ফাইল চিত্র।
মঞ্চে অভিনয় হোক বা ন্যাশনাল ফিল্ম থিয়েটারে কোনও সাক্ষাৎকার। এই শহরের সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগাযোগ বহু বছরের। বাঙালির প্রিয় অভিনেতার মৃত্যুর পরে তাই আবেগপ্রবণ লন্ডনও।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে এখানকার বাঙালিরা যেমন কাল দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা আবেগঘন পোস্ট করেছেন, তেমনই এখানকার চলচ্চিত্র গবেষকেরাও শ্রদ্ধা-ভালবাসায় স্মরণ করেছেন তাঁকে। চিত্রসমালোচক এবং লেখক ডেরেক ম্যালকম তাঁদেরই এক জন। সত্যজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তিনি। সৌমিত্রের প্রয়াণের প্রসঙ্গ উঠতেই জানালেন, সত্যজিৎই এক বার তাঁকে বলেছিলেন সৌমিত্রকে কোনও ছবিতে নিলে বড্ড নিশ্চিন্ত বোধ করতেন তিনি। জানতেন, সেই ছবিতে ওঁর চরিত্রটা নিয়ে আর বিশেষ কিছু ভাবতে হবে না।
‘‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবরে খুবই দুঃখ পেয়েছি। ওঁকে নিজের বন্ধুর মতো ভাবতাম। ভারতে ওঁর মতো ধ্রুপদী অভিনেতা খুবই বিরল। সত্যজিতের ছবির ধারক-বাহক তো ছিলেনই। কিন্তু তার থেকেও আরও অনেক বেশি কিছু ছিলেন,’’ বললেন ম্যালকম। সেই সঙ্গে তাঁর গলায় ঝরে পড়ল কিছু আফসোসও। বললেন, ‘‘ভারতের একটা অদ্ভুত অভ্যেস আছে। বেঁচে থাকতে যাঁকে যোগ্য সম্মান দেওয়া গেল না, মৃত্যুর পরে তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেওয়া হয়। ওঁর মতো অভিনেতা অনেক বার আমার কাছে দুঃখ করেছেন যে, কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে উনি কাজের সুযোগ পাননি। খুব মিস করব ওঁকে।’’ পর্দার সৌমিত্রের পাশাপাশি মঞ্চে তাঁর অবদানকেও স্মরণ করেছেন ম্যালকম। কবি সৌমিত্র, নাট্যকার সৌমিত্রের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি।
ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রধান কিউরেটর রবিন বেকার টুইটারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রয়াত শিল্পীকে। ‘অপুর সংসার’-এর একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘রে ভেবেছিলেন দাড়ি রাখলে সৌমিত্রকে যুবক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো দেখাবে।’’
বিশিষ্টদের পাশাপাশি লন্ডনের আমবাঙালিও এখন সৌমিত্রে মজে। ১৯৯৮ সালে অভিনেতাকে নিয়ে তৈরি ক্যাথরিন বার্জের ‘দ্য ট্রি’-র প্রিমিয়ার হয়েছিল লন্ডনে। এখানকার বাঙালি দর্শকদের কাছে তা ছিল পরম প্রাপ্তি। এই লন্ডন শহরেই বাঙালিদের একটা নাটকের দল রয়েছে— ‘দ্য ড্রামাট্রিস্টস’। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সেটির পৃষ্ঠপোষক। এই দলের কাজ নিয়ে খুবই উৎসাহী ছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত ৪৫টি শো করে ফেলেছে দলটি। একবার সৌমিত্র তাঁর ‘নীলকণ্ঠ’ নাটকটি নিজের হাতে লিখে পাঠিয়েছিলেন। দু’বার সেই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে লন্ডনে। কুড়িয়েছে প্রচুর প্রশংসাও। গ্রুপের সভাপতি শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিচালক সত্যেন বড়ুয়া একযোগে বললেন, ‘‘পৃষ্ঠপোষক তো বটেই। আসলে উনি ছিলেন আমাদের নিজের লোক।’’