শুক্রবার, ২৫ বৈশাখ। আরও একটা রবীন্দ্রজয়ন্তী। নেহাত লকডাউন চলছে। না হলে এই দিনটা তো বারো মাসের চোদ্দোতম পাবর্ণ। নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটকে প্রিয় রবি ঠাকুরককে স্মরণ করার দিন। কিন্তু দীর্ঘকায় মানুষটা কি শুধুই শিল্প-সংস্কৃতিতে আটকে থাকার? আটকে রাখার?
রাজনীতিক রবীন্দ্রনাথ কেমন ছিলেন? কেমন ছিল তাঁর সমাজ ভাবনা, ধর্ম চিন্তা? কৃষি নিয়েই বা তাঁর ভাবনা চিন্তা কেমন ছিল? রবীন্দ্রজয়ন্তীতে এমন আড্ডা-গল্পগুলো ফি বছর রঙ্গমঞ্চের আড়ালেই থেকে যায়। তবে অতিমারির মেঘে ঢাকা এই পঁচিশে বৈশাখে রবীন্দ্রচর্চায় ভিন্ন স্বাদের রসদ জোগাবে ‘রেডিয়ো কোয়রান্টিন কলকাতা’। যে কমিউনিটি রেডিয়ো স্টেশনটির জন্ম লকডাউনের বাজারে খাস কলকাতাতেই।
২৫ বৈশাখ দিনভর চলবে আড্ডা। কমিউনিটি রেডিয়ো অন্যতম সদস্য সুমিত দাস বললেন, ‘‘এ হল এমন এক রবীন্দ্রজয়ন্তী, যা কখনও হয় না।’’ কে জানে যে প্রেম থেকে পড়াশোনায় কোটেশনে উদ্ধৃত হতে হতে মানুষটা স্বর্গে বসে হেঁচকি খান না? এই প্রসঙ্গেই বলবেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী, ক্লান্ত ‘কোটেশন’-এ। পঁচিশে বৈশাখে রবি উদযাপন, এই ‘প্রাসঙ্গিকতা আসলে আপেক্ষিক অনুষ্ঠানের আতিশয্য’, আলোচনায় সৌরীন ভট্টাচার্য। কপিরাইট বাদ এ দিলে এ পার বাংলায় রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কোনও বাঁধন ছিল না। কিন্তু ক’জন মনে রাখে, ক’জনই বা জানে যে ও পারের মানুষকে লড়াই করে রবীন্দ্রনাথকে অর্জন করতে হয়েছিল? কারণ পাক শাসনকালে পূর্ববঙ্গে ব্যান ছিলেন বিশ্বকবি। কথা হবে পূর্ববঙ্গের ছায়ানটের সংগ্রাম নিয়ে। সব মিলিয়ে এমন একটা রবীন্দ্র জয়ন্তী উদ্যাপন যেখানে দুই বঙ্গ তো বটেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালি মিলে মিশে একাকার। যে নিখাদ আড্ডায় শিল্প-সংস্কৃতির পরিসর ছাড়িয়ে তাঁর বাকি কর্মকাণ্ড নিয়েও কথা হবে, গল্প হবে।
আরও পড়ুন: লকডাউনে রবীন্দ্র-বরণে ভার্চুয়াল মঞ্চও যেন ভিড়ে ঠাসা
লকডাউনের পর সহ নাগরিকদের সঙ্গে চিন্তা ভাবনার আদানপ্রদানের উদ্দেশে তৈরি হয় এই রেডিয়ো স্টেশন। নেপথ্যে জনা আষ্টেক মানুষ। যাদের মধ্যে কেউ চলচ্চিত্র পরিচালক, কেউ গবেষক, কেউ শিক্ষক, কেউ মিডিয়া কর্মী, কেউ ছাত্র। কিন্তু, রেডিও স্টেশন চালানোর অভিজ্ঞতা তাঁদের আগে ছিল না। সুমিত বললেন, ‘‘আমাদের চেষ্টা এই গোটা লকডাউন পর্বটা একটা অডিয়ো ডেটা হয়ে থাক।’’ অর্থাৎ শব্দে নথিবদ্ধ হয়ে থাকুক এই সময়টা। রেডিয়ো স্টেশনটির অন্যতম কারিগর কস্তুরী বসু জানালেন, ২৪ মার্চ শুরু হওয়া এই উদ্যোগ মাত্র দেড় মাসে ৫৩-৫৪ দেশ থেকে ১২ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। লকডাউনের পরেও কি চলবে এই রেডিয়ো? কস্তুরী বললেন, ‘‘মানুষ যে ভাবে এই উদ্যোগে সাড়া দিয়েছেন, তাতে আমাদের ইচ্ছে আগামী দিনে কোনও না কোনও ফরম্যাটে এই রেডিয়ো স্টেশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’’