Bade Miyan Chote Miyan Movie Review

বক্স অফিসের অঙ্ক যে রায়-ই দিক, ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’ আসলে যুক্তিহীন মশলা ছবি

ইদের সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে অক্ষয় কুমার এবং টাইগার শ্রফ অভিনীত ছবি ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’। কোথায় খামতি থেকে গেল, জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

শ্রাবন্তী চক্রবর্তী

মুম্বই শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৯
Share:

‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’ ছবিতে অক্ষয় কুমার এবং টাইগার শ্রফ। ছবি: সংগৃহীত।

‘টাইগার জ়িন্দা হ্যায়’, ‘ভারত’, ‘সুলতান’-এর মতো সফল ছবির পরিচালক আলি আব্বাস জ়াফর আর এক বার ইদে নিয়ে এলেন নতুন ছবি। এ বার সঙ্গে অক্ষয় কুমার, টাইগার শ্রফ এবং দক্ষিণের সুপারস্টার পৃথ্বীরাজ সুকুমারন। অ্যাকশন, কমেডি, দেশভক্তি— সবই আছে, কিন্তু কিছুতেই যুক্তি নেই। কারণ, গল্প এবং চিত্রনাট্য খুব কমজোরি। যার দরুন ছবি দর্শকমনে কোনও দাগই কাটতে পারে না। দর্শক ছবি দেখে না কোনও ‘লজিক’ খুঁজে পাবেন, না পাবেন কোনও ‘ম্যাজিক’-এর সন্ধান।

Advertisement

ইদানীং নির্ভেজাল বলিউডি হিন্দি ছবিতে এক নতুন মোচড় খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন নির্মাতারা। তা হল দেশভক্তি। অ্যাকশনধর্মী ছবি হলেই দেশভক্তির সঙ্গে মিশে যাবে ঘন ঘন মারামারির দৃশ্য। মানে, উগ্র জাতীয়তাবাদের উচ্চারণই হল দেশভক্তির সঙ্গে অ্যাকশনের এক ঘোরতর মিশ্রণ। অর্থাৎ পুলওয়ামা বা কার্গিলই এই মুহূর্তে দেশভক্তির একমাত্র স্পষ্ট উচ্চারণ, গান্ধীর সত্যাগ্রহ তেমন জোরদার দেশভক্তির প্রমাণ নয়। এর মানে এমন অবশ্যই নয় যে, আমরা পুলওয়ামা বা কার্গিলের ঘটনাপ্রবাহকে দেশভক্তির নিরিখে কোনও ভাবে খাটো করছি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যুদ্ধে জেতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কিন্তু এক এক যুদ্ধ জেতার নিয়ম এক এক রকম। গান্ধীর আন্দোলনে সত্যাগ্রহ প্রয়োজনীয় ছিল, কার্গিলে কামান। তার মানে আবার এই নয় যে, সব অবস্থাতেই কামান দাগতে হবে। বলিউড যেটা করছে, সেটা সবচেয়ে সহজ। অবশ্য ‘পপুলিস্ট’ সিনেমা তো স্বভাবতই সবচেয়ে সহজ পথটাই সবসময় বেছে নেয়! সেখানে বলিউড আর হলিউডের মধ্যে আসলেই কোনও তফাত নেই।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

এই ছবিতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শুরু তাই শক্তিশালী খলনায়ক কবির (পৃথ্বীরাজ সুকুমারণ)-কে দিয়ে। মুখোশধারী কবির, একের পর এক ভারতীয় সৈনিক মেরে ভারতের সুরক্ষা কবচ হাতিয়ে নেয় এবং দেশকে মাত্র তিন দিন সময় দেয় যাতে দুর্যোগ থেকে আগামী দিনে বাঁচতে পারে। আর এই সময়ে ছবির দুই নায়ক ফ্রেডি (অক্ষয় কুমার) এবং রকি (টাইগার শ্রফ) ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ বাঁচাতে। এই প্রসঙ্গে থাকতে থাকতেই এটা বলে নেওয়া জরুরি যে, ফ্রেডি এবং রকি দু’জনেই ‘কোর্ট মার্শাল’ হওয়া সেনাবাহিনীর অফিসার। এই দুই অফিসার কতটা সাহসী, তা দেখানোর জন্য গল্পকে ফ্ল্যাশব্যাকে ফেরত যেতে হয়। ফ্ল্যাশব্যাকে এটাও জানা যায়, কবির কেন দেশদ্রোহী হয়ে দেশকে শেষ করতে চায়।

Advertisement

‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’ ছবির একটি দৃ‌শ্য। ছবি: সংগৃহীত।

এই ছবির অ্যাকশনকে হলিউডের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে আর তার ঝলক আমরা কিছু দৃশ্যে দেখতেও পাই। কিন্তু ১৬৪ মিনিটের ছবিতে ৯০ শতাংশ যুক্তিহীন মারপিটের দৃশ্য একঘেয়ে লাগে স্বভাবতই। মারপিটের দৃশ্যে অক্ষয় কুমার, যিনি নাকি ‘খিলাড়ি’ নামে বেশি পরিচিত, সপ্রতিভ। তবে, টাইগার এর থেকে বেশি অ্যাকশন করেছেন ‘ওয়ার’ ছবিতে। টাইগারকে আমরা অ্যাকশনহীন কোনও ছবিতে কখনও দেখতে পাব কি? যদিও তা স্বয়ং টাইগারও জানেন কি না সন্দেহ। তিনি কর্মজীবনে কোনওদিন সে সাহস করে উঠতে পারবেন বলে মনেও হয় না। কারণ তাঁর অভিনয় প্রতিভা যে খানিক সীমাবদ্ধ, তা তিনি ভালই জানেন।

আলিয়া এফ এবং মানুষী চিল্লারকে অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ রাখার তেমন সুযোগই দেয়নি দুই মিঞার এই ছবি। ছবির ভিএফএক্স, ক্যামেরার কাজ, সঙ্গীত খুবই দুর্বল। তবে, কবির অনস্বীকার্য ভাবে এখানে ‘সারপ্রাইজ় প্যাকেজ’। যদিও ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’কে অক্ষয় কুমার, টাইগার শ্রফের ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে, কিন্তু ছবিতে পৃথ্বীরাজ সুকুমারনের বলিষ্ঠ অভিনয় বাকিদের যে নেহাতই পানসে করে ছেড়েছে, তা অনস্বীকার্য। আসলে ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’ তার পূর্বসূরি ‘জওয়ান’, ‘পাঠান’ আর মার্ভেল ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি ছবির একটা খিচুড়ি, যেটা না দেখলে কোনও লোকসান হবে বলে মনে হয় না, সে প্রথম দিনের বক্স অফিস যা-ই বলুক। আর একটা কথা। জনপ্রিয় ছবির সিক্যুয়েল বানানোর জন্য শুধুমাত্র পুরনো ছবির নাম ব্যবহার করা বোধ হয় এ বার বন্ধ হলেই ভাল হয়। বিরক্তি একটু কমে দর্শকের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement