মিনিট কুড়ি গড়িয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত এক দলীয় কর্মীর মৃতদেহ কাঁধে তুলে পুলিশের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘‘এ দেশের গণতন্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই।’’ গোটা ছবি জুড়ে একাধিক বার এ কথাই বলবেন তিনি। এবং বারবার বুঝিয়ে দেবেন, ভারতীয় গণতন্ত্র পড়তে এবং বুঝতে ভুল হয়েছে তাঁর। সেই কারণেই শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা, উগ্র হিন্দুত্ববাদী, প্রাদেশিকতায় চপচপে মরাঠি নেতা বাল কেশব ঠাকরেকে নিয়ে তৈরি ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান কোনও হিন্দু বা মরাঠি নন, উত্তরপ্রদেশীয় নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকি। এটাই বহুত্ববাদী গণতন্ত্র।
আল পাচিনো একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সারা জীবনে চরিত্র অভিনয়ের সুযোগ কমই পেয়েছেন। অধিকাংশ পরিচালক ছবিতে সুপারস্টার আল পাচিনোকে চান। ‘মান্টো’র পরে ‘ঠাকরে’— প্রায় পিঠোপিঠি দু’টি ছবিতে নওয়াজ় বুঝিয়ে দিলেন, ব্যক্তি নওয়াজ়কে তিনি ছেড়ে আসেন সেটের বাইরে। অনুকরণহীন অভিনয়েও ফুটে ওঠে চরিত্র।
অভিজিৎ পানসে পরিচালিত ‘ঠাকরে’ ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি স্মার্ট। প্রথমার্ধের সাদা-কালো অংশে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের ক্যান্ডিড ক্যামেরা ভাল। যদিও বোঝা গেল না, ছবির একটা বড় অংশ কেন সাদা-কালো! কেনই বা হঠাৎ তা রঙিন হয়ে ওঠে। চিত্রনাট্যে কোনও উত্তরণ ঘটল কি?
এ ছবির উত্তরণ ঘটে না। বাল ঠাকরের জীবনের গল্প লিখেছেন তাঁরই অনুগামী সঞ্জয় রাউত। ঠাকরেই গল্পের হিরো। তবে এ ধরনের ছবিতে হিরোকে যে ভাবে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ করে দেখানো হয়, ঠাকরের ক্ষেত্রে ততটা করেননি চিত্রনাট্যকারেরা। ঘটনা পরম্পরায় ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ঠাকরের ডিসকোর্স। সেটিই ছবির স্পন্দন।
সমস্যাও সেখানে। আগাগোড়া একটি ছবি ঘৃণায় ম ম করে। গণতন্ত্র বিরোধী সওয়াল করে। দাঙ্গাকে মহান করে দেখানো হয়। বমির মতো হিংসা ছড়াতে থাকে ঠাকরের সংলাপে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মরাঠা জাত্যাভিমান পুনঃপ্রতিষ্ঠার এটিই নাকি পথ! অথচ গল্পে বলা হয় না আক্রান্তদের কথা। প্রাদেশিকতা, বিদ্বেষ বুনট বাঁধতে থাকে।
ঠাকরে পরিচালনা: অভিজিৎ পানসে অভিনয়: নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকি, অমৃতা রাও ৫/১০
দাঁড়ায়নি, ছবির মেরুদণ্ড হিসেবে তৈরি আদালত-দৃশ্য। পরিচালক ভুলে গিয়েছেন, আদালত আইনের ভাষায় চলে, আবেগে নয়। আদালতে ঠাকরের বক্তৃতা যেন জনসভার মতো।
অনেকেরই প্রশ্ন, নির্বাচনের আগে এ ধরনের ছবি মানুষকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা। তবে ‘ঠাকরে’র ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখতে আসা দর্শকের অধিকাংশই ছবির শেষে কাঠগড়ায় তুললেন হিংসার রাজনীতিকে। পরিচালক ছবি শেষ করলেন— ‘টু বি কন্টিনিউড’ দিয়ে। দর্শকেরা বললেন, এ রাজনীতি আর নয়।