Kho Gaye Hum Kahan Movie Review

আমরা চঞ্চল, আমরা অদ্ভুত

অনন্যা পাণ্ডে চমকপ্রদ কাজ করেছেন নিজের পরিসরে। ছেড়ে যাওয়া প্রেমিককে ঈর্ষার সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য যে উপায় ঠাউরেছিল অহনা, তার অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণ হওয়ার দৃশ্যটিতে অনন্যা খুব ভাল।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০১
Share:

সম্পর্ক, প্রেম, বন্ধুত্ব, চাকরি, ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনা সব কিছু ডুবে রয়েছে মুঠোয় ধরা একটা ছোট্ট স্ক্রিনে। ছবি: সংগৃহীত।

একটা গোটা প্রজন্ম জড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জালে। সমাজমাধ্যম আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে তাদের এতটাই যে, চলতে-ফিরতে-উঠতে-বসতে তাদের আঙুলের ডগায় নাচাচ্ছে ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব। সম্পর্ক, প্রেম, বন্ধুত্ব, চাকরি, ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনা সব কিছু ডুবে রয়েছে মুঠোয় ধরা একটা ছোট্ট স্ক্রিনে। লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার, ভিউ, লাইক সত্ত্বেও রয়ে যাচ্ছে একরাশ একাকিত্ব। এই সমস্যাকেই ধরতে চেয়ে অরুণ বারাইন সিংহ তৈরি করেছেন ‘খো গয়ে হম কাহাঁ’।

Advertisement

নবাগত পরিচালকের পাশাপাশি রিমা কাগতি এবং জ়োয়া আখতার এই নেটফ্লিক্স ছবির সহ-চিত্রনাট্যকার। ‘দিল চাহতা হ্যায়’ কিংবা ‘জিন্দেগি মিলেগি না দোবারা’র ঢঙে গল্প বলতে গিয়েও এ বার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছেন তাঁরা, কারণ সমস্যার গভীরে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হয়নি। ইমাদ (সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী), অহনা (অনন্যা পাণ্ডে) আর নীল (আদর্শ গৌরব) বোর্ডিং স্কুলের বন্ধু। এদের মধ্যে নীল তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকলেও অহনা আর ইমাদ একটা ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকে। মিলেনিয়ালরা সাধারণত যা যা সমস্যায় ভোগে, প্রায় সবই রয়েছে এই তিনজনের। ইমাদের রয়েছে ছোটবেলার ক্ষত, অহনার প্রেম ভাঙনের মুখে আর নীল অনিশ্চয়তায় ভোগে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে।

এ ছবির প্রায় সব চরিত্র সারাক্ষণই ফোন হাতে, তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিতও বটে। ইমাদ-অহনার সাজানো ফ্ল্যাট, নীলের মধ্যবিত্ত বৈঠকখানা আর জিম, ইমাদের স্ট্যান্ড-আপ কমেডির মঞ্চ আর অজস্র পাব... ঘুরে ফিরে এই ক’টি জায়গার বাইরে ক্যামেরা বিশেষ বেরোতে পারেনি। ‘দিল চাহতা হ্যায়’ বা ‘জ়িন্দেগি...’র মতো কোনও রোড ট্রিপও নেই, যা ছবিকে অক্সিজেন জোগাবে। ইনস্টা, ইউটিউবের অ্যালগোরিদমের ইশারায় নাচতে থাকা ‘জেন নেক্সট’ অন্ধকারে, একাকিত্বে ডুবে যেতে যেতেও ফের ঘুরে দাঁড়ায় বন্ধুত্বের হাত ধরে। যেন ফোন রেখে দিলেই সব সমস্যা মিটে যাবে, এমন একটা ‘মুশকিল আসান’ গোছের সমাধানও দেওয়া হয়েছে ছবিতে।

Advertisement

ইনফ্লুয়েন্সারদের রঙিন জীবন পেতে চাওয়ার বাসনা, পেশাগত রেষারেষি, সামাজিক বৈষম্য থেকে জন্ম নেওয়া বিদ্বেষ, ব্যক্তিগত ক্ষোভ-যন্ত্রণা থেকে ট্রোলিংয়ের প্রবণতা... আমাদের আশপাশ থেকেই তুলে আনা হয়েছে বহু উদাহরণ। তবে নীলের অপমানিত হয়ে সেলেব্রিটিদের ছবিতে গিয়ে ট্রোল করে আসার দৃশ্যটি খানিক একপেশে। তার বান্ধবীর দিকে তাকানো পাশের বাড়ির কাকুকে কড়কে দেওয়ার দৃশ্যটিও তাই। বরং গল্পের একঘেয়ে চলনে খানিক টাটকা বাতাস আনে কল্কি কেঁকলার চরিত্রটি, সিমরন। সে ছবিতে আসে ইমাদের টিন্ডার ডেট হিসেবে। তবে ঠিক ডেট করতে নয়, টিন্ডারে আসক্ত মানুষটিকে কাছ থেকে ধরতেই এই ফোটোগ্রাফারের আবির্ভাব। ডিজিটাল যুগেও সিমরন পেনট্যাক্সে ছবি তোলে, প্রিন্ট করিয়ে সাজায় সারা ঘর। এই ‘ওল্ড স্কুল’ ইমাদকে দাঁড় করিয়ে দেয় নিজের সত্যির সামনে। সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী ইমাদের চরিত্রটি বিশ্বাসযোগ্য ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে ‘গেহরায়িয়াঁ’ ও ‘খো গয়ে...’র পরে এ বার তাঁকে অন্য ধরনের চরিত্রেও আশা করবেন দর্শক।

অনন্যা পাণ্ডে চমকপ্রদ কাজ করেছেন নিজের পরিসরে। ছেড়ে যাওয়া প্রেমিককে ঈর্ষার সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য যে উপায় ঠাউরেছিল অহনা, তার অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণ হওয়ার দৃশ্যটিতে অনন্যা খুব ভাল। শুধু ভাল দেখতে লাগা ছাড়াও তার অনেক কিছু করার জায়গা ছিল এ ছবিতে, যা কাজে লাগিয়েছেন তিনি। তবে মাটির সবচেয়ে কাছাকাছি আদর্শ গৌরবের চরিত্রটি। বিত্তশালী মহলে ঘোরাফেরা করা নীলের মধ্যবিত্ত মনটি খুব ভাল ভাবে তুলে ধরেছেন অভিনেতা।

ছবির গান তেমন দাগ কাটে না। সম্পাদনা ছবির গতিকে পড়তে দেয়নি মুহূর্তের জন্যও। সেট ডিজ়াইন এত বেশি সাজানো-গোছানো যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে চট করে একাত্ম বোধ করা মুশকিল।

ছবিতে একটি সংলাপ আছে— ‘মনে হবে যেন সকলের সঙ্গে কানেক্টেড, আসলে এর চেয়ে বেশি একা কোনও দিন ছিলাম না।’ ‘খো গয়ে...’ আসলে একা হয়ে যাওয়ার গল্প বলে। তরুণ প্রজন্মের এই পাহাড়প্রমাণ ‘সমস্যা’ আসলে যে বেশ ঠুনকো, তা-ও স্পষ্ট করা আছে ছবিতেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement