হাসিমুখে ছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।
যোরহাটের ন'আলির কাছে ঐতিহ্যশালী সূবর্ণপ্রভা বরদলৈ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা জানত আজ স্কুল পরিদর্শনে আসতে চলেছেন ইনস্পেক্টর ও জেলাশাসক। একই সঙ্গে শনিবার স্কুলের মাঠে বিহুর আয়োজনও করা হয়েছিল। এমনিতে শনিবার স্কুল চলে বেলা ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা বিনু বরা শইকিয়া সবাইকে জানিয়ে দেন, বিহু সেরে ফিরতে দেরি হতে পারে।
বিকেলে এক প্রস্থ বিহু নাচের পরে কনভয়ের শব্দ শুনে ছাত্রীরা জেলাশাসকের জন্য তৈরি। কিন্তু গাড়ি থেকে নামলেন ব্লু ডেনিম ও থ্রি-কোয়ার্টার কমলা টপ পরা প্রিয়ঙ্কা চোপড়া! অসম পর্যটনের বিজ্ঞাপনী ছবির শুটিং করতে বিশেষ বিমান যোরহাটে নেমেই সোজা ওই স্কুলে আসেন বিশ্বসুন্দরী। আনন্দে পাগল ছাত্রীদের সামলানোই মুশকিল তখন। অসম পর্যটনের চেয়ারম্যান জয়ন্তমল্ল বরুয়া ও প্রধান শিক্ষিকা বিনুদেবীকে দুই পাশে বসিয়ে প্রিয়ঙ্কা নিজের হাতে লাগাম টেনে নেন।
হাসিমুখে, আন্তরিকভাবে ছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন বলি-হলি কাঁপানো পিগি চপস। জানতে চান, বিহুর অনুষ্ঠানে পশ্চিমী পোশাক নয়, মুগার মেখেলা পরে এলেই ভাল হত তাই না? প্রথম সংলাপেই বাজি মাৎ। এর পর ছাত্রীদের থেকেই জানতে চান, কোন রঙের মেখেলায় তাঁকে সবচেয়ে মানাবে। সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল লাল। বিনুদেবী প্রিয়ঙ্কাকে ফুলাম গামোসায় সম্বর্ধনা জানানোর পরে ছাত্রীদের নাচ দেখেন তিনি।
মিনিট ১৫ স্কুলে কাটিয়ে, শিক্ষিকাদের সঙ্গে গ্রুপ ফটো তুলে, ভিজিটার্স বুকে শুভেচ্ছাবার্তা লিখে ঠেঙাল ম্যানরে রাত্রিবাসের উদ্দেশে রওনা দেন ইউনিসেফের দূত প্রিয়ঙ্কা।
অসম পর্যটনের প্রথম বিজ্ঞাপনী ছবিতে প্রিয়ঙ্কার কয়েক সেকেন্ডের বিহু নাচ ছিল। তাতে অনেকেরই মন ভরেনি। আজ ছাত্রীদের নাচে মুগ্ধ প্রিয়ঙ্কা নিজেই নিরাপত্তার বেড়া সরিয়ে বিহু নাচে পা মেলান। তিনি বলেন, "অসম সফরের সূচনাটা দারুণ হল। আমি বিশ্বের কাছে তোমাদেরই দূত। তোমাদের বার্তা আমায় বলে দাও, আমি তা সকলের কাছে পৌঁছে দেব।"
মিনিট ১৫ স্কুলে কাটিয়ে, শিক্ষিকাদের সঙ্গে গ্রুপ ফটো তুলে, ভিজিটার্স বুকে শুভেচ্ছাবার্তা লিখে ঠেঙাল ম্যানরে রাত্রিবাসের উদ্দেশে রওনা দেন ইউনিসেফের দূত প্রিয়ঙ্কা। ঘোর কাটার পরে মাঠ জুড়ে আফশোস, জোগাড় হল না অটোগ্রাফ, তোলা হল না সেলফি!
আরও পড়ুন: রণবীর ছাড়া একটি বিশেষ কাজ কেউ পারত না! স্বীকারোক্তি
বিনুদেবী পরে আনন্দবাজারকে ফোনে বলেন, "দুই দিন আগেই প্রশাসনের তরফে আমায় বলা হয়েছিল প্রিয়ঙ্কা চোপড়া আমাদের স্কুলে আসবেন। সেই সঙ্গে এও বলা হয়, খবর অত্যন্ত গোপন। সংবাদমাধ্যমের ভিড় চান না প্রিয়ঙ্কা। তাই ঘুণাক্ষরেও যেন কেউ আগাম ওই কথা জানতে না পারে। তাই অন্য গল্প বানাতে হয়েছিল আমায়। প্রিয়ঙ্কা আসার খবর পেয়ে স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রীরাও চলে আসে।"
রবিবার ও সোমবার যোরহাট ও গোলাঘাটে ঠেঙাল ম্যানর, কাজিরাঙা গল্ফ রিসর্ট ও বেনিয়ন গ্রোভ-সহ বিভিন্ন স্থানে প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে শুটিং চলবে। আহোম চাকলাং বিয়ের কনের সাজেও দেখা যাবে তাঁকে। মঙ্গলবার দিল্লি ফিরবেন প্রিয়ঙ্কা। প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকে নিয়ে তৈরি অসম পর্যটনের প্রথম বিজ্ঞাপনী ছবি আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তিনটি শাখায় মনোনীত হয়েছে। ইতিমধ্যে 'ভগা খিড়কি' নামে একটি অসমীয়া সিনেমাও যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন প্রিয়ঙ্কা ও তাঁর মা।
ছবি- বিনু বরা শইকিয়ার সৌজন্যে