কী যুদ্ধু কী যুদ্ধু! হার্টবিট যেন সব মাপকাঠি ছাড়িয়ে গেল। আসলে এটাই হওয়ার ছিল। তাই তো এত অপেক্ষা, যা এখনও সাঙ্গ হয়নি। নেটফ্লিক্স সিরিজ় ‘মানি হাইস্ট’-এর অন্তিম পর্ব দুটো ভাগে ভাগ করেছেন নির্মাতারা। নিখাদ ব্যবসায়িক কৌশল। যত দিন সিরিজ় টানা যায়, তত বেশি লাভ।
চতুর্থ সিজ়ন শেষ হয়েছিল একেবারে মোক্ষম জায়গায়। অ্যালিসিয়া সিয়েরার (নাজওয়া নিমরি) গান পয়েন্টে প্রফেসর (আলভারো মর্তে)। পঞ্চম পর্বের শুরু সেখান থেকেই। খেলা যে এত সহজে শেষ হবে না, তা জানা কথা। তা বলে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা কব্জা করে ফেলবে প্রফেসরের মতো ধুরন্ধরকে? ক্লাইম্যাক্স পর্বে একাধিক মোচড় থাকবে স্বাভাবিক, কিন্তু প্লটে টুইস্ট আনতে গিয়ে নির্মাতারা গল্পের গরুকে গাছে চড়িয়েছেন। যদিও তা প্রথম বার নয়। চারটে সিজ়নে অনেক বারই এমন ঘটনা ঘটেছে, যা টেনিদার কল্পনাকেও হার মানায়!
কিন্তু তাতে কী? শুরু থেকেই তো আমরা অবিশ্বাস্য সব কিছুকে বিশ্বাস করে চলেছি। কন মুভি বা হাইস্ট ড্রামার ওটাই ম্যাজিক। কাজটা অনৈতিক জেনেও, চরিত্রদের প্রতি প্রবল সমর্থন। আইনের রক্ষক যারা, তাদেরও সব পদক্ষেপ কি নৈতিক? সার্ভাইভাল ড্রামায় আলো-অন্ধকার বারেবারেই মিশে যায়।
এ বারের কাহিনি খানিক এ রকম— অ্যালিসিয়ার ফাঁদে প্রফেসর আটকে। অন্য দিকে মিউজ়িয়ামের ভিতরে সেনা প্রবেশের প্রস্তুতি চলছে। অসম একটা লড়াইয়ে নামতে হয় টোকিয়ো, ডেনভার, লিসবনদের। পঞ্চম সিজ়নে ধুন্ধুমার অ্যাকশন হবে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু কাহিনির আরও পরত খোলা বাকি ছিল। অ্যাকশন নির্ভর এপিসোড না করে, ব্যাকস্টোরির অবতারণা করেছেন নির্মাতারা। যে কাহিনিগুলো চরিত্রদের মানসিক ওঠা-পড়ায় সঙ্গত করেছে। কেন টোকিয়োর (উর্সুলা করবেরো) অতীতের কাহিনি তুলে ধরা হল, তা পর্বের শেষে বোঝা যায়। এ-ও বলা যায়, একটা অধ্যায় শেষ হল। বার্লিনের (পেড্রো আলন্সো) মগজাস্ত্রের তারিফ হয়তো ফেলুদাও করত, যার শেষ তাসের সূত্র এই পর্বে দেওয়া রয়েছে। সিজ়ন টু-তেই বার্লিনের চরিত্রটির মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু বাকি সিরিজ় জুড়ে চরিত্রের রেশ ছড়িয়ে আছে।
এই সিজ়নে আলাদা করে উল্লেখ করার মতো কোনও চরিত্র যোগ হয়নি। তবে বার্লিনের ছেলে রাফেলের আগমন যে এমনি এমনি হয়নি, তা স্পষ্ট।
সিরিজ়ের শিল্পীদের অভিনয় নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। আর্তুরোকে দেখে গা জ্বলে যায়, কারণ সে ওই ঘিনঘিনে চরিত্রটা দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছে। টোকিয়োর ইউএসপি তার স্বতঃস্ফূর্ততা। প্রফেসর তো চোখ দিয়েই অর্ধেক যুদ্ধ জিতে নিতে পারে।
শিক্ষক দিবসের ঠিক দু’দিন আগেই রিলিজ় করেছে ‘মানি হাইস্ট’। অনেকে প্রফেসরের ছবি দিয়ে ‘হ্যাপি টিচার্স ডে’ লিখে পোস্ট করেছেন। কারণ সিরিজ়ের ভক্তদের কাছে প্রফেসর নিছক অ্যান্টিহিরো নয়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস, অন্তিম মুহূর্তেও বন্ধুর হাত না ছাড়া, সর্বোপরি একটা জীবনে বহুবার বেঁচে নেওয়া— সবটাই তো নতুন করে শিখিয়েছে টোকিয়োর গার্ডিয়ান এঞ্জেল।
‘গেম অব থ্রোনস’-এর পরে এতটা উন্মাদনা আর কোনও সিরিজ় নিয়ে দেখা যায়নি। ‘জিওটি’র মতো জাঁকজমকও নেই এই স্প্যানিশ সিরিজ়ের। আসলে হাইস্ট ড্রামার আড়ালে এটি আদ্যন্ত বন্ধুত্ব আর প্রেমের গল্প। বিনোদনের পরিসরে যার কোনও বিকল্প নেই।
‘জিওটি’র শেষ সিজ়ন অতি প্রত্যাশার চাপ সামলাতে পারেনি। ‘মানি হাইস্ট’-এর পাঁচ নম্বর সিজ়নের প্রথম পর্ব এখনও পর্যন্ত মান ধরে রেখেছে। অপেক্ষা ডিসেম্বরে অন্তিম পর্বের। তবে অ্যালিসিয়ার ডেলিভারি প্রফেসরের হাত দিয়ে করানোটা কি খুব জরুরি ছিল? এই ক্রেডিটটা অন্তত আমাদের ‘র্যাঞ্চো’র থাকত।