পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র।
জি বাংলার ‘সা রে গা মা পা’ র ‘মহাগুরু’ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। প্রতিযোগিতার অন্দরের কথা জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।
প্রশ্ন: বিচারকের আসনে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। সৌভাগ্যের নাকি ভয়ের বিষয়?
অজয়: বাচ্চারা আগে আমাকে দেখে রেগে যেত। কারণ এই ধরনের অনুষ্ঠানে চাকচিক্যের দিকটারই গুরুত্ব বেশি। বাচ্চারা এটাই পছন্দ করে। এই রকম মঞ্চ পেয়ে সঙ্গীত যে সাধনার জিনিস, সেটা ওরা ভুলে যায়। ব্যক্তিগত ভাবে আমারও এই ধরনের অনুষ্ঠান ভাল লাগে না।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি তো এখানে ‘গুরুজি’-র আসনে?
অজয়: সঙ্গীতের ক্ষেত্রে পরিশ্রম ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি হয়তো কিছু দিন গান-বাজনা করে পাওয়া যায়। তাতে সঙ্গীত শেখা হয় না। বেশ কয়েক বছর আয়োজকদের অনুরোধ আমি উপেক্ষা করেছি। এ বার ওঁরা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রতিযোগিতার পাশাপাশি অনুশীলনেরও ব্যবস্থা করা হবে। প্রথম পাঁচ জন সফল প্রতিযোগীর সঙ্গীত-শিক্ষার ভার আমাকে দেওয়া হবে। এ রকমই কথা হয়েছে।
প্রশ্ন: রিয়্যালিটি শো-তে বিচারকদের মধ্যেও মতপার্থক্য থাকে। তা নিয়ে কী মত?
অজয়: এ বিষয়েও কথা বলেছি। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অন্যান্য বিচারক আমায় শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন, তাই আমার সঙ্গে তাঁদের বিরোধের কোনও জায়গা থাকবে না। আমি থাকলে দর্শকদের প্রত্যাশা বাড়বে, এ কথাও বলেছেন। তাই এ বার আর ওঁদের অনুরোধ ফেলতে পারিনি। তবে আমি রোজ যাব না। মাঝেমাঝে যাব।
প্রশ্ন: এখন তো মুম্বই থেকেও বিচারকেরা আসেন?
অজয়: মুম্বইয়ের শিল্পীরাও আমাকে যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন।
প্রশ্ন: মুম্বইয়ে গান বা নাচের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে বাংলার শিল্পীরা বিচারক হিসেবে ডাক পান না। কী বলবেন?
অজয়: এটা আমি মনে করি না। বাংলার শিল্পীদের সেই জায়গায় তো পৌঁছতে হবে! মহারাষ্ট্রের শিল্পীরা লড়াই করতে জানেন। বাংলায় ভাত-ডালের প্রভাব বেশি।
প্রশ্ন: শোনা গিয়েছে, এই ধরনের অনুষ্ঠানে বিচারের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব থাকে। এটা মেনে নিতে পারবেন?
অজয়: অনুষ্ঠান সবে শুরু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ দিন আমি গিয়েছি। এ রকম কিছু হলে আমি প্রতিবাদ করব। সত্যি কথা বলতে অজয় চক্রবর্তী ভয় পায় না।
প্রশ্ন: প্রতিযোগীরা কী পরামর্শ পেলেন?
অজয়: বেশ কিছু জায়গা ঠিক করতে বলেছি। বিশেষ করে উচ্চারণ ও লয়-তালের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হতে বলেছি।
প্রশ্ন: এই অনুষ্ঠানে আপনার বিচারের মাপকাঠি কী?
অজয়: সঙ্গীত সমুদ্রের মতো। এর কোনও বিচার হয় বলে আমি মনে করি না। তবে বিচারকের আসনে আছি, কয়েকটা দিককে বেছে নেব। যেমন হাওয়ার ব্যবহার, উচ্চারণ, গানের মানে বোঝানোর দক্ষতা। গানের কথা পড়তে হয়, গানের অর্থ বোঝাতে না পারলে গাওয়ার কোনও মানেই হয় না। একটা গানকে অলঙ্কারে সাজিয়ে কোনও লাভ নেই। গায়কি হৃদয় ছুঁতে পারলে তবেই সেই গান গাওয়া সার্থক।
প্রশ্ন: বড়দের সঙ্গে ছোটরাও এই প্রতিযোগিতায়। লড়াইটা কেমন?
অজয়: খুব ভাল গাইছে ছোটরা। ওদের প্রতিযোগিতায় রাখতে বারণ করেছি। ওরা বড়দের সঙ্গে গাইছে, এখানেই তো নিজেদের প্রমাণ করেছে। ওরা আসবে, গাইবে, আনন্দ পাবে। বড়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতা— এই নিয়ে কোনও ভয় ওদের মনে আসুক, তা আমি চাই না। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আমার কথা মেনে নিয়েছেন।
প্রশ্ন: গান বাছাইয়ে কোনও পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিযোগীদের?
অজয়: প্রচুর যন্ত্রসঙ্গীতের ব্যবহার আছে, এমন গানকে বেছে নিতে বারণ করি। কিন্তু ওরা সেটা পারে না। অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে ওদের উত্তেজক গান গাইতে হয়। এতে ওদের কিছু করার নেই। এর জন্য আমাদের সমাজ দায়ী। সমাজকে এমন জায়গায় আনতে পারিনি, যেখানে সংস্কৃতি আর সঙ্গীত একে অপরের পরিপূরক।
প্রশ্ন: প্রতি বছর এই ধরনের মঞ্চ থেকে সফল হন অনেকেই। পরে তাদের খোঁজ মেলে না। কী বলবেন?
অজয়: পারিবারিক সঙ্গীতশিক্ষার অভাব, ভাল গান শোনার মানসিকতার অভাব। এখন ইউটিউবে গান শুনে গাইছে, শেখার তাগিদ নেই। গান কী ভাবে শুনতে হয়, সেটাও শিখতে হয়। তাড়াতাড়ি নাম করতে হবে, এই মানসিকতা নিয়ে বেশি দূর যাওয়া যায় না।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।