Dabba Cartel review

চিত্রনাট্য দুর্বল, তা সত্ত্বেও মনে থাকে অভিনয়, কেমন হল ‘ডাব্বা কার্টেল’?

সিরিজ় দেখতে বসে মনে হতে পারে, বাড়িতে এবং সেই সঙ্গে সমাজে ব্রাত্য হয়ে থাকা মহিলারা বুঝি ক্ষমতার খেলায় নেমেছেন। কিন্তু তা নয়। এই সিরিজ় ক্ষমতা প্রদর্শনের থেকে অনেক বেশি করে বেঁচে থাকার চেষ্টার কথা বলে।

Advertisement

দেবত্রী ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫৩
Share:
Review of Dabba Cartel web series starring Shabana Azmi Jyotika and others

‘ডাব্বা কার্টেল’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে (বাঁ দিক থেকে) জ্যোতিকা, অঞ্জলি আনন্দ, শালিনী পাণ্ডে এবং শাবানা আজ়মি। ছবি: সংগৃহীত।

প্রতিটি শহরের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা দিয়ে সহজেই সেই জনপদকে চিহ্নিত করা যায়। সেই রকমই মুম্বই শহরের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য ‘ডাব্বা’ বা ‘টিফিন’। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বহু মানুষ, বিশেষ করে গৃহিণীরা এই ব্যবসা চালান। বাড়িতে রান্না করে, স্টিলের টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে, তাঁরা তাঁদের গ্রাহকদের কাছে বাড়ির খাবার পৌঁছে দেন দৈনিক। শহরে যাঁরা একা থাকেন, লাঞ্চে বা সারা দিন অফিস করার পর ক্লান্ত শরীরে ফিরে এসে বাড়ির খাবারের স্বাদ পেতে চাইলে এই ডাব্বাই তাদের ভরসা। তাই গোটা শহরে এই ব্যবসার রমরমা।

Advertisement

সাধারণ গৃহিণী রাজি (শালিনী পাণ্ডে), এ রকমই এক ডাব্বার ব্যবসা চালায় বাড়ি থেকে। স্বামী হরি সারা দিন অফিসে ব্যস্ত, বাড়িতে শাশুড়ি ছাড়া আর কেউ নেই। এতে সময়ও কাটে আর দু’পয়সা ঘরেও আসে। এই ব্যবসায় রাজির সঙ্গী বাড়ির কাজের মেয়ে তথা বন্ধু মালা (নিমিশা সাজায়ান)। শান্তিতেই চলছিল ব্যবসা, কিন্তু বন্ধুর ব্ল্যাকমেলের চক্করে পড়ে মালাকে এই ডাব্বার আড়ালে শুরু করতে হল গাঁজার পাচার। আর সেখান থেকেই ঘটনাচক্রে তা হয়ে উঠল ‘এমডিএম’ বা ড্রাগ পাচারের মাধ্যম।

Review of Dabba Cartel web series starring Shabana Azmi Jyotika and others

‘ডাব্বা কার্টেল’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে (বাঁ দিকে) গজরাজ রাও এবং সাই তমহনকর। ছবি: সংগৃহীত।

হিতেশ ভাটিয়া পরিচালিত ‘ডাব্বা কার্টেল’ দেখতে বসে ‘নারকোজ়’-এর কথা যত না মনে পড়বে, তার চেয়ে বেশি মনে হবে ‘ব্রেকিং ব্যাড’-এর কথা। রাজির ডাব্বা ব্যবসায় একে একে যোগ দেয় শাহিদা (অঞ্জলি আনন্দ), বরুণা (জ্যোতিকা) আর রাজির শাশুড়ি শীলা (শাবানা আজ়মি)। শীলা এক সময় নিজেই এই পাচারকাণ্ডে যুক্ত ছিল। বহু দিন আগে সে সব ছেড়ে ছেলেকে মানুষ করে, তার বিয়ে দিয়ে সংসারে ফিরে এসেছিল সে। কিন্তু ভবিতব্য তাকে আবার টেনে আনল সেই পাচার ব্যবসায়। বিভিন্ন সামাজিক স্তরের পাঁচ মহিলা, যাদের জীবন কেবল সাধারণের কোটায় এত দিন আবদ্ধ ছিল, তা বদলে গেল কয়েক মুহূর্তে।

Advertisement

পরিচালক এখানে ‘ভিভা লাইফ’ নামের এক ফারমাসিউটিক্যাল কোম্পানিকে যথাযথ ভাবে এই মাদক পাচারের আনুষঙ্গিক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। দেখতে দেখতে মনে হতে পারে, বাড়িতে এবং সেই সঙ্গে সমাজে ব্রাত্য হয়ে থাকা মহিলারা বুঝি ক্ষমতার খেলায় নেমেছেন। কিন্তু তা নয়। এই সিরিজ় ক্ষমতা প্রদর্শনের থেকে অনেক বেশি করে বেঁচে থাকার চেষ্টার কথা বলে। আসলে ছাপোষা বাড়ির মেয়েরা ডাব্বায় খাবারের আড়ালে নেশার দ্রব্য পাচার করছে, এই সন্দেহ চট করে মানুষের হয় না। তাই তাদের হাত দিয়ে ব্যবসা চালানো সহজ আর নিরাপদ।

‘ডাব্বা কার্টেল’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে যিশু সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

এই সিরিজ়ে দু’টি গল্প চলে সমান্তরালে। অন্য গল্পটির মূলে রয়েছে চণ্ডীগড়ে এক মহিলার মৃত্যু, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ওষুধ কোম্পানির কারচুপি। সেই তদন্তের কেন্দ্রে রয়েছে পাঠক (গজরাজ রাও) আর পুলিশ ইন্সপেক্টর প্রীতি (সাই তামহাঙ্কর)।

সিরিজ়ের বেশ কিছু মুহূর্ত বেশ টানটান আর সাসপেন্স-জড়িত। তবে এক সিরিজ়ে একাধিক প্লট ও সাবপ্লট ঢোকাতে গিয়ে শিবানী আখতার, বিষ্ণু মেনন, গৌরব কপূর বা ভাবনা খের চিত্রনাট্যের অনেক জায়গায় খেই হারিয়েছেন, চিত্রনাট্যে শৈথিল্য এসেছে। এর ফলে তৈরি হয়েছে বিস্তর ফাঁকফোকর। সব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সমান মনোযোগ পায়নি। তবে, এই সিরিজ়ে লিঙ্গবৈষম্যের দিকটি দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক, বিশেষ করে বরুণা আর তার স্বামী শঙ্করের (যিশু সেনগুপ্ত) সম্পর্কের নিত্য টানাপড়েনে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

এই সিরিজ়ে দেখতে ভাল লাগে অভিনয়। শাবানা আজ়মির চরিত্রে খানিক ‘গডমাদার’-এর ছোঁয়া মিলবে। যারা ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’ দেখেছেন, তাঁরা জানেন নিমিশা সাজায়নের অভিনয় দক্ষতার কথা। এখানে মালার চরিত্রে তাঁর অভিনয় সবচেয়ে জোরালো। জ্যোতিকা, শালিনী পাণ্ডে ও অঞ্জলি আনন্দও যথাযথ। গজরাজ রাওয়ের অভিনয় এই সিরিজ়ে অনেকটা মনোযোগ ধরে রাখে। যিশু সেনগুপ্ত, সুনীল গ্রোভার আর লিলেট দুবেকেও বেশ ভাল লাগে। ঈশিত নন্দীর ক্যামেরায় বম্বে ও ঠাণের নির্যাস সুন্দর ফুটে উঠেছে। গৌরব রায়না আর তরন মারওয়ার সুরও সিরিজ়ের সঙ্গে দিব্যি খাপ খেয়ে যায়।

অসম চিত্রনাট্য হলেও, সাত এপিসোডের এই সিরিজ় দেখা যায় শুধুমাত্র জোরালো অভিনয়ের জন্য। যেখানে এসে শেষ হচ্ছে সিরিজ়, তাতে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে দ্বিতীয় কিস্তি আসতে চলেছে শিগগির। সেখানে গল্পের দিকে মনোযোগ দিলে, ‘ডাব্বা কার্টেল’ আরও মনোগ্রাহী হয়ে উঠবে, এ কথা নিশ্চিত। সিরিজ়টি দেখা যাচ্ছে নেটফ্লিক্সে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement