Puro Puri Eken review

পুরীর প্রেক্ষাপটে পর পর খুন! কেমন দাঁড়াল একেনবাবুর নতুন রহস্য সমাধান?

বেড়াতে গিয়ে রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়া একেনের কাছে নতুন কোনও ঘটনা নয়। এ বারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

Advertisement

দেবত্রী ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫৬
Share:
Review of Bengali web series Puro Puri Eken starring Anirban Chakrabarti

‘পুরো পুরী একেন’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে (বাঁ দিক থেকে) বিশ্বজিৎ, অনির্বাণ, সুহোত্র এবং সোমক। ছবি: সংগৃহীত।

বার বার আট বার। অর্থাৎ এই নিয়ে অষ্টম বার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ফিরলেন ‘একেনবাবু’। সুজন দাশগুপ্তের সৃষ্টি এই খানিক পাগলাটে, খানিক আপনভোলা, ভীষণ পেটুক একেনবাবুকে দেখে চট করে কারও গোয়েন্দা বলে মনে হওয়ার উপায় নেই। তবে যাঁরা একেনবাবুকে আগে পর্দায় দেখেছেন বা বইয়ের পাতা থেকে জেনেছেন, তাঁরা আলবাত পরিচয় পেয়েছেন তাঁর ক্ষুরধার বুদ্ধির। জটিল থেকে জটিলতর রহস্যের সমাধান করে ফেলেন তিনি হাসতে হাসতে।

Advertisement

অষ্টম সিজ়নে একেনবাবু পাড়ি দিয়েছেন পুরীতে। জীবনে প্রথম বার পুরী ভ্রমণের আনন্দে উৎফুল্ল একেন। সঙ্গে তাঁর দুই সঙ্গীর এক জন, বাপি। যদিও একেন যাচ্ছেন পুরীর সমুদ্র উপভোগ করবেন বলে, আর ওড়িশার দারুণ সব খাবার দিয়ে পেটপুজো করবেন বলে, কিন্তু তাঁকে যিনি ঘটা করে ডেকে পাঠিয়েছেন, তাঁর উদ্দেশ্য কিন্তু অন্য।

বেড়াতে গিয়ে রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়া একেনের কাছে নতুন কোনও ঘটনা নয়। এমনকি, এ রকম কিছু হলে তাঁর সঙ্গী বাপি আর প্রমথও কম আপ্লুত হন না। এক কথাকলি নৃত্যশিল্পী পারমিতা ঘন ঘন মৃত্যুর হুমকি পাচ্ছেন ফোনে। আর তাতেই তিনি ও তাঁর স্বামী অভীক যথেষ্ট বিচলিত। এই রহস্য সমাধান করার জন্যই খানিক বেড়ানোর লোভ দেখিয়ে একেনকে পুরীতে ডেকে আনেন তাঁর খোকামামা। তদন্ত শুরু করতে না করতেই রহস্য হয় ঘনীভূত। ঘটতে থাকে একের পর এক খুন। ওড়িশায় সপ্তাহব্যাপী নৃত্য-উৎসব হয়ে ওঠে খুনের প্রেক্ষাপট। একে একে মারা যেতে থাকেন পারমিতার প্রিয় বন্ধু, তাঁর গুরু ও তাঁর মামাও। এমনকি, পারমিতাকেও শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে অক্ষম থেকে যান একেন। তবু তিনি কি পারবেন পুরীতে তাঁর সমাধানের সাফল্যের ছাপ রেখে যেতে?

Advertisement

‘পুরো পুরী একেন’ ওয়েব সিরিজ়ে একটি দৃশ্যে (বাঁ দিকে) রাহুল এবং রাজনন্দিনী। ছবি: সংগৃহীত।

পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এই নিয়ে চতুর্থ বার ‘একেন সিরিজ়’ পরিচালনার দায়িত্বে। এই গল্পে যথেষ্ট সাসপেন্স রয়েছে। শেষের দিকে গিয়ে খুনি কে, সেটা আন্দাজ করে নিতে পারলেও তাতে রসভঙ্গ ঘটে না। একেন চরিত্রটি শুরু থেকেই জনপ্রিয় হয়েছে অনির্বাণ চক্রবর্তীর হাত ধরে। আট নম্বর সিজ়নে এসে মনে হয়, চরিত্রের সঙ্গে অনির্বাণ ওতপ্রোত জড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁর অভিনয় দিয়েই বেশির ভাগ মানুষ একেনকে চিনেছেন। তাঁর অদ্ভুত হাবভাব, এর-ওর প্লেট থেকে খাবার কেড়ে খেয়ে নেওয়া, ভুলভাল প্রবাদ বলা— সবটাই অনির্বাণের হাতের মুঠোয়। সেই সঙ্গে তাঁর দুই সঙ্গী বাপি আর প্রমথ তো রয়েছেনই।

এই বারে সিরিজ়ের শুরুতেই বাপি (সুহোত্র মুখোপাধ্যায়)-র দেখা মিললেও প্রমথ (সোমক ঘোষ)-র প্রবেশ সামান্য দেরিতে। তবে সুহোত্র আর অনির্বাণের জমাটি রসায়ন ‘ট্রায়ো’কে খুব একটা মিস্ করতে দেবে না। অবশ্য প্রমথের এই সিরিজ়ে প্রবেশটা চিত্রনাট্যে বেশ খাপছাড়া লাগে। কোনও রকম যোগাযোগ ছাড়াই হঠাৎ করে মাঝরাস্তায় প্রমথের গাড়ির সঙ্গে একেন আর বাপির দেখা হয়ে যাওয়াটা বেশ জোলো লাগে। এই দিকটায় পরিচালক ও চিত্রনাট্য লেখকের আরও মন দেওয়া উচিত ছিল। অভিনয়ে সুহোত্র ও সোমক দু’জনেই যথাযথ। তবে একেনের মুখে বোকা বোকা হাসিঠাট্টা কোথাও গিয়ে একঘেয়ে লাগতে পারে। পরবর্তী চিত্রনাট্য লেখার সময় পদ্মনাভ দাশগুপ্ত এর সংখ্যা কমাতে পারলে মন্দ হয় না। অন্যান্য চরিত্রে রাজনন্দিনী পাল আর রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও বেশ ভাল।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

তবে রহস্যের সঙ্গে এ বারের ‘একেন সিজ়ন’-এর ইউএসপি, টুবানের ক্যামেরার হাত ধরে পুরী ও ওড়িশার বিভিন্ন জায়গা দর্শন। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা, যেমন রঘুনাথপুর, উদয়গিরি, পুরীর সমুদ্রতট ঘুরে ঘুরে গল্প যত এগিয়েছে, তত ওড়িশার অপূর্ব ভৌগোলিক রূপ ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে পটচিত্রের মাধ্যমে গল্প বলা, আর রাজ্যের বিভিন্ন আঞ্চলিক খাবারের উল্লেখ গল্পে ওড়িশার স্থানকে আরও বেশি করে পোক্ত করেছে। তবে মশলার বিজ্ঞাপন অত চোখে আঙুল দিয়ে না দেখালেও চলত।

সব মিলিয়ে ‘পুরো পুরী একেন’ এর গল্পে বেশ কিছু খামতি থাকলেও দেখার জন্য কম উপভোগ্য নয়। আগামী সিজ়নগুলো আরও বেশি পোক্ত হবে বলে আশা করাই যায়। ‘পুরো পুরী একেন’ দেখা যাচ্ছে ‘হইচই’-এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement