শহরে নতুন উন্মাদনা চুপচাপ চার্লির গান।
ওরা অন্য রকম। সাধারণের কথার ফুলঝুরি, ভারী সংলাপ ওদের কানে সে ভাবে বাজে না। তবে সুরের আবেদন আদিমতম। কাছের মানুষ হয়ে উঠতে গানই ছিল এক মাত্র উপায়। তাই চ্যালেঞ্জটা নিয়েই ফেলেন অভিনেতা নাইজেল আকারা। নিজের নাট্যদল কোলাহল-এর কর্মশালায় বিশেষ ভাবে সক্ষম কিশোরদের নিয়ে নাটকের তালিম শুরু করেন তিনি। ডিসেম্বর মাসে মঞ্চস্থ হবে সেই নাটক ‘চুপচাপ চার্লি’।
তবে আগে থাকতেই নাটকের গান নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে! মোবাইলে, ল্যাপটপে, কানে কানে সর্বত্র বাজছে ‘ও মা’, ‘রাই জাগো’, ‘শাওন গগনে’ থেকে শুরু করে ‘চুপচাপ চার্লি’-র থিম গান। সুরগুলি গেঁথে যাচ্ছে মানুষের মনে। যেন কোনও ছবি মুক্তি পাচ্ছে সামনে, নাটক নয়। আনন্দবাজার অনলাইনকে পরিচালক বলেন, “এক এক জনকে চিনতে সময় লেগেছে। কেউ কথা বলতে পারে না, কেউ শুনতে পায় না। আমাদের চার্লি তো কানে একেবারেই শোনে না, কথাও বলতে পারে না। তাকে নির্দেশ দিলেও তো বোঝাতে পারব না। ওর জন্য আলাদা করে ভয়েসওভার তৈরি করতে হয়েছে। কিন্তু সেটাই বা বোঝাব কী ভাবে যে এখন ভয়েস চলছে এখন থামছে, তাই ওর যখন বলার সময় তখন বাকি শিল্পীরা স্থানু হয়ে যান। গান আর কোরিওগ্রাফি এখানে বিশেষ ভাবে সংযোগ তৈরি করে। ছেঁড়া ছেঁড়া সংলাপকে গেঁথে রাখে। এক এক পরিস্থিতির জন্য এক-একটা গান। যেমন ‘মা’ গানটা শুরু হচ্ছে তখন, যখন এক জন বুঝতে পারে সদ্য মারা যাওয়া মহিলা তার মা ছিল। আগে যখন তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল সে বোঝেনি।”
প্রাজ্ঞর পরিচালনায় এক ঝাঁক গান
আপাতত হৃদয় নিংড়ানো গানগুলোই নাটক নিয়ে আগ্রহের পারদ চড়াচ্ছে। যেখানে নাইজেলের ভাবনার কাণ্ডারি প্রাজ্ঞ দত্ত। নাটকের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনিই। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সেই নবীন শিল্পী এই মুহূর্তে আরও অনেক প্রকল্পে যুক্ত। তবে ‘চুপচাপ চার্লি’ তাঁরও নিজের কাজ। নাইজেল তাঁর ভাবনার রূপায়নে প্রাজ্ঞরই শরণ নিয়েছিলেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে নাইজেল জানান, তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে এ কাজে স্বেচ্ছায় এসেছেন ইমন চক্রবর্তী, তিমির বিশ্বাস, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো গায়করা। কণ্ঠ দিয়েছেন প্রাজ্ঞও। তাঁরা কেউই পারিশ্রমিক নেননি। এ কাজ মানবতার স্বার্থে, দিন বদলের স্বপ্নে, এমনটাই জানান পরিচালক।
শুধু সঙ্গীত পরিচালনা নয়, অটিস্টিক ছেলেমেয়েদের শারীরিক কসরত করতেও শেখাচ্ছেন প্রাজ্ঞ। নিজে এক দক্ষ মার্শাল আর্ট শিল্পী হওয়ায় এ কাজেও তাঁর ভরপুর উৎসাহ। আপাতত এক দক্ষিণী ছবির সঙ্গীতস্রষ্টা হিসাবে কাজ করছেন তিনি। জানালেন, সঙ্গীতসফরের সঙ্গে মার্শাল আর্টের অঙ্গ সঞ্চালনা তাঁর মিলেমিশে এক হয়ে যায়। তাঁর কথায়, “সমস্যা হল, আমরা একটা ছোট্ট ধারণায় থিয়েটারকে বাঁধতে চাই। সেই স্টেজ, সেট চেঞ্জ, প্রপ্স। আসলে থিয়েটারের পরিধি এর চেয়ে অনেকটা বেশি। সিনেমার চেয়ে অনেক বড়। নাটকের সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে। সমাজের প্রান্তিক স্বর তুলে ধরার মতো কাজ করছে ‘চুপচাপ চার্লি’।’’ প্রাজ্ঞ জানান, বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করার সবচেয়ে ভাল মাধ্যম সুরে বলা। তাই এই নাটকে গান আলাদা মাত্রা নিচ্ছে।