্ছেও মরে যায়। গতিহীন একটি গল্পকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ায় তা হয়ে উঠেছে আরও দুর্বিষহ। তেমনই ছবির চিত্রনাট্য। দাগ কাটে না কোনও সংলাপ। তবে খাস শহরের আর প্রতিটি মানুষের এক একটা গল্প হয়ে ওঠার সংলাপ যা-ও বা মন কাড়ে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়িতার কারণে তা রেশ হারায়।

Advertisement

মস্কা (ওয়েব মুভি)
পরিচালনা: নীরজ উধওয়ানি
অভিনয়: মনীষা, প্রীত, জাভেদ, নিকিতা, শার্লি
৪/১০

ছবির শুরুতে চোখে চশমা আঁটা, পারসি ডায়লেক্টে কথা বলা মনীষাকে দেখতে মন্দ লাগেনি। আর্থ্রাইটিসে কাবু সন্তানপ্রেমে পাগল মায়ের ‘সন-থ্রাইটিস’জাতীয় টুকরো পাঞ্চলাইন শুনতেও খারাপ লাগছিল না। তবে সেই কমিকও বাঁচাতে পারেনি অতি মিষ্টতায় দুষ্ট ‘মস্কা’কে। দানা বাঁধেনি রুমি-মল্লিকা বা রুমি-পার্সিসের সম্পর্ক। এমনকি মা-ছেলের সম্পর্কের আবেগও জোরদার নয়। এ ছবিতে রুমি প্রায়ই তার মৃত বাবা রুস্তমের (জাভেদ জাফরি) সঙ্গে কথা বলে। জাভেদের অভিনয় ‘মস্কা’র সেরা সম্পদ। মনীষার অভিনয়ও ভাল।

ছবিতে রুমি ওরফে প্রীত অভিনয়কে কেরিয়ার করতে গিয়ে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়, ফিরে আসে পরিবারে। বাস্তবিকই তাঁর অভিনয় এতটাই খারাপ যে, তিনিও ফের ভাবতে পারেন নিজের পেশা নিয়ে। ছবিতে অতিথিশিল্পীর চরিত্রে রয়েছেন বোমান ইরানি। পারসি বোমানের বলিউড-জয়ের স্বপ্নই দেখেছিল রুমি। বোমান মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, প্রত্যেক মানুষের নিজের মতো হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখা উচিত। রুমির অবশ্য সেই সারমর্ম বুঝতে সময় লেগেছে পাক্কা ১১১ মিনিট!

লকডাউনের বাজারে বোরডম কাটাতে ওটিটিই ভরসা এখন। কিন্তু নিখাদ কমেডি বা ফুডপর্ন দেখতে চাইলে সার্ফ করে কমেডি কিংবা ফুড ডকুমেন্টারি জ়ঁরে এগিয়ে যাওয়া যায়। তাতেও বোরডম না কাটলে ‘মস্কা’ রইলই। তবে ছবি দেখার পরে বিস্বাদ বোধ হলে, তার দায় সমালোচকের নয়!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement