Arjun Chakraborty

প্লটের মোচড়ে দানা বাঁধল না প্রেম

হিপনোথেরাপির মতো জটিল বিষয়ের অতি-সরলীকরণ কী ভাবে করলেন পরিচালক, ভেবে বিস্মিত হতে হয়!

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

ভালবাসার বিজ্ঞাপন চারদিকে। লাল ফুল আর বেলুনের মাঝে জোড়ায় জোড়ায় বেরিয়ে পড়া, খেতে যাওয়া, সিনেমা দেখতে যাওয়ার দিন। এমন একটা দিনে প্রেমঢালা ছবি দেখে দিল ‘তর’ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু হল না। মোচড়ানো প্লট আর পাকানো প্রেমের জটে হারিয়ে গেল ভালবাসাটাই।

Advertisement

সুদৃশ্য হোটেলে, ঝলমলে পোশাকে ‘পারফেক্ট’ এক যুগল। যাদের প্রত্যেক দিন দেখা হওয়া, প্রেমে পড়া, প্রেম গড়িয়ে শয্যা নেওয়া... সবই ঘটে চলেছে একেবারে চিত্রনাট্য মেনে। যন্ত্রের মতো। এবং এই সবটার পিছনে রয়েছে এক গভীর ষড়যন্ত্র। পুরোটাই ঘটে চলেছে গঙ্গার ধারের সেই বিলাসবহুল হোটেলের ভিতরে, কফিশপে, পুলসাইডে। নানা নামে, নানা বেশে (প্রত্যেক বারই ম্যাচিং পোশাকে), নানা পেশার হয়ে বারবার মুখোমুখি হচ্ছে দু’জনে। কখনও তাপসী-অভিষেক, কখনও তৃণা-অভিজিৎ কিংবা তৃপ্তি-অভিরূপ নাম নিয়ে। অর্জুন চক্রবর্তী এবং মধুমিতা সরকার এই প্রত্যেকটি জুটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করে গিয়েছেন আপ্রাণ। দু’জনকে একসঙ্গে মানিয়েছেও দিব্যি। কিন্তু প্রতিবারই প্রেম দানা বাঁধার আগেই কেটে দেওয়া হচ্ছে তার। কেন, তার নেপথ্যে পাওলি দামের চরিত্রটি। কালকি মিত্র হয়ে তিনিও দাপুটে অভিনয়ে শাসন করেছেন স্ক্রিন। নিজেদের চরিত্রে যথাযথ ‘একেনবাবু’ খ্যাত অনির্বাণ চক্রবর্তী, অভিজিৎ গুহ, অনিন্দিতা বসু সকলেই। তবে কাউকেই তেমন সঙ্গ দিতে পারল না প্রতিম ডি গুপ্তের চিত্রনাট্য।

হিপনোথেরাপির মতো জটিল বিষয়ের অতি-সরলীকরণ কী ভাবে করলেন পরিচালক, ভেবে বিস্মিত হতে হয়! যা আবার এগজ়িকিউট করছে কমিক চরিত্রের ধাঁচে তৈরি বটুকবাবু নামে এক ডাক্তার-বিজ্ঞানী। ২০১০ সালে ম্যাঙ্গালোরের বিমান দুর্ঘটনার রেফারেন্স কাহিনিতে রেখেছেন পরিচালক। কিন্তু সেই দুর্ঘটনার দৃশ্যায়নের অবাস্তবতা ইমপ্যাক্টটাই নষ্ট করে দেয়। রিয়্যালিটি শো-রানার মাত্রই এতখানি ডেসপারেট যে, তাদের অন্যের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলাটাও হজম করা মুশকিল। ফিকশনের খাতিরে যদি লজিক খোঁজা বন্ধও করে দিই, তা হলেও হোঁচট। প্রথম দেখাতেই প্রেমিক যুগলের চৌখস সংলাপের ফুলঝুরি শুনে মনে হয়, চালাক-চালাক কথা বলে একে অন্যকে ইমপ্রেস করাটাই যেন লক্ষ্য। গঙ্গাবক্ষে ঝাঁপ দিয়ে অচিরেই টিলাময় রুক্ষ গ্রামে পৌঁছে যায় দু’জন। হোটেলে নেটওয়র্ক নেই বলে বাইরের খবর পেতে ভরসা শুধু সাজিয়ে রাখা দৈনিক? অথচ বন্ধ-ধর্মঘটের আপডেট আমরা টেলিভিশনেই দেখি সর্বাগ্রে। গল্পের পাত্র-পাত্রীর জন্য ‘সাজানো ঘটনা’ যদি দর্শকেরও সাজানো মনে হয়, তা হলে আর রইলটা কী?

Advertisement

লাভ আজ কাল পরশু

পরিচালনা: প্রতিম ডি গুপ্ত

অভিনয়: অর্জুন, মধুমিতা, পাওলি, অভিজিৎ, অনির্বাণ, অনিন্দিতা

৪/১০

হোটেলের চার দেওয়ালের বদ্ধ পরিবেশ থেকে মাঝে মাঝে রিলিফ দিয়েছে শুভঙ্কর ভড়ের ক্যামেরা। অরিজিৎ সিংহ এবং অনুপম রায়ের গান দু’টি ভাল লাগে, অনেকটাই দৃশ্যায়নের কারণে। বড় পর্দার ডেবিউতে মধুমিতা সাবলীল, প্রমিসিংও। অর্জুনও সপ্রতিভ।

তবে পুরনো ‘লাভ আজ কাল’, ‘ইটারনাল সানশাইন অব দ্য স্পটলেস মাইন্ড’ মিশিয়ে প্রেমের যে পাঁচন পরিবেশন করেছেন প্রতিম, তা মন ছোঁয় না। সেই সঙ্গে নষ্ট হল একটা মিষ্টি প্রেমের ছবির সম্ভাবনা। লাভস্টোরি আর থ্রিলারের মিলমিশ সামলাতে পারেন ক’জন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement