রিসেপশনে ফ্রেমবন্দি। ছবি: রাহুল মণ্ডল
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। অবশেষে সাত পাকে বাধা পড়লেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ও রাজ চক্রবর্তী। প্রেম, সম্পর্কের টানাপড়েন, হাজারো চাপানউতোরের মধ্য দিয়ে তাঁদের ভালবাসা এগিয়েছে সিনেমার মতো। তবে খোলা আকাশের এক ঝাঁক তারার নীচে যখন রাজ-শুভশ্রী একে অপরের চোখে চোখ রেখে শুভদৃষ্টি সারলেন, তখন বিয়েটাকে মনে হয় যেন রূপকথার মতোই।
ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আত্মীয়দের মাঝে রাজ-শুভশ্রী রেজিস্ট্রি সেরেছিলেন ৬ মার্চ। তার পর থেকেই চলছিল বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে জল্পনা। আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই শুভশ্রী স্বপ্নের জাল বুনেছেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরুর এই দিনগুলো ঘিরে। সঙ্গ দিয়েছেন রাজও। তাই বিয়ে-বউভাতের অনুষ্ঠানে বাদ পড়েনি কিছুই।
আলতাপরা পায়ে নাচের ছন্দ
রেজিস্ট্রির পর থেকেই চলছিল নানা অনুষ্ঠান। ৮ মে একটি অভিজাত হোটেলে ককটেল পার্টিতে হাজির হয়েছিলেন তাঁরা। তবে বিয়ের জন্য বেছেছিলেন শহর থেকে সামান্য দূরে রাজবাড়ি বাওয়ালি। সেখানেই বসেছিল তিন দিন ধরে বিয়ের আসর। রাজবাড়ি সেজে উঠেছিল নানা ফুলের সাজে।
উড়ন্ত সব চুমু
১০ মে রাজ-শুভশ্রীর আইবুড়ো ভাত দিয়ে শুরু হয়েছিল বাওয়ালিতে অনুষ্ঠান। কাঁসার থালায় থরে থরে সাজানো ছিল ভোজ। বেলায় আলতা দিয়ে দু’পা রাঙিয়েছিলেন নায়িকা। তবে প্রথাগত বাঙালিয়ানার বাইরে গিয়ে যেমন অনেকেই মজে ওঠেন অবাঙালি মেহেন্দি-সঙ্গীতে, তেমনই অনুসরণ করেছেন শুভশ্রীও। বিয়ের আগের রাতে দু’হাত রাঙিয়ে মেহেন্দি পরেছেন। সঙ্গে ছিল সঙ্গীত। হিন্দি-বাংলা গানের সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন রাজ-শুভশ্রীও। নাচের মধ্যে কনের ঘাম মোছাতে রাজের এগিয়ে আসা, রাতের ভোজশেষে পাকা আম কেটে ইনস্ট্যান্ট কুলফি বানিয়ে খাওয়ার মজা— এমনই ছোট ছোট মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি হয়েছে সেই সন্ধে জুড়ে।
হলুদ প্রেমের গল্প
শুক্রবার ১১ মে ভোর চারটেয় জল সইতে যাওয়া ও দধিমঙ্গল দিয়ে শুরু হয় বিয়ের উপচার। বেলা বাড়তে প্রথমে রাজের গায়েহলুদ হয়। বরের গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ দিয়ে হয় শুভশ্রীর গায়েহলুদ। কনের পরনে ছিল ডিজ়াইনার পূজা প্রসাদের তৈরি সোনালি-হলুদ লেহঙ্গা। কাঠচাঁপা, সূর্যমুখীতে সেজে ধরা দিয়েছিলেন শুভশ্রী। বরের বাড়ি থেকে পাঠানো সারি সারি তত্ত্বের মাঝে নজর কেড়েছিল টেম্পল জুয়েলারির সেট।
হলুদরঙা
নিজেরা দই-মিষ্টি খেয়ে কাটালেও রাজ-শুভশ্রী বিয়ের দুপুরে অতিথিদের জন্য করেছিলেন বিপুল আয়োজন। মৌরলা মাছ, পোস্তর বড়া, চিংড়ি বাটা, চিংড়ির মালাইকারি, ভেটকি পাতুরি, পুদিনা মুরগি... বাদ পড়েনি কিছুই।
সিঁদুরদান থেকে মুরগির ঠ্যাং
রাজবাড়ির দালানে বসেছিল বিয়ের আসর। জুঁই ফুলের ম ম গন্ধে ভরপুর বিয়ের মণ্ডপে মায়া ছড়াচ্ছিল মোমবাতির নরম আলো। সঙ্গত ছিল সানাইয়ের মূর্ছনা। তবে সানাইবাদনের পাশাপাশি ছিল লাইভ ডিজে-র ব্যবস্থাও। সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের লাল বেনারসি পরেছিলেন শুভশ্রী। গলার ভারী সোনার গয়না সবচেয়ে নজর কাড়ছিল। গয়নার ডিজ়াইন নাকি কনে নিজেই করেছেন! কপালে চন্দন, লাল ওড়না... শুভশ্রী ধরা দিয়েছিলেন শাশ্বত বাঙালি নারী রূপে। কনেকে পাল্লা দিয়েছিলেন রাজ। চিরাচরিত ঘরানা থেকে বেরিয়ে পরেছিলেন সবুজ পাঞ্জাবি, বেনারসি পাড় বসানো ধুতি। পোশাক তৈরি করেছিলেন রাজ বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’বাড়ি থেকেই বর-কনেকে আশীর্বাদ করা হয় সোনা দিয়ে। মালাবদল, শুভদৃষ্টি, খই পোড়ানো, সিঁদুরদান— নিয়ম মেনে পালন হয়েছে বিয়ের উপচার। তবে প্রায় ভোরে বিয়ে শেষ হওয়ায় বাসর জাগার সুযোগ পাননি কেউ! বিয়ের দিন টলিউডের বেশির ভাগ তারকা যেতে না পারলেও উপস্থিত ছিলেন শ্রীকান্ত মোহতা, জিৎ, রুদ্রনীল ঘোষ, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, তনুশ্রী, জুন মাল্য, শ্রেয়া পাণ্ডে, মানালি দে, অনিন্দিতা বসু প্রমুখ।
বিয়ের রাতের দেদার খাবারের মধ্যে বাঙালি, ভারতীয় ও চাইনিজ খাবারের আয়োজন ছিল। চিংড়ি মালাইকারি, ধনেপাতা মুরগি, ছানার কালিয়া, বার্নট ক্যাপসিকাম রাইস, ফিশ ইন চিলি অয়েস্টার সস, হান্ডি মাটন, ক্ষীর-পাটিসাপটা, ক্যারামেল কাস্টার্ড, চকোলেট মাড পাই অন্যতম। কনেপক্ষের আপ্যায়নও ছিল মনকাড়া।
রাজ-শুভশ্রী। ছবি: শুভদীপ ধর
বিদায়বেলা, বধূবরণ
শনিবার বিকেলে কনকাঞ্জলি পর্ব সেরে নবদম্পতি রওনা দেন কলকাতার পথে। আর্বানায় নিজেদের ভাল-বাসায় থাকবেন তাঁরা। রাজ-শুভশ্রীর বউভাত ও রিসেপশনের অনুষ্ঠান সেখানে হয়।
সিঁদুরদান
চাঁদের হাট, জমাটি ভোজ
রবিবার বউভাতের অনুষ্ঠানেও শুভশ্রী বেছেছিলেন সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের তৈরি সোনালিরঙা শাড়ি। সঙ্গে হিরের গয়না। রাজ পরেছিলেন সুরভি পানসারির ডিজ়াইন করা কালো বন্ধগলা। ছিল সোনালি সুতোর এমব্রয়ডারি। নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাতে ইন্ডাস্ট্রির নানা তারকার সঙ্গেই ছিল রাজনীতিকদের আনাগোনা। আক্ষরিক অর্থেই রাজ-শুভশ্রীর রিসেপশনে বসেছিল চাঁদের হাট। তবে শোনা যাচ্ছে, হাজারো অতিথির ভিড়ে এক নায়িকার কাছে নাকি আমন্ত্রণ পত্রই পৌঁছয়নি!
এ দিনও ছিল মহাভোজের ব্যবস্থা। পানীয়, ল্যাম্ব স্যুপ, মোচার চপ, গ্রিলড চিকেন টেরিয়াকি, আপ্পম, নানা স্বাদের পুরভরা পরোটা, কাবাব, ডাল বুখারা, বিরিয়ানি, লুচি, আলুর দম, ছোলার ডাল, ভাত, ডাব চিংড়ি, বেকড রাবড়ি উইথ মিহিদানা, ম্যাঙ্গো মন্টেকার্লো.... বাদ পড়েনি কিছুই।
এ বার নবদম্পতির পাড়ি দেওয়ার কথা কোনও অজানা উদ্দেশে। লক্ষ্য অবশ্যই মধুচন্দ্রিমা। শোনা যাচ্ছে নাকি খান তিনেক জায়গার কথা ভাবা হয়েছে। তবে সেটা কী, খোলসা করছেন না বর-কনের কেউই। এটা আপাতত রহস্যই থাক!