Auro Mein Kahan Dam Tha Review

নীরজ পাণ্ডে যে এমন ব্যতিক্রমী প্রেমের ছবি করতে পারেন, সেটাও একটা বিস্ময় হয়ে রইল

অজয় দেবগণ-তব্বু অনেক দিন পর আবার পর্দায় একসঙ্গে। তাঁদের পর্দার প্রেম কী জমল? জমলেও কতটা? ‘অরোঁ মে কহাঁ দম থা’ ছবিটি দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

অতীন্দ্র দানিয়াড়ী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৪ ১৮:৩৫
Share:

কেমন হল ‘অরোঁ মে কহাঁ দম থা’? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রেম কি চিরন্তন সত্য? না কি কিছু দিনের একটা সম্পর্ক? প্রেম কি শুধুই অবসর যাপন? না কি দেহসর্বস্ব বন্ধুত্ব? এই সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর আজও অধরা। উত্তর খুঁজতে গেলেও উঠে আসে বিতর্ক। প্রেমের গতিপ্রকৃতির এমনই বিতর্কিত ভাবনা নিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে বহু ছবি তৈরি হয়েছে, আগামী দিনেও হবে। অনেক ছবিতেই প্রেম সব সম্পর্ক, নিয়মকানুন, সমাজকে পেরিয়ে একটা অন্য রকম ভাবনা তৈরি করতে পেরেছে, যেখানে প্রেম চিরন্তন, চিরদিনের।

Advertisement

প্রেমের এমনই চরিত্র নিয়ে তৈরি হয়েছে নীরজ পাণ্ডে পরিচালিত ছবি ‘অরোঁ মে কহাঁ দম থা’। ছবিতে এক দম্পতির প্রেমের গল্প বলা হয়েছে, যে প্রেম সামাজিক ভাবে পরিণতি না পেলেও তেইশ বছর ধরে বেঁচে থাকে এবং আরও তেইশ, একশো বা হাজার বছর বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। সামাজিক টানাপড়েনে বিবাহবন্ধনে বাঁধা না পড়লেও সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়ে কৃষ্ণ ও বসুধার প্রেম এক গভীর মনস্তত্ত্বের কথা বলে, যেখানে সম্পর্ক সময়ের ওঠাপড়ায় ভেঙে যায় না, দু’জন প্রেমিক-প্রেমিকা আলাদা হয়ে যায় না। সব বাধা পেরিয়ে এই প্রেম দুই দশক বা তার বেশি সময় ধরে একই ভাবে সজীব, সচল থাকতে পারে।

ছবির গল্পে তেমন কোনও চমক নেই। এমন গল্প অনেকেই ভাবতে পারেন, লিখতেও পারেন। গল্পের চলনও বেশ সহজ-সরল, স্পষ্ট। প্রেমিক-প্রেমিকা কৃষ্ণ ও বসুধা দু’জন দু’জনকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। তাদের সম্পর্ক নিয়ে তাদের বাড়িতেও কোনও সমস্যা নেই। কৃষ্ণের বিদেশে চাকরির প্রস্তাব আসে, সে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ঠিক করে বিদেশ থেকে ফিরে এসে বিয়ে করবে। এ সময় একদিন রাতে বসুধাকে তিন জন ছেলে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে, যাদের মধ্যে দু’জন খুন হয়ে যায়। কে মারল ওদের? কে সেই আততায়ী? এখানেই ছবিটির মূল গল্পের প্রেক্ষাপট। যেখান থেকে গল্প একটু একটু করে শেষ দৃশ্যের দিকে এগিয়ে চলে, যেটি দেখার জন্য হলে বসে অপেক্ষা করতেই হবে।

Advertisement

‘অরোঁ মে কহাঁ দম থা’ ছবির একটি দৃশ্যে অজয় দেবগণ ও তব্বু। ছবি: সংগৃহীত।

একটি চার-পাঁচ লাইনের কাহিনিকে চিত্রনাট্যের সঠিক মোচড়ে কেমন ভাবে আকর্ষণীয় করে তোলা যায় সেটির অনবদ্য উদাহরণ হতে পারে এই ছবি। আজকের ডিজিটাল যুগে যেখানে সম্পর্কের মেয়াদ ক্রমশ কমছে, বিবাহবিচ্ছেদ বা নিত্যনতুন সম্পর্কের ভাঙন যেখানে একেবারেই স্বাভাবিক, সেখানে নীরজ পাণ্ডের এই ছবি অবশ্যই ব্যতিক্রমী চেষ্টা। তিনি এই ছবিতে প্রেমকে যে ভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন, সিনেমাটোগ্রাফি এবং গল্প বলার দক্ষতায় আলো-ছায়ার মধ্যে যে ভাবে এক সংলাপবিহীন প্রেমের অনুভবকে আঁকার চেষ্টা করেছেন, সেটা অবশ্যই একটা সাহসী পদক্ষেপ হয়ে থাকবে। দর্শক এই ছবি দেখতে দেখতে বিভিন্ন সময়ে যেন প্রেমের কবিতার দৃশ্যায়ন দেখতে পাবেন যেটি আজকের ভারতীয় চলচ্চিত্রে বিরল। ফ্ল্যাশব্যাকের আকর্ষণীয় চলন এবং সিনেমাটোগ্রাফির দক্ষতায় বেশ কিছু অসাধারণ দৃশ্য গল্পকে সমৃদ্ধ করে। গুমরে ওঠা প্রেমের অনুভতিকে পর্দায় তুলে ধরা সহজ কথা নয়, সেই দিক থেকে নীরজ পাণ্ডে অবশ্যই সফল।

ছবিতে কৃষ্ণের দুই বয়সের দু’টি প্রেম দেখানো হয়েছে। এক দিকে মাঝবয়সি কৃষ্ণ এবং অভিজিতের (জিমি শেরগিল) স্ত্রী বসুধার প্রেম আর অন্য দিকে যুবক কৃষ্ণ এবং তরুণী বসুধার প্রেম। অজয় দেবগণ এবং তব্বু ভারতীয় সিনেমায় এক সফল জুটি। অনেক ছবিতেই তাঁদের রসায়ন দর্শকের প্রশংসা পেয়েছে। এই ছবিতে দু’জনকেই অন্য রকম দু’টি চরিত্রে দেখা গেল, যেখানে পর্দায় তাঁরা নিজেদের ভেঙে একেবারেই ব্যতিক্রমী চরিত্র তৈরি করতে পেরেছেন। কৃষ্ণ ও বসুধার কম বয়সের চরিত্রে শান্তনু মহেশ্বরী ও সাই মঞ্জরেকর বেশ ভাল, বিশেষ করে শান্তনু মহেশ্বরীর অভিনয় মনে থেকে যায়। অন্যান্য চরিত্রাভিনেতাও তাঁদের কাজ বেশ যত্ন করেই করেছেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ছবির বেশ কিছু দৃশ্য, যেমন, দীপাবলি, দোল, সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গিয়ে আইসক্রিম খাওয়া, কৃষ্ণের জেল থেকে বেরোনো, জেলের ভিতর বৃষ্টির মধ্যে কৃষ্ণের মারপিট বা নির্দিষ্ট লোকেশনে বর্তমান কৃষ্ণ থেকে ফ্ল্যাশব্যাকে যুবক কৃষ্ণতে ফিরে যাওয়া খুবই আকর্ষণীয়। ছবির সঙ্গীত পরিচালনা প্রশংসার দাবি রাখে, বিশেষ করে ‘কিসি রোজ়’ গানটি এই ছবির অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে।

তবুও কিছু কথা থেকেই যায়। প্রেমের অনুভূতিকে পর্দায় নিয়ে আসার জন্য পরিচালক বেশ কিছু দৃশ্য দীর্ঘ করে ফেলেছেন। হয়তো তিনি ভেবেচিন্তেই করেছেন, তবুও কিছু কথা থেকেই যায়। প্রেমের অনুভূতিকে পর্দায় নিয়ে আসার জন্য কারণ প্রকৃত অনুভূতির নির্দিষ্ট কোনও সময় হয় না, কিন্তু এই ধরনের বেশ কিছু দৃশ্যকে অনায়াসে কমানো যেত। কুড়ি বছর আগের কৃষ্ণের চরিত্রে শান্তনু মহেশ্বরীকে শুরুতে একটু বেমানান লাগলেও, পরে দক্ষ অভিনয়ের গুণে মানিয়ে যান।

অজয় দেবগণকে এই ছবিতে একটা সময়ের পর খুব একই রকম মনে হয়, কারণ অভিজিৎ অর্থাৎ জিমি শেরগিলের সঙ্গে কথোপকথন ছাড়া তাঁর আর কিছুই করার থাকে না। এখানে তাঁর অভিনয়, ‘রি-অ্যাকশন’ বেশ ভাল, কিন্তু গল্পের জন্য ফ্ল্যাশব্যাকে তরুণ কৃষ্ণকে অনেকটা জায়গা দিতে হয়। তাই জেল থেকে বেরোনোর পর অজয় দেবগণের অভিনয়ের জায়গা কমতে থাকে। কৃষ্ণ ও অভিজিতের দীর্ঘ কথোপকথন একটু একঘেয়ে লাগে। তুলনামূলক ভাবে তব্বু এই ছবিতে বেশ সাবলীল হলেও তাঁর অভিনয়ের জায়গা তৈরি হল কোথায়? গল্পে মহেশ দেশাইয়ের চরিত্রটিকে আরোপিত মনে হয়, তাই ওই সময় গল্পে যুক্তির ধারটাও বোধহয় কমে যায়। বসুধার কৃষ্ণকে অভিজিতের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের কথা বলার দৃশ্যের জোরালো কারণ পাওয়া যায় না, সিনেমার খাতিরে এটা স্বাভাবিক হতেই পারে। এ সব কিছুকে সরিয়ে রেখে একটি কথা বলাই যায়, ‘অরোঁ মে কহাঁ দম থা’ ছবিটির দম আছে। এই মুহূর্তে প্রেমের ছবি হিসেবে এটি ব্যতিক্রমী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement