Review of Documentary Series The Romantics

ক্যামেরার মুখোমুখি আদিত্য চোপড়া! কেমন হল ‘দ্য রোম্যান্টিক্স’? জানুন আনন্দবাজার অনলাইনে

যশ চোপড়ার উত্থান থেকে আদিত্য চোপড়ার হাতে ক্ষমতার হস্তান্তর। ‘যশরাজ ফিল্মস’-এর ৫০ বছরের যাত্রাপথ। তবে সিরিজ়ে সাফল্যের আড়ালে ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৫৮
Share:

বলিউডে ‘যশরাজ ফিল্মস’-এর সুদীর্ঘ যাত্রাপথ উঠে এসেছে এই সিরিজ়ে। ছবি: সংগৃহীত।

বলিউডের তরুণ অভিনেতা থেকে শুরু করে দাপুটে পরিচালক, প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকে ‘যশরাজ ফিল্মস’-এর ছবির অংশ হওয়া। কারণ এই প্রযোজনা সংস্থাই তো ইন্ডাস্ট্রির রাজা। শুধু ছবি নয়, তারা তারকা তৈরি করে। যাঁর মাথায় যশরাজের হাত, প্রচারের আলো তাঁর নিত্যসঙ্গী। যশ চোপড়ার হাতে তৈরি সংস্থার সোনালি সফর এবং সংস্থার সঙ্গেই বিগত পাঁচ দশকে বদলে যাওয়া হিন্দি ছবির ক্রমবিবর্তনকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে নেটফ্লিক্স-এর সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র সিরিজ় ‘দ্য রোম্যান্টিক্স’। পরিচালনায় ‘ইন্ডিয়ান ম্যাচমেকিং’ খ্যাত স্মৃতি মুন্ধরা।

Advertisement

এক ঘণ্টার পর্ব নিয়ে মোট চার পর্বের সিরিজ়। প্রায় ৪০ জন বলিউড তারকার সাক্ষাৎকার! মূলত তাঁদের চোখ দিয়েই যশ চোপড়া এবং ‘যশরাজ ফিল্মস’-এর লেগাসির উদ্‌যাপন। যতটা কঠিন কাজ, সিরিজ়ে বিষয়গুলোকে ততটাই সহজ ভাবে ধরার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। তাই সিনেপ্রমী দর্শকের কাছে এই সিরিজ় দেখতে বসে নিজেকে ফেলে আসা সময়ের ট্রেনের কামরার যাত্রী মনে হওয়াটা অসম্ভব নয়।

১৯৭৩ সালে ‘দাগ’ ছবির মাধ্যমে ‘যশরাজ ফিল্মস’-এর পথ চলা শুরু। ছবি: সংগৃহীত।

সিরিজ় শুরু হয় যশ চোপড়ার সিনেমায় আসা দিয়ে। দাদা বি আর চোপড়ার অধীনে ছবি পরিচালনায় হাতেখড়ি। পামেলার সঙ্গে যশের বিয়ে এবং দুই ভাইয়ের মতানৈক্যের জেরে যশের নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থার সিদ্ধান্ত। ফলাফল, ১৯৭৩ সালে ‘দাগ’ ছবির মাধ্যমে ‘যশরাজ ফিল্মস’-এর পথ চলা শুরু। একে একে আসে ‘কভি কভি’, ‘সিলসিলা’ এবং পরবর্তী সময়ে ‘চাঁদনী’র মতো ছবির সাফল্যের কথা।

Advertisement

সিরিজ়ের পরতে পরতে রয়েছে দর্শকের পরিচিত সিনেমা তৈরির নেপথ্য অজানা কাহিনি। তার সঙ্গেই রয়েছে অজস্র দুষ্প্রাপ্য ছবি এবং ভিডিয়ো ফুটেজ। যেমন ছেলেবেলায় ব্যক্তিগত খাতায় যশের বড় ছেলে আদিত্য চোপড়ার (পরবর্তী কালে বলিউডে যিনি ‘আদি’ নামে পরিচিত হবেন) সিনেমার বক্স অফিসের হিসেবনিকেশ লিখে রাখা। ছোটবেলায় জন্মদিনের পার্টিতে নাচের প্রতিযোগিতায় আদি নাকি সবসময় প্রথম হতেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকতেন হৃতিক রোশন! অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, সলমন খান, আমির খান থেকে শুরু করে মাধুরী দীক্ষিত, ঋষি কপূর, নীতু কপূর, কাজল, সইফ আলি খান, অভিষেক বচ্চন, হৃতিক রোশন, রণবীর সিংহ, রণবীর কপূর, ক্যাটরিনা কইফের মতো তারকাদের বক্তব্য সিরিজ়কে করেছে সমৃদ্ধ। অন্য দিকে, রয়েছে কর্ণ জোহর, পামেলা চোপড়ার মতো মানুষদের সাক্ষাৎকার, যাঁরা যশ চোপড়ার দর্শনকে আরও ভাল ভাবে বুঝতে সাহায্য করেছেন।

এই প্রথম ক্যামেরার সামনে সাক্ষাৎকার দিলেন আদিত্য চোপড়া। ছবি: সংগৃহীত।

তবে এই সিরিজ়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ আদিত্য চোপড়ার সাক্ষাৎকার! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। বিগত ২০ বছর ধরে যে মানুষটা সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে, যাঁকে মায়ানগরীতে ‘ঘোস্ট’ বলা হয়— তাঁর অনর্গল আত্মবীক্ষণ পর্দা থেকে চোখ সরাতে দেয় না। বুঝতে সাহায্য করে কেন বলিউডে ‘যশরাজ’ই রাজা। আরও একটা উল্লেখযোগ্য বিষয়, সিরিজ়ে আদির ভাই উদয় চোপড়ার উপস্থিতি। ‘স্বজনপোষণ’ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আদি সরাসরি উদয়ের উদাহরণ টেনে এনেছেন। বলেছেন, দিনের শেষে প্রতিভাই শেষ কথা বলে। তারকা তৈরি করেন দর্শক। অবশ্যই সাহসী পদক্ষেপ। পাশাপাশি এসেছে বাবার সঙ্গে আদির মতো বিরোধেরও প্রসঙ্গও।

এই সিরিজ় অবশ্যই যশরাজের দীর্ঘ যাত্রাপথের ‘উদ্‌যাপন’। প্রায় ৩ বছর ধরে নির্মাণ করা হয়েছে। ‘বেফিকরে’র ব্যর্থতাকে আদি স্বীকার করলেও, অদ্ভুত ভাবে সংস্থার সাফল্যের ভিড়ে ব্যর্থতার দীর্ঘ তালিকাকে জায়গা দেওয়া হয়নি। ‘ডর’, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া...’, ‘মহব্বতেঁ’, ‘ধুম’, ‘চক দে ইন্ডিয়া’, ‘বান্টি অউর বাবলি’, ‘রব নে বনাদি জোড়ি’ বা যশ চোপড়া পরিচালিত শেষ ছবি ‘যব তক হ্যায় জান’-এর কথা বলা হয়েছে ফলাও করে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে সংস্থার ব্যর্থ ছবির প্রসঙ্গই বাদ রাখা হল। ‘ঠগ্‌স অব হিন্দোস্তান’, ‘জয়েশভাই জোরদার’,‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’ বা ‘শমসেরা’র মতো ছবি কেন নেই? আবার ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘সাথিয়া’ বা ‘বীর জ়ারা’র মতো ব্লকবাস্টার ছবিও যেন রয়ে গিয়েছে ব্রাত্য। তারকাদের তারকা হয়ে ওঠার পিছনে যশরাজের অবদানকে তুলে ধরে এই সিরিজ়। প্রীতি জ়িন্টা এবং ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনকে এক সময় যশরাজের মুখ বলা হতো। কিন্তু তাঁরাও এই সিরিজ়ে অনুপস্থিত। নেই হালের বাণী কপূরও। আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে বহু নায়িকারই পরবর্তী সময়ে নানা বিষয়ে মতের অমিল হয়েছে বলে ইন্ডাস্ট্রির গুঞ্জন। হয়তো সেই কারণেই সন্তর্পণে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁদের।

সত্তরের দশকের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ থেকে ছবিতে নায়কের টার্টল কলার সোয়েটার কিংবা নায়িকার পরনে শিফন শাড়ি এবং অবশ্যই সুইজ়ারল্যান্ড— ভারতীয় সিনেমায় ‘রোম্যান্স’-এর সংজ্ঞা বদলে দিয়েছিলেন যশ চোপড়া। সেই উত্তরাধিকার কাঁধে নিয়ে আদিত্যর হাতে সিনেমা শিল্পে যশরাজের আধিপত্যকে বুঝতে ‘দ্য রোম্যান্টিক্স’ সিনেপ্রেমীদের হিন্দি ছবির স্মৃতি রোমন্থনে আবশ্যিক সহায়ক গ্রন্থ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement