Chaman Bahar

মিঠে পাতার পানে একটু জর্দা

লোরমি, একটি ছোট গ্রাম, এই ছবির প্রেক্ষাপট। ভল্লুকের ভয়ে সরকারি চাকরি ছেড়ে পানের দোকান খোলে বিল্লু (জিতেন্দ্র কুমার)।

Advertisement

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০ ২২:৩৫
Share:

সে ভালবাসে, দূর থেকে দেখে, প্রত্যেক দিন চিঠি নিয়ে গিয়ে দিতে না পেরে ফিরে আসে... প্রথম প্রেমে নাস্তানাবুদ ছেলেটা, বিল্লু। এই ছবি তারই প্রেমের ছোট গল্প। রক্তমাংসের রোজকার জীবন যখন অতিমারি-বিধ্বস্ত, ওয়েব কনটেন্টে খুন ও রহস্যে মোড়া অন্ধকার জগৎ, তার মাঝে এ ছবি একপশলা বৃষ্টি। জটপাকানো কোনও সমস্যা নেই, সামাজিক বার্তা দেওয়ার দায় নেই, আছে একটা সরল গল্প। খুব সহজ ভাবে যা বলেছেন পরিচালক। আর আছেন জিতেন্দ্র কুমার! এ ছবি শুধু তাঁর জন্যই দেখা যায়।

Advertisement

লোরমি, একটি ছোট গ্রাম, এই ছবির প্রেক্ষাপট। ভল্লুকের ভয়ে সরকারি চাকরি ছেড়ে পানের দোকান খোলে বিল্লু (জিতেন্দ্র কুমার)। তার জানা ছিল না মুঙ্গেলির অন্তর্গত লোরমি পড়ে গিয়েছে বিলাসপুরের আওতায়। ফলে বাসরুট পাল্টেছে এবং বিল্লুর দোকানের সামনের রাস্তা প্রায় জনমানবশূন্য। শুনশান রাস্তার উপরে তার দোকান ও তালাবন্ধ একটি বাড়ি। এই বাড়ির তালা খোলায় ভাগ্যও খুলে যায় বিল্লুর। সেখানে সপরিবার থাকতে আসে এক ইঞ্জিনিয়ার। প্রথম দর্শনেই তার মেয়ে রিঙ্কুর প্রেমে পড়ে যায় বিল্লু। সে একা নয়। স্থানীয় দুই পার্টির হবু নেতা, গ্রামের ছেলেরা, রিঙ্কুর স্কুলের সহপাঠী থেকে শিক্ষকও হাবুডুবু খায় তার প্রেমে। রিঙ্কুর বাড়ির সামনে তাদের আনাগোনা বাড়ার সঙ্গেই বাড়তে থাকে বিল্লুর ব্যবসা।

ছবি এগোয় গ্রাম্যপথে সাইকেলের গতিতে। চুনসুরকির রাস্তায় ধুলো এসে লাগে মুখে। তবুও স্নিগ্ধ গ্রামের মতোই এ ছবি মন ভরিয়ে রাখে। আর আছে অব্যক্ত সরল প্রেম। সেই প্রেমে অন্য জনের মনের কথা না জেনেই উঁচু পাথরের উপরে তার নামের সঙ্গে আদ্যক্ষর জুড়ে নেওয়া যায়, দাঁতে দাঁত চাপা যন্ত্রণায় হাতের উল্কিতে প্রেমের চিহ্ন ফুটিয়ে নেওয়া যায়। আবার তার উপরেই রাগে, অভিমানে তাকে বদনাম করার চেষ্টাও ছুয়ে যায় মানুষের প্রতিশোধস্পৃহাকে। কিছু মুহূর্তও মনে দাগ কাটে। স্কুটি চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রিঙ্কুর পিছু নেয় বিল্লু, সাইকেলে। স্কুটির সঙ্গে সাইকেলের অসম প্রতিযোগিতায় নেমে সে মুখ থুবড়ে পড়ে রাস্তার উপরে। শ্রেণিবৈষম্যও ছুঁয়ে গিয়েছেন পরিচালক বিভিন্ন দৃশ্যে।

Advertisement

চমন বাহার
(ওয়েব মুভি)
পরিচালনা: অপূর্ব ধর বড়গাইয়া
অভিনয়: জিতেন্দ্রকুমার, রীতিকা
৬/১০

কাহিনির সূত্রধরের ভূমিকায় রয়েছে দু’টি চরিত্র, যাদের বুদ্ধি ও উসকানিতে গল্প দিক বদলাতে থাকে। তার সঙ্গে পর্দা জুড়ে জিতেন্দ্রর নিষ্পাপ চাহনি ও সাবলীল অভিনয়। টেনে টেনে সাইকেল চালানোর দৃশ্য হোক বা কপাল থেকে চুল সরানো... বডি ল্যাঙ্গুয়েজে জিতেন্দ্র হয়ে উঠেছেন বিল্লু। গোটা পান পাতাটি যদি জিতেন্দ্র হন, তার মধ্যে এক চামচ গুলকন্দ হলেন রিঙ্কুর চরিত্রে রীতিকা বাদিয়ানি। ভারী মিষ্টি দেখতে, ততোধিক মিষ্টি তাঁর হাসি। সংলাপ ছাড়াই তিনি মন জয় করে নিয়েছেন।

গ্রামের বাতাবরণে একটি সুন্দরী মেয়ে যেন বিদেশি ফুলের মতো। তাকে কেন্দ্র করেই স্বপ্ন বোনা, নিজেদের মধ্যে ‘ইয়ে তেরি ভাবি’ বলে মারপিট... যেন পিছিয়ে নিয়ে যায় কয়েক দশক আগের পাড়া কালচারে। সেখানে নেই কোনও যৌন ইশারা, আছে নিপাট মজা। আর আছে একটি গান, যার লাইনগুলো খাতার পিছনে লিখে রাখতে হয় প্রিয়তমার জন্য। সিনেমা শেষ হয়ে যায়, কিন্তু মন গুনগুন করে চলে ‘দো কা চার, তেরে লিয়ে সোলা, তু জ়র্দে কি হিঁচকি...’ সোনু নিগমের গলায় বড় মিঠে এ গান।

তবে ত্রুটিও আছে। নিজের মেয়েকে বদনাম করলে সেই পানওয়ালাকে লকআপ থেকে ছাড়াতে কি যান কোনও বাবা? তার পরেও সে মুখে ও রকম রং মেখে তাদের বাড়িতে উপস্থিত হলে বাকিরা শান্ত ভাবে তার সঙ্গে কথা বলে, চা অফার করে! এতটাও ঠিক মেনে নেওয়া গেল না।

শ্রেণিগত বিভেদে অসম প্রেম বরাবরই ব্যর্থ। ইঞ্জিনিয়ারের মেয়ের সঙ্গে পানওয়ালার প্রেম... তা যেন শুনতেও অবাস্তব। ছেলেটিও জানে না, তার হাতের উল্কিতে যার নামের আদ্যক্ষর, তাকে আদৌ পাবে কি না। অনেক ক্ষত শুকিয়ে গেলেও তার চিহ্ন থেকে যায়। ঠিক যেমন প্রেম দাগ রেখে যায়, হাত ঘোরালেই যেন ভেসে ওঠে সেই মুখটা। যতই বৈষম্য থাকুক, প্রেম তো প্রেমই...

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement