রাফিয়াত রাশিদ মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত।
সমাজ আর সংবাদমাধ্যমে তিনি জর্জরিত সৃজিত মুখোপাধ্যায় আর তাহসান রহমান খানকে ঘিরে প্রশ্ন নিয়ে। রাফিয়াত রাশিদ মিথিলা। চিরাচরিত ঢাকাই শাড়ি আর অল্প সাজে কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: আপনার পায়ের তলায় তো সর্ষে…
মিথিলা: (হেসে) আমার কাজটাই এমন।এই যেমন গবেষণার কাজে আমি ফেব্রুয়ারিতে জেনিভায় ছিলাম, উন্নয়নকর্মী হিসেবে মর্চে তানজ়ানিয়া, এপ্রিলে কানাডা, মে মাসে সিয়েরা লিওনে, জুনে তানজ়ানিয়া। তবে এর মাঝে অল্প সময় হলেও কলকাতায় এসেছি।
প্রশ্ন: সে তো ছবির কাজে…
মিথিলা: হ্যাঁ, যেমন দুলালদার (দুলাল দে) ছবি ‘অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ’-এর জন্য এখন কলকাতায়। তবে ছবির কাজ ছাড়াও আমি কলকাতায় আসি।আমার শাশুড়ি আমাকে আর আয়রাকে খুব মিস্ করেন।
প্রশ্ন: আপনি সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে মিস্ করেন?
মিথিলা: দেখুন, সৃজিত কাজপাগল মানুষ। আর আমার কাজের কথা তো বললাম আপনাকে।আমি নিশ্চয়ই চাইব না সৃজিত কাজকর্ম ছেড়ে আমাকে কলকাতায় পুরো সময় দিক। আমি আশা করি না, সৃজিত সব কাজ ফেলে আয়রাকে দেখবে।
প্রশ্ন:‘অরণ্য’র প্রাচীন প্রবাদ’ কেন করলেন?
মিথিলা: আমি এই ছবিতে নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছি। ছবিতে গল্প বলার ধরন আলাদা। যে কারণে ‘মায়া’ ছবিটাও করেছিলাম।
প্রশ্ন:‘মায়া’ তেমন জনপ্রিয় হয়নি।
মিথিলা: দর্শক কী চাইছে এখন বোঝা মুশকিল। এখন চারপাশে দেখার জন্য এত ভাষার ছবি রয়েছে। তবে ‘মায়া’, ‘ও অভাগী’ শুট করে আমার খুব ভাল লেগেছিল।
প্রশ্ন: শুটিংয়ের জন্য ফেডারেশনের নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরে যাওয়ার তাগিদে এখন এ পার বাংলার অনেক ছবি বাংলাদেশে শুট হচ্ছে, কী বলবেন?
মিথিলা: এখানে কাজ করে দেখেছি গিল্ডের জন্যই গঠনমূলক পদ্ধতিতে কাজ হয়। সেটা কিন্তু বাংলাদেশে নেই। কিন্তু ফেডারেশনের যে নীতিমালাগুলো আছে সেখানে হয়তো কিছু কিছু কাঠিন্য আছে। সবাই মিলে বসে যদি সেগুলো ঠিক করা যায়, কাজ আরও সহজ হবে। বাংলাদেশের ছবিনির্মাতারাও কিন্তু এখানে শুট করতে চায়। বাংলাদেশে এখানকার মতো এত রূপটানের জন্য নির্দিষ্ট ভ্যান নেই। আবার এ পারের ওই নীতিমালায় বাংলাদেশকে আজও বিদেশ হিসেবেই দেখা হয়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখার তেমন চল নেই নাকি?
মিথিলা: আসলে এর পিছনে সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণ আছে। সেই বিশ্লেষণে না গিয়ে এটুকু বলতে পারি যে এক সময় এফডিসিতে এত নিম্নমানের ছবি তৈরি হয়েছে যে, নিম্ন শ্রেণির মানুষ ছাড়া কেউ ছবি দেখতে যেতেন না। এখন আবার লোকে ছবি দেখতে যেতে চাইছেন।কারণ মৌলিক গল্পের উপর প্রচুর কাজ হচ্ছে। এখন এই গল্প যাঁরা বলেন তাঁরা ২৫ থেকে ৪৫ এর মধ্যে। ওঁরা নতুন ভাবে ভাবছেন। স্বাধীন ভাবে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের অনেকের কাজই আন্তর্জাতিক পরিসরে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: জীতুকে কেমন লাগল এই ছবিতে কাজ করে?
মিথিলা: জীতু জাত অভিনেতা। ও জানে পরিচালক ঠিক কী চাইছে ওর কাছ থেকে। ‘অপরাজিত’-তে ও খুব ভাল কাজ করেছে।
প্রশ্ন: আর সুহোত্র?
মিথিলা: খুব স্বতঃস্ফূর্ত। ওর সঙ্গে আমার রসায়ন এই ছবিতে বেশ লেগেছে।
প্রশ্ন: আপনার ছবি করা নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
মিথিলা: আমি ষোলো বছর একটা স্বেছাসেবী সংস্থায় চাকরি করি। ভালবাসার জায়গা থেকেই অভিনয় করা। এমন কত বার হয়েছে, ইদের সময় হয়তো বাংলাদেশের টেলিভিশনে দুটো কাজ করলাম। তার পরে আবার বিরতি। এই কম কাজ করতে করতে একশোর উপরে শুধু নাটকই করেছি আমি। সিনেমা হলে তো অনেক সময় দিতে হয়, তাই বছরে এক বার বা দু’বারের বেশি কাজ হয়নি। কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছে অন্য কাজগুলোর জন্য।
প্রশ্ন: হতাশ লাগে তখন?
মিথিলা: না। নতুন করে কিছু মনে হয় না। কলকাতায় একটানা যখন থাকতাম বাংলাদেশে লোকে বলত, মিথিলাকে তো পাওয়াই যায় না। অন্য দিকে ঢাকায় থাকলে বা বাইরে গেলে কলকাতার লোক আমায় ফোনে পায় না। আমাকে যদি কেউ বেশ কিছু দিন আগে অভিনয়ের কথা বলে, তা হলে কিন্তু আমি ঠিক সময় বার করে ফেলি। যে কাজ করবে আর যে কাজ করাতে চায়, দু’জনের চাওয়া মিলতে হবে।
প্রশ্ন: সৃজিতের ছবিতে আপনার অভিনয়— আপনার নাকি সৃজিতের, কার চাওয়া মিলছে না?
মিথিলা: সেটা সৃজিত বলতে পারবে। আর আমি অভিনয় করতে পারি, এমন চরিত্র না পেলে কাস্ট করবে কী করে?
প্রশ্ন: সম্প্রতি মিথিলা আর তাহসানের সিরিজ় মুক্তি পেল…
মিথিলা: ২০১৬-এর পরে আমরা আর কাজ করিনি। ২০১৭ সালে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এত বছর বাদে কাজ করলাম, লোকে আবার অনেক কথা বলতে শুরু করল।
প্রশ্ন: যেমন?
মিথিলা: কী আর? টাকার জন্য মিথিলা-তাহসান একসঙ্গে কাজ করল, অথচ বাচ্চার জন্য একসঙ্গে থাকতে পারল না! লোকে তো জানেই না আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা। আমরা খুব ভাল আছি। আমাদের যখন বিচ্ছেদ হয় আয়রার এক বছর বয়স। ওকে নিয়ে সব জায়গায় ঘুরেছি। বাড়ির সাহায্য পেয়েছি। তাহসানের কাছে বাচ্চাকে রেখে বাইরে গিয়েছি। কর্মসূত্রে যখন বাইরে যাচ্ছি, তখনও আমি আয়রাকে সঙ্গে নিয়ে গেলে কাজের জায়গা থেকে ওরা আপত্তি করেনি। আফ্রিকায় একটা কথা আছে, ‘একটা বাচ্চাকে বড় করতে পুরো গ্রামের প্রয়োজন’। এটাই সত্যি। আমি বলতে চাইছি বাচ্চা মানুষ করার ক্ষেত্রে দাদু-ঠাকুরমা, শাশুড়ি, বন্ধু সকলকে দরকার। আমার ঢাকায় চলে যাওয়ার এটাই মূল কারণ ছিল, মেয়েকে পরিবার দেওয়া। দর্শক ভাবছে ২০১৬-এর পরে ২০২৪-এ মিথিলা আর তাহসানের দেখা হল। এটা তো নয়, আমাদের তো প্রতিদিন কথা হয়। ব্যাপারটা ও রকম নয় যে বহু বছর পরে দু’জনের দেখা, পিছনে গান বাজছে।
প্রশ্ন: বিচ্ছেদের পরে সম্পর্ক রাখা স্বাভাবিক?
মিথিলা: সব সম্পর্কে বন্ধুত্ব না-ও থাকতে পারে। কিন্তু সন্তান থাকলে তার স্বার্থ আগে দেখতে হবে। সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য আমার কাছে সবচেয়ে আগে। এটাই উচিত। আমি আয়রাকে দেখতে পেলাম না। আমি আর তাহসান লড়াই করলাম, এই ইগোর যুদ্ধে তো বাচ্চার ক্ষতি হবে।
আমি আর তাহসান চোদ্দো বছর একসঙ্গে থেকেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের আলাপ। দু’জন দু’জনকে ভাল করে জানি। আয়রা আমাদের দু’জনের কাছে সবচেয়ে আগে।
প্রশ্ন: আর সৃজিত?
মিথিলা: ও সবটাই জানত। বাংলাদেশে গিয়েছে, আমার পরিবারকে দেখেছে। তাহসানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দেখেছে। বিয়ের মতো সম্পর্ক হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো কারণ থাকে, সৃজিত আমার সব কিছু জেনেই আমাকে গ্রহণ করেছে। আয়রার সঙ্গে সৃজিতের চট করে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। ও সৃজিতকে ‘আব্বু’ ডাকে।
প্রশ্ন: আর তাহসানকে?
মিথিলা:‘বাবা’। এই দুইয়ের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আমি।
প্রশ্ন: সেই ‘আব্বু’ যখন পাইথনের পরিবার বাড়িতে আনলেন?
মিথিলা: সেই এক বছর ধরে পরিকল্পনা চলছে। আমি আর আয়রা ভিডিয়ো কল করে কত ভয় দেখিয়েছিলাম। অজগর তো আমাদের খেয়ে ফেলবে, কে শোনে কার কথা! বুঝলাম ও বাড়িতে পাইথন আনবেই। আগে যদিও একটা ছিল। এখন ক্রমশ বাড়ছে। দেখলাম শখ, করে নিক।
পাশ থেকে জনৈক ভদ্রলোক বলে উঠলেন, “সৃজিতের মতো ছেলে হয় না।” মিথিলা ফোঁস করে উঠলেন, “হ্যাঁ, চব্বিশ ঘণ্টা এই কথা বলার জন্য সৃজিত যেন তোমায় রেখেছে!”