Farhan Imroze

Pratyusha Pal: এখনও বুকে ফারহানের নাম, কিন্তু সে উধাও, প্রাক্তন প্রেমিককে নিয়ে মুখ খুললেন প্রত্যুষা

শুনলাম, অভিযুক্ত নাকি আমাকে পছন্দ করে বলে এমন করেছে। কাউকে পছন্দ হলে ধর্ষণের হুমকি দিতে হয়, এটা জানতাম না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২১ ২১:২৫
Share:

প্রত্যুষা পাল এবং ফারহান ইমরোজ

টেলি-অভিনেত্রী প্রত্যুষা পালকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হল ঐশিক মজুমদারকে। ২০২০ সালের শুরু থেকে ধর্ষণের হুমকি পাচ্ছেন অভিনেত্রী প্রত্যুষা পাল। ‘তবু মনে রেখো’ খ্যাত নায়িকা দু’সপ্তাহ আগে অভিযোগ দায়ের করেছেন সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আনন্দবাজার অনলাইনে সেই বিষয়ে কথা বললেন অভিনেত্রী।

Advertisement

প্রশ্ন: আদালতে কী হল?

প্রত্যুষা: শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ব্যাঙ্কশাল আদালত ডেকেছিল। আমার অভিযোগ রেকর্ড করা হল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। তার পর সেখান থেকে লালবাজারে গেলাম। আমার মামলা যে তদন্তকারী আধিকারিকের দায়িত্বে, তিনি জানালেন আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে বাকি তথ্য দেওয়া হবে। তদন্ত চলছে।

Advertisement

প্রশ্ন: যে ছেলেটিকে ধরেছে তার ব্যাপারে কী জানা গেল?

প্রত্যুষা: তার মুখ দেখিনি এখনও। যা শুনলাম, শেষ যে প্রোফাইল থেকে আমাকে ধর্ষণের বর্ণনা দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তার মালিক এই ছেলেটি। জিজ্ঞাসাবাদ চলবে আরও। এই মুহূর্তে আমার আর কিছু করণীয় নেই। শুনলাম, ছেলেটি নাকি আমাকে পছন্দ করে বলে এমন করেছে। কাউকে পছন্দ হলে ধর্ষণের হুমকি দিতে হয়, এটা জানতাম না।

প্রশ্ন: বাড়িতে সবাই শান্তি পেয়েছে তো?

প্রত্যুষা: দাদু দিদা তো কিছু জানত না। সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ পাওয়ার পর জানতে পেরে খুব চিন্তায় ছিল ওরা। গ্রেফতারের পরে ‌খানিক স্বস্তি তো পেয়েছে। কিন্তু এখনও খুব ভয় করছে। ছেলেটির বাড়ি নাকি বেলঘরিয়ায়। মানে আমার বাড়ি থেকে খুব দূরে নয়। এত দিন তার মানে কতটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম ভাবতে পারছেন? এখনও মনে হচ্ছে, যদি জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়, তা হলে কী হবে? সেই দুশ্চিন্তা থেকে এখনও বেরোতে পারে‌নি পরিবারের কেউই।

প্রশ্ন: পরিবারে কে কে আছে?

প্রত্যুষা: মা, দাদু আর দিদার সঙ্গে থাকি।

প্রশ্ন: বাবা?

প্রত্যুষা: আমার যখন তিন বছর বয়স, বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যায়। অন্য সংসার আছে তার। কোনও যোগাযোগ নেই। ঠাকুমা ঠাকুর্দার সঙ্গেও কথা বার্তা হয় না। তার পর থেকে মা একাই লড়াই করেছে। তার আগে যদিও মা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন ছিল, কিন্তু গোটা পরিবারকে একা সামলানো অত সহজ নয়। এখন মা নিজের প্রযোজনা সংস্থা খুলেছে।

প্রশ্ন: মায়ের থেকেই লড়াই করার সাহস পেয়েছেন?

প্রত্যুষা: একেবারেই। তা সে আজকের এই ধর্ষণের হুমকির ক্ষেত্রে হোক, বা ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যাই হোক। মা লোহা পিটিয়ে গরম করেছে। তাই আমার ১৬ বছর বয়স থেকেই রোজগার করার তাগিদ কাজ করেছে। চাইলে হয়তো মা, দাদু, দিদা— সবই দিয়ে দিত, কিন্তু চাইনি। নিজে অভিনয় করে টাকা রোজগার করেছি। আজও করি।

মায়ের সঙ্গে প্রত্যুষা

প্রশ্ন: অভিনেতা ফারহান ইমরোজের সঙ্গে সম্পর্ক কবে থেকে?

প্রত্যুষা: ২০১৭ সালে ‘তবু মনে রেখো’ ধারাবাহিকে কাজ করার সময়ে আমাদের আলাপ। তার পরেই প্রেম, সম্পর্ক। একসঙ্গে থাকা শুরু করলাম দক্ষিণ কলকাতায়। ভাড়া নিয়েছিলাম দু’জনে মিলে।

প্রশ্ন: কেন ভাঙল সম্পর্ক?

প্রত্যুষা: বললে কেউ বিশ্বাস করবেন না, আমরা কেন আলাদা হলাম, তার কারণ আজও আমার কাছে স্পষ্ট নয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস। আগের দিন রাতেও সব ঠিক ছিল। হঠাৎ পর দিন সকালে উঠে ফারহান বলে, ‘‘আমি বাড়ি যাচ্ছি, কাল দেখা করব।’’ তার পর… আর ফেরেনি। ফোন ধরেনি। দেখা করেনি। উধাও! আমি জানতাম যে তার পর দিন থেকে ওর চার-পাঁচ দিনে শ্যুট ছিল। সম্ভবত দার্জিলিং-এ। আমি মেসেজ করেছিলাম, ফেরার পর যাতে এক দিন দেখা করে। এক বার ফোন ধরে বলেছিল, ‘‘আমি কাজে যাচ্ছি। এই সময়ে এই বিষয়ে মন দিতে চাই না।’’ তবে কথা দিয়েছিল যে দেখা করবে ফিরে এসে। কিন্তু করেনি। আমার কয়েক জন বন্ধু ওকে ফোন করার চেষ্টা করেছিল। তাদেরও কারণ জানায়নি। কেবল বলেছে, ‘‘আমি চাই না।’’ ব্যস। তার পর তিন বছর কেটে গিয়েছে। আজও এক বারের জন্যও রাস্তায় হঠাৎ দেখা হয়নি। আমার বুকে এখনও বড় বড় করে ফারহানের নাম লেখা।
প্রশ্ন: ট্যাটু?

প্রত্যুষা: হ্যাঁ ১২ ইঞ্চির ট্যাটু। ইংরেজিতে ওর নাম লেখা। একসঙ্গেই গিয়েছিলাম বানাতে। খুব আনন্দ পেয়েছিল ফারহান। এটা সে বছর জুন মাসের কথা। সেপ্টেম্বরে ফারহান আমাকে ছেড়ে চলে গেল।

প্রশ্ন: সম্পর্ক বিচ্ছেদের এত দিন পর নিজের কথাগুলো বলছেন, কেন?

প্রত্যুষা: এই উত্তরটি দেওয়া আমার জন্য খুব জরুরি। এত দিন এই কথাগুলো প্রকাশ্যে আনিনি তার কারণ, আমি চাইনি লোকে এটা নিয়ে চর্চা করুন বা ওর নাম খারাপ হোক। কারণ খুব কম বয়সের প্রেম আমার। ভীষণ সরল ভাবে ভালবাসতাম আমি। এমনকি আমি বিশ্বাস করতাম, ফারহান ফিরে আসবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তার পর দেখেছি, ফারহান নানা জায়গায় সাক্ষাৎকারে কথা বলার সময়ে আমার অস্তিত্বটাই মিথ্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। ও বলে, ‘‘আমি কোনও দিন কোনও নারীর সংস্পর্শে আসিনি। আমার জীবন নিয়ে যা যা শোনা গিয়েছে তার সবটা‌ই বানানো।’’ তার পরে ফারহানের অনুরাগীরা আমাকে যা ‌খুশি তাই কথা বলে অপমান করেছেন। বলা হয়েছে, আমার জন্য ও কষ্ট পেয়েছে। তাই দেড় বছর কাজকম্ম করেনি। তাই এখন আমার মনে হয়, নিজের দিকটা বলি। আমি যদি কাউকে কিছু না বলি, সবাই ওর মিথ্যেটাকে সত্যি বলেই ধরে নেবে।

প্রশ্ন: এখনও কি সেই সম্পর্কের বোঝা আপনার মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে?

প্রত্যুষা: নেই বললে, মিথ্যে বলা হবে। আমাকে অবিশ্বাস করতে শিখিয়েছে। আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি কখনও কখনও। আবার একা থাকতেও শিখিয়েছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ হতেও শিখেছি ওই সম্পর্ক ভাঙার পরে। ফারহান চলে যাওয়ার পর আমি তার পরেও ছ’মাস একা থেকেছি ওই বাড়িতে। আসলে বড় মুখ করে বাড়িতে বলেছিলাম, একসঙ্গে থাকব আমরা। তোমরা এত চিন্তা কোরো না। তার পর মায়ের দুশ্চিন্তাই সত্যি হল।

প্রাক্তন যুগল প্রত্যুষা এবং ফারহান

প্রশ্ন: এর পর আর প্রেম করোনি?

প্রত্যুষা: সে ভাবে করিনি। ফারহানের পর আর কাউকে ও ভাবে ভালবাসিনি বা বলা যায়, কাউকে বিশ্বাস করতে ভয় হয়।

প্রশ্ন: বাইরে বেরোলে বা কোনও ডেটে গেলে গলা বন্ধ পোশাক পরেন ট্যাটু ঢাকার জন্য?

প্রত্যুষা: নেটমাধ্যমে অনেক ছবি পোস্ট করেছি, যেখানে আমার বুকে ফারহানের নাম জ্বলজ্বল করছে। এটাই বাস্তব। কার কাছে মিথ্যে বলব? কেবল অভিনয়ের সময়ে মেকআপ দিয়ে ঢাকতে হয়।

প্রশ্ন: ‘তবু মনে রেখো’-র পর আর কোনও ধারাবাহিকে কাজ করোনি?

প্রত্যুষা: ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি’ ও ‘ঠাকুমার ঝুলি’-তে ছোট ছোট গল্পগুলোতে অভিনয় করেছি। তার পরে অবশ্য ‘গুড়িয়া যেখানে গুড্ডু সেখানে’-তে কাজ করেছি। সম্প্রতি একটা ছবির শ্যুটিং‌ শেষ হল।

প্রশ্ন: কাজের ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন?

প্রত্যুষা: অনেক বার। সেটার কারণ যদিও জানানো হয়নি। সব স্থির হয়ে যাওয়ার পর বলা হয়েছে, ‘‘না গো প্রত্যুষা, এ বার আর একসঙ্গে কাজ করা হল না।’’ ব্যস। সেটার কারণ আদৌ ফারহানের সঙ্গে সম্পর্কের বিতর্ক কিনা সেটা আমি জানি না।

প্রশ্ন: ধর্ষণের হুমকি পাওয়ার ঘটনা সামনে আসার পর লোক জনের থেকে কী কী শুনতে হয়েছে?

প্রত্যুষা: একাংশের ধারণা, আমি মিথ্যে বলেছি। কোনও মেয়ে কী এ ভাবে ধর্ষণের হুমকি নিয়ে মিথ্যে বলতে পারে! যাঁরা বলছেন, তাঁরা কি এতটুকু বোঝেন না? যদিও বলব, গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁদেরই মনে হয়েছে, ‘না তা হলে তো সত্যি!’ কিন্তু সমাজে এ রকম মানুষের সংখ্যা কম নয়, যাঁরা আগে মেয়েটির দিকে আঙুল তোলেন! অনেকেই আমাকে বলেছেন, ‘‘নেটমাধ্যমে আছো কেন? এর পর সব ছেড়ে দেওয়া উচিত।’’ আমি ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে বহু ছোট ছোট সংস্থার জন্য কাজ করি। যাদের পণ্যের জন্য বিজ্ঞাপন বানাতে হয়। যে আমাকে হুমকি দিয়েছে, তার দোষ। আমার নয়। আমি কেন সব ছেড়ে বেরিয়ে যাব? একবিংশ শতাব্দীর মেয়ে আমি। আর চুপ থাকা সম্ভব নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement