‘মেরি ক্রিসমাস’ ছবির একটি দৃশ্যে বিজয় সেতুপতি এবং ক্যাটরিনা কাইফ। ছবি: সংগৃহীত।
তিনি সুঅভিনেত্রী এমন কথা তাঁর অতি বড় সমর্থকও বলবেন না। কিন্তু ক্যাটরিনা কাইফকে দিয়ে কী সাবলীল ভাবে জটিলতা ভরা একটা চরিত্র করিয়ে নিয়েছেন পরিচালক শ্রীরাম রাঘবন। কোনও চরিত্রে যাঁদের কেউ বিবেচনার মধ্যে আনবে না, তাঁদেরই বারবার তুরুপের তাস করেন শ্রীরাম। ‘ওমকারা’য় ল্যাংড়া ত্যাগীর চরিত্র করার বছর দুয়েক আগেই রাঘবনের ‘এক হাসিনা থি’ ছবিতে খলচরিত্রে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সেফ আলি খান। ‘মেরি ক্রিসমাস’-এ প্রথমেই নজর টেনে নেন মুখ্য চরিত্রের দুই অভিনেতা— বিজয় সেতুপতি ও ক্যাটরিনা। প্রশ্ন জাগে, জুটি হিসেবে এঁদের আদৌ মানাবে? এখানেই লেখক-পরিচালকের মুনশিয়ানা।
আড়াই ঘণ্টার ছবির প্রথম এক ঘণ্টায় রহস্যময় কিছু ঘটে না। কিন্তু কী হয়, কী হয় ভাবটা রয়েছে। ছবিতে রহস্যের সুনামি নেই। বরং দিঘির টলটলে জলের গভীরে অজানার হাতছানি আছে। নিও নোয়া ঘরানায় দক্ষ রাঘবন ছবি জুড়ে আলাদা একটা জগৎ তৈরি করেছেন। ফরাসি কাহিনি ‘বার্ড ইন আ কেজ’ অবলম্বনে বম্বে শহরের এক রাতের গল্প বলেছেন পরিচালক। ক্রিসমাস ইভে ঘটনাচক্রে দেখা হয় মারিয়া (ক্যাটরিনা কাইফ) ও অ্যালবার্টের (বিজয় সেতুপতি)। মারিয়ার সঙ্গে তার বছর পাঁচেকের মেয়ে অ্যানি। প্রেমের খেলায় হেরে যাওয়া দুটো মানুষ সুখ-দুঃখের গল্পে মেতে ওঠে। স্বামীর সঙ্গে মারিয়ার হাসিখুশি ছবি দেখে অ্যালবার্ট প্রশ্ন করে। ‘‘কখনও কাউকে দেখেছ, দুঃখের দিনের ছবি সাজিয়ে রাখতে?’’ পাল্টা প্রশ্ন মারিয়ার।
রহস্যের মূলস্তরে ঢুকতে দর্শককে অপেক্ষা করতে হবে। মারিয়ার সুসজ্জিত ফ্ল্যাটের আরামকেদারায় আবিষ্কৃত হয় তার স্বামীর দেহ। খুন হোক বা সুইসাইড, ঘটনাটা ঘটল কখন? মারিয়া, অ্যালবার্ট তো কিছুক্ষণ আগেও সেখানেই ছিল... একাধিক প্রশ্ন দিঘির জলে আলোড়ন তোলে।
ছোট ছোট চরিত্র কাহিনিতে সূক্ষ্ম মোচড় আনে। অ্যালবার্ট, মারিয়ার মধ্যে তৃতীয় কোণ হিসেবে ঢুকে পড়ে রনি (সঞ্জয় কপূর)। দর্শকের মতো পুলিশও বুঝতে পারে ব্যাপারটা মোটেই সোজাসাপ্টা আত্মহত্যা নয়। কিন্তু সাজানো ঘটনার মধ্যে ছিদ্র খুঁজে পায় না। কিছু কিছু থ্রিলারে ঘটনার ঘনঘটা অত্যন্ত বেশি হয়। ‘মেরি ক্রিসমাস’ ধীর লয়ে চলতে থাকে। পুরনো বম্বের আমেজ, সত্তরের দশকের হিন্দি ছবির গান অন্য রকম জগৎ তৈরি করে। ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি, আবহসঙ্গীত সেই দুনিয়ার শরিক করে তোলে দর্শককে। ছন্দপতন হল ক্ল্যাইম্যাক্সে গিয়ে। যতটা গুছিয়ে শুরুটা করেছিলেন রাঘবন, শেষটা ততটা মসৃণ হল না। যে ভাবে সব সরঞ্জাম পুড়িয়ে ফেলা হল, তা মোটেই যুক্তিগ্রাহ্য নয়। আর অকুস্থলে পুলিশ নিদেনপক্ষে একটা পাহারাও বসাল না?
তবে সব ত্রুটি ম্লান করে দিতে পারেন বিজয় সেতুপতি। হিন্দিতে তাঁর আড়ষ্টতা বোঝা যায়। কিন্তু অভিনয়হীন অভিনয়ে তিনি এতটাই দড় যে, বাকি সব উহ্য থাকে। সেতুপতির চরিত্রের ছোট ছোট সংলাপের মধ্য দিয়ে কাহিনির হিউমরও সজাগ রেখেছেন পরিচালক। সেতুপতির মতো অভিনেতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে সম্ভ্রম আদায় করে নেন ক্যাটরিনা। ভাল পরিচালকের হাতে পড়লে তিনিও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন। তদন্তকারী অফিসারের চরিত্রে বিনয় পাঠক, প্রতিমা কাজ়মিও ভাল। ছোট চরিত্রে রাধিকা আপ্টে এবং সঞ্জয় কপূরকেও ভাল লাগে।
গড়পড়তা থ্রিলারের ভিড়ে এ কাহিনি স্বতন্ত্র। ‘মেরি ক্রিসমাস’-এ থ্রিলারের মলাটে প্রেম-কাহিনি বলেছেন পরিচালক। ছবির শেষে অ্যালবার্টের জন্য মন খারাপ হয়। সেখানেই পরিচালকের সার্থকতা। তাই এ ছবির শেষে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধা নেই!