লুপ লপেটা
পরিচালক: আকাশ ভাটিয়া
অভিনয়: তাপসী, তাহির, দিব্যেন্দু, শ্রেয়া, রাজেন্দ্র
৬/১০
চেনা দৃশ্য: তাপসী পান্নু এই ছবিতেও রুদ্ধশ্বাসে দৌড়চ্ছেন। যেমনটা তাঁর শেষ রিলিজ় ‘রশ্মি রকেট’-এ দেখা গিয়েছিল।
অচেনা দৃশ্য: অসামান্য সেট, লাইট-ক্যামেরার বুদ্ধিদীপ্ত কাজ, যা খুব কম হিন্দি ছবিতে দেখা যায়।
নবাগত পরিচালক আকাশ ভাটিয়ার ‘লুপ লপেটা’ জার্মান ছবি ‘রান লোলা রান’-এর অফিশিয়াল হিন্দি রিমেক। মূল ছবিকে অনুসরণ করে এগোয় হিন্দি ছবি। তবে একাধিক সাব-প্লট এবং মূল গল্পের ‘রান’, হিন্দি ছবির নান্দনিকতাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। তাপসী পান্নু এই ছবির মুখ হলেও, পার্শ্বচরিত্ররা যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। প্রোডাকশন ডিজ়াইন, ক্যামেরা, লাইটের কাজ বিশেষ ভাবে নজর কাড়ে।
বাবার স্বপ্নপূরণ করতে ব্যর্থ সবিনা (তাপসী পান্নু) হাসপাতালের ছাদ থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে বাঁচিয়ে নেয় সত্যজিৎ (তাহির রাজ ভাসিন)। শুরু হয় প্রেমকাহিনি, একসঙ্গে থাকা। রেস্তরাঁয় কর্মরত সত্যের কাছ থেকে বেহাত হয়ে যায় তার মালিকের ৫০ লক্ষ টাকাভর্তি ব্যাগ। নাজেহাল প্রেমিককে বাঁচাতে সবিনার হাতে সময় ৫০ মিনিট!
মূল জার্মান ছবির পরিচালক টম টিকারের অনুসরণে এই ছবিতেও আকাশ দেখিয়েছেন টাইম ট্রাভেলের খেলা। সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে একই চরিত্রদের তিন দফায় তিন রকম কাজকর্ম বদলে দিতে পারে চূড়ান্ত পরিণতি। তবে মূল ছবির দৈর্ঘ্য এক ঘণ্টার একটু বেশি। ‘লুপ লপেটা’ চলেছে দু’ ঘণ্টা দশ মিনিট ধরে। তাই সংযোজন-বিয়োজন অনিবার্য। দু’-তিনটি সাব-প্লটের মধ্যে নজর কাড়ে একটিই। দু’ঘণ্টা ধরে ছবিটি দেখতে খারাপ লাগে না। তবে কোথাও গিয়ে যেন ছবির পূর্ণ আবেদন তৈরি হয় না!
বিজ্ঞাপন-নির্মাতা আকাশ সাইকিডেলিক লাইট, আলো-আঁধারি রংকে ক্যামেরার বিভিন্ন অ্যাঙ্গলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তৈরি করেছেন নতুন সিনেম্যাটিক ভাষা, যা ছবির অন্যতম ইউএসপি। চিত্রনাট্যের আরও একটু সাহায্য পেলে ছবির উৎকর্ষ বাড়তে পারত। কিন্তু সেই বিভাগেই পিছিয়ে পড়েছেন ছবির একাধিক চিত্রনাট্যকার। হাস্যরস বেশ কিছু দৃশ্যে তৈরি হলেও, কিছু দৃশ্য নিতান্তই সাদামাঠা। ছবির কিছু সংলাপ অবশ্য দাগ কাটে।
মূল ছবিতে লোলার চরিত্রাভিনেত্রীর চুল ছিল লাল রঙের। তাপসীর বোহো লুকে সেই চটক নেই, যা মুহূর্তে আগ্রহ তৈরি করতে পারে। চরিত্রটিও খানিক নিষ্প্রভ। তাহির এবং তাপসীর রসায়ন ঠিক জমেনি, যা ছবির ক্ষেত্রে অন্তরায়। সত্যের বসের চরিত্রে দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য এবং গয়নার দোকানের মালিকের চরিত্রে রাজেন্দ্র চাওলা জবরদস্ত। স্বল্প পরিসরে লাইমলাইট কেড়েছেন শ্রেয়া ধন্বন্তরী। ওটিটির সুবাদে তিনি নিজের কাজের পরিধি বাড়িয়ে চলেছেন।
নারিমান খাম্বাতা এবং রাহুল পাইসের আবহসঙ্গীত এবং টাইটেল ট্র্যাক ছবির সম্পদ। হালফিলের হিন্দি ছবিতে সামাজিক দায়বদ্ধতার ভার এত বেশি যে, প্রেক্ষাপট না বুঝেই কিছু বিষয় গুঁজে দেওয়া হয়। ছবিতে তাপসীর বাবার (কে সি শঙ্কর) সমকামিতার বিষয়টিও সে রকমই! স্টাইলাইজ়েশনে হিন্দি ছবি সাবলীল হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে ভাল। তবে চিত্রনাট্যের সঙ্গে আপস করে কার্যসিদ্ধি হবে না।