প্রয়াত বিরজু মহারাজ ছবি সংগৃহীত।
রবিশঙ্কর তাঁর নাচ দেখে বলেছিলেন, ‘তুমি তো লয়ের পুতুল’! কত্থকের সেই ‘মহারাজা’ আর নেই। রবিবার রাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি শিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজ। ৮৩ বছর বয়সে। একাধারে নাচ, তবলা এবং কণ্ঠসঙ্গীতে সমান পারদর্শী ছিলেন বিরজু। ছবিও আঁকতেন।
রবিবারর রাতে নাতির সঙ্গে খেলছিলেন। তখনই হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন তিনি। সম্প্রতি তাঁর কিডনির অসুখ ধরা পড়েছিল। ডায়ালিসিস চলছিল।
কত্থকের ‘মহারাজা’ পরিবারে জন্ম। সাত পুরুষ ধরে তাঁদের পরিবারে কত্থক নাচের চর্চা। তাঁর দুই কাকা শম্ভু মহারাজ এবং লচ্ছু মহারাজ ছিলেন বিখ্যাত শিল্পী। বাবা অচ্চন মহারাজই ছিলেন বিরজুর গুরু।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একাধিক ধারার সঙ্গে যেমন যুক্ত ছিলেন, তেমনই বহু ছবিতে কোরিওগ্রাফারের কাজও করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্তর দশকের মাঝামাঝি সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’-র কোরিওগ্রাফি। ছবিতে দুটো গানের কোরিওগ্রাফি করেন। তার মধ্যে একটা ছিল ‘কানহা মে তোসে হারি’। গানটার সঙ্গে ছিল আমজাদ খানের অভিনয়।
কলকাতার সঙ্গে নিবিড় যোগ ছিল বিরজুর। ১৯৫২ সালে এই শহরেই জীবনে প্রথম মঞ্চে পারফর্ম করেন। মন্মথ নাথ ঘোষের বাড়িতে। তখন তাঁর বয়স চোদ্দ। বাবা মারা গিয়েছেন। জীবনে দাঁড়াবার জন্য লড়াই করছেন। সে সময় ডাক কলকাতায়। কাকা লচ্ছু মহারাজ তখন মুম্বইয়ে কোরিওগ্রাফির কাজ করছেন। আর এক কাকা শম্ভু মহারাজ ব্যস্ত ছিলেন লখনউতেই নিজের কাজে। মা এক পাতানো ভাইয়ের সঙ্গে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন বিরজুকে।
এর পর থেকে কাকাদের কাছে শিক্ষা চলেছে। ধীরে ধীরে মেলে ধরেছেন নিজেকে। দেশ-বিদেশে বহু অনুষ্ঠান করেছেন। রয়েছে প্রচুর ছাত্রছাত্রী। নিজের শিল্পকর্ম এবং শিক্ষার মধ্যে দিয়েই অমরত্ব লাভ করবেন বিরজু।