পল্লবী দে’র রহস্য মৃত্যুর একমাস
১৫ জুন। মেয়েটা চলে গিয়েছে, এক মাস হল। সে দিন ছিল ১৫ মে, মিষ্টির (পল্লবী) দিদার কাজ। তখনই এসেছিল সেই ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ।
তার পরে গত এক মাসে প্রতিটা দিন যেন আমাদের কাছে এক-একটা মাসের মতো লম্বা। খেতে পারি না। ঘুমোতে পারি না। রামরাজাতলায় আমার স্টেশনারি দোকানটা ভাড়া দিয়ে দিয়েছি। রাস্তায় বেরোলেই লোকজন সান্ত্বনা দেয়। যারা চিনত না, তারাও এখন চিনে গিয়েছে আমায়। দেখলেই বলে, ওই যে কয়েক দিন আগে যে আত্মহত্যা করল, তার বাবা। খুব প্রয়োজন না হলে তাই বেরোতেও ভাল লাগে না আজকাল। ওর মা সারা দিন ফোনে শুধু মেয়ের ছবিই দেখে। গত এক মাস মিষ্টির ঘরে ঢুকতে পারিনি আমরা কেউ। তালাবন্ধই পড়ে আছে। চার দিকে শুধুই ওর স্মৃতি।
অথচ আমার মেয়ের তো এই পরিণতি হওয়ার কথা তো ছিল না। অনেকেই আজ বলছেন, ওর চেক বাউন্স করেছিল, ধার ছিল। কিন্তু আমি জানি, কোনও সম্পত্তিই ও কেনেনি। খুব ছাপোষা মানুষ আমরা। আমাদের এটাই দোষ যে, মেয়ের ভালবাসাকে মান্যতা দিয়েছি। সে তো সব মা-বাবাই চায় সন্তান যেন ভাল থাকে!
আজও বলছি, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতেই পারে না। সাগ্নিকের সঙ্গে বিয়ের কথা পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। শাঁখা বাঁধানো তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। এখনও স্যাকরার দোকানে পড়ে আছে। সাগ্নিকের আইনত বিচ্ছেদ হলেই ২০২৩-এ ওদের বিয়ে দিতাম। ওই খানেই ভুল হয়েছিল। ওর আগের প্রেমিকার মৃত্যুও ঠিক একই ভাবে হয়। তা আমরা এড়িয়ে গিয়েছিলাম। যখন আমার মেয়ে ওই কাণ্ড ঘটায়, তখন তো সাগ্নিক ছাড়া কেউ ছিল না! ও পল্লবীর ঝুলন্ত দেহ একা কী করে নামাল? আমাদের অনুমান, ও চেয়ারে বা সোফায় বসে ছিল। পিছন থেকে ওকে হয়তো মারা হয়েছে। যে মেয়ে সে দিন সকালেও বাড়ির কাজের দিদির সঙ্গে ১৫ মিনিট কথা বলেছে, তার পরে কী এমন ঘটল যে, মিষ্টিকে নিজের জীবনটাই শেষ করে দিতে হল?
সাগ্নিক আর ঐন্দ্রিলা, দু’জনকেই অপরাধী মনে হচ্ছে আজ। সাগ্নিক এখন জেলে। কয়েক দিন পরেই কোর্টের তারিখ। আবারও যাব। শুনব। আমার মেয়ের মৃত্যুর ন্যায়বিচার চাই। যত দিন না সঠিক বিচার পাচ্ছি, তত দিন আমরা কেউই শান্তি পাব না। শান্তি পাবে না মিষ্টিও।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।