Vidya Balan

জঙ্গলের রাজত্ব ও শার্দূলসুন্দরী

সদ্যপ্রয়াত এক লেখক-সাংবাদিকের বইয়ের এই নামটি যেন যথার্থ এ ছবির বিদ্যার জন্য।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২১ ০৭:৩৮
Share:

শেরনি
পরিচালক: অমিত মসুরকর
অভিনয়: বিদ্যা, নীরজ, ব্রিজেন্দ্র, বিজয়, শরৎ
৭/১০

Advertisement

বাঘিনি শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই মাথার ভিতরে যে অনুভূতি খেলে যায়, তা পর্দায় জীবন্ত করে তুললেন পরিচালক অমিত মসুরকর, তাঁর টিম এবং অবশ্যই বিদ্যা বালন। ‘নিউটন’-এর পরিচালক তাঁর পছন্দের জ়ঁরে আরও একবার তুলে এনেছেন টানটান এক জাঙ্গল ড্রামা। সেখানে আছে গ্রামীণ ভারত, তার রাজনীতি, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের বার্তা এবং ক্ষমতার দাঁড়িপাল্লায় আসীন এক নারীর জার্নি।

জঙ্গলে টেরিটরি মার্কিং দিয়ে বাঘের এলাকা ভাগ করা থাকে, তেমনই এ ছবিতেও নিজের জমি কামড়ে পড়ে থাকে ফরেস্ট অফিসার বিদ্যা ভিনসেন্ট (বিদ্যা বালন)। মধ্যপ্রদেশের এক ফরেস্ট রেঞ্জে যোগ দিয়েছে সে। ফিল্ডে কাজ করার ইচ্ছে তার ফিল্ডে পা রাখার মাসদুয়েকের মধ্যেই উবে যায়। অযোগ্য বস, রাজনীতির খেয়োখেয়ি, রক্তের স্বাদ পেয়ে যাওয়া প্রাইভেট শিকারি এবং খ্যাতির আড়ালে লুকিয়ে থাকা আপসকামী সিনিয়রদের মাঝে বিদ্যা একা। এ দিকে জঙ্গলে ছাগল-মোষ চরাতে গিয়ে একের পর এক গ্রামবাসীর প্রাণ যায়। বাঘিনির গতিবিধি মেপে তাকে পার্শ্ববর্তী ন্যাশনাল পার্কে ছেড়ে আসাই বন বিভাগের লক্ষ্য। জঙ্গল ও জানোয়ারদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে খেপিয়ে তোলার কাজে মদত দেয় স্থানীয় রাজনীতিকরা। অন্য দিকে, প্রাণিবিদ্যার এক অধ্যাপকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সহাবস্থানের বার্তা দিতে থাকে বিদ্যা। উপরমহল থেকে চাপ, মহিলা অফিসার হওয়ায় কথা শোনা চলতেই থাকে। তবে এখানে বিদ্যার লড়াই শুধু পুরুষ বনাম নারীতে আবদ্ধ রাখা হয়নি। তার কাজ ও পরিবারের ব্যালান্স দেখাতে গিয়ে আবেগের আতিশয্যও এনে ফেলেননি আস্থা টিকু, তাঁর লেখা স্ক্রিনপ্লেতে। আর সেখানেই মুখর হয়ে উঠেছে বিদ্যা ভিনসেন্টের নিঃশব্দ গর্জন।

Advertisement

এ ছবিতে বিদ্যাকে দেখতে দেখতে মনে পড়ে যাচ্ছিল ‘শার্দূলসুন্দরী’ নামটি। সদ্যপ্রয়াত এক লেখক-সাংবাদিকের বইয়ের এই নামটি যেন যথার্থ এ ছবির বিদ্যার জন্য। চেহারা, সাজগোজের ঊর্ধ্বে উঠে শুধুমাত্র অভিনয় দিয়ে কী করে দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখতে হয়, তাঁর মতো অভিনেত্রী জানেন। মমতা, স্নেহ, আগলে রাখার উচ্চকিত প্রকাশ নয়, বরং একটা ছোট্ট বিড়ালছানাকে পোষ মানানোর মধ্য দিয়েই বিদ্যার ভিতরটা পরিষ্কার দেখতে পান দর্শক। প্রতি মুহূর্তে হেরে যাওয়া, আবার উঠে দাঁড়ানো, ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতির সামাল দেওয়া, পরিবারে ব্যালান্স করে চলা... ঠিক যেন পাশের বাড়ির মেয়েটির মতোই সব পরীক্ষায় নিশ্চুপে উতরে যায় বিদ্যা। আর এই সব ক’টি ভূমিকায় ‘ফ্লায়িং কালার্সে’ পাশ করে যান অভিনেত্রী বিদ্যাও।

নীরজ কবির উপস্থিতি এ ছবিতে সংক্ষিপ্ত কিন্তু জোরালো। তবে বিদ্যার স্বামীর চরিত্রে তেমন ভাল লাগল না মুকুল চড্ডাকে। তাঁর সঙ্গে বিদ্যার রসায়ন ঠিক জমেনি। শিকারির চরিত্রে শরৎ সাক্সেনার অভিনয়ও একটু নাটকীয়। ব্রিজেন্দ্র কালা তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ম্যানারিজ়মে ধরা দিয়েছেন এ ছবিতেও। অধ্যাপকের চরিত্রে বিজয় রাজ, পিকে সিংহের চরিত্রে সত্যকাম আনন্দকে ভাল লাগে।

অজস্র ড্রোন শটে মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলকে মোহময় করে তুলেছে রাকেশ হরিদাসের ক্যামেরা। পাগ মার্ক দেখে ট্র্যাকিং-সহ বনবিভাগের বিশদ কার্যপদ্ধতি নিপুণ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। উচ্চমানের গ্রাফিক্সের কাজ পর্দায় বাঘ আসার দৃশ্যগুলিতে চোনা ফেলেনি এতটুকু।

ওটিটি-তে ছবি দেখার শেষেই মোবাইলে নোটিফিকেশন— মধ্যপ্রদেশের উমারিয়া ফরেস্ট ডিভিশনের জাতীয় সড়কের উপরে পাওয়া গিয়েছে সাত মাসের ব্যাঘ্রশাবকের মৃতদেহ। ঝলকে মনে পড়ে, বিদ্যার ইস্তফাপত্র ছিঁড়ে ফেলার দৃশ্যটি। আর তার দিকে জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে থাকা বাঘের দুই ছানা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement