অভিনেত্রী ভিমির নাম আজ বিস্মৃত। বি আর চোপড়ার ব্লকবাস্টার ‘হমরাজ’-এর নায়িকাকে কতজন দর্শক মনে রেখেছেন, সন্দেহ। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের মোস্ট আনকনভেনশনল হিরোইন। দুই সন্তানের মা ভিমি নায়িকা হয়েছিলেন চোপড়াদের মতো নামী ব্যানারে। স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন রাজকুমার, সুনীল দত্তের সঙ্গে।
জন্ম ১৯৪৩ সালে। ভিমির ইচ্ছে ছিল গায়িকা হওয়ার। অভিনয় করেছিলেন নাটকে। অংশ নিতেন তৎকালীন বম্বের অল ইন্ডিয়া রেডিও-র নানা অনুষ্ঠানে। মুম্বিয়ের সোফিয়া কলেজ থেকে সাইকোলজিতে স্নাতক ভিমির বিয়ে হয়েছিল কলকাতার ব্যবসায়ী শিব আগরওয়ালের সঙ্গে।
সঙ্গীত পরিচালক রবি তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন বি.আর চোপড়ার কাছে। কিন্তু গায়িকা হওয়ার বদলে ভিমি সুযোগ পেলেন নায়িকা হওয়ার। ‘হমরাজ’ সুপারহিট হয়েছিল। প্রথম ছবিতেই বলিউডের মধ্যমণি ভিমি। ফিল্মফেয়ার-সহ একাধিক পত্রিকার প্রচ্ছদে তিনি। বলেই দিয়েছিলেন, টাকার জন্য অভিনয়ে আসেননি। অভিনয় করতেন নিজের প্যাশনে।
ইচ্ছাপূরণের পথে স্বামীর পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলেন ভিমি। যদিও বাবা মা এবং শ্বশুর শাশুড়ি কেউ তাঁকে সমর্থন করেননি। কিন্তু স্বামীর প্রশ্রয়ে চলতে থাকে ভিমির একের পর এক ছবিতে সাইন। অভিজাত পালি হিলসে প্রাসাদোপম বাড়ি, গলফ খেলা, ডিজাইনার পোশাক, মিঙ্ক কোর্ট, স্পোর্টস কার, মজুত ছিল ভোগবিলাসের সব উপকরণ।
‘হমরাজ’-এর পরে ভিমির ছবি ছিল ‘আব্রু’। কিন্তু ১৯৬৮ সালের এই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। নবাগত দীপক কুমারের সঙ্গে ভিমির রসায়ন একেবারেই জমেনি পর্দায়। অশোক কুমার। নিরুপা রায়, ললিত পওয়ারের মতো চরিত্রাভিনেতাও উদ্ধার করতে পারেননি ছবিকে।
‘হমরাজ’-এর পরে ভিমিকে আর এক বারের জন্যেও ডাকেনি চোপড়া ব্যানার। সাধারণত তাঁরা পছন্দের তারকাকে একাধিক ছবিতে সুযোগ দেন। ভিমি সম্বন্ধেও উচ্ছ্বসিত ছিলেন বি আর চোপড়া। কিন্তু কোনও এক রহস্যময় কারণে তাঁরা ভিমিকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেননি।
ক্রমশ পর্দা থেকে মিলিয়ে গেলেন ভিমি। তাঁকে দেখা যেত ফিল্ম পার্টি আর পত্রিকার ফটোশুটে। ১৯৭০-এ তিনি পত্রিকায় ধরা দিলেন বিকিনিতে। ‘সেক্স সিম্বল’-এর তকমা পেলেন। কিন্তু ছবিতে ডাক এল না। তাঁর শেষ অভিনয় ‘বচন’ ছবিতে, শশী কপূরের সঙ্গে। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৪ সালে। এরপর পর্দা ও পর্দার বাইরে, দুই জায়গা থেকেই হারিয়ে গেলেন ভিমি।
ছবি থেকে বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিমির ব্যক্তিগত জীবনেও দুর্যোগ। ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় স্বামীর সঙ্গে। চেষ্টা করেছিলেন নিজে ব্যবসা করার, কিন্তু সেখানেও ব্যর্থতা। পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে বিধ্বস্ত ও নিঃস্ব ভিমি নিজেকে ডুবিয়ে দেন অ্যালকোহলে।
প্রথম জীবন রঙিন আর বিলাসী নায়িকা শেষ জীবনে সম্পূর্ণ রিক্ত। ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিলেন অনটনের সঙ্গে লড়াইয়ে। লিভারের জটিল অসুখে আক্রান্ত ভিমি প্রয়াত হয়েছিলেন ১৯৭৭-এর ২২ অগস্ট। মুম্বইয়ের নানাবতী হাসপাতালে জেনারেল ওয়ার্ডে অনাদরে পড়েছিল অতীত নায়িকার দেহ।
‘পতঙ্গ’, ‘গুড্ডি’, ‘কহিঁ আর কহিঁ পার’ ছবির অভিনেত্রীকে হাসপাতাল থেকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে। বিশেষ কেউ জানতেও পারেননি এক কালের গ্ল্যামারাস নায়িকা চলে গেলেন নিঃশব্দে। বেশ কয়েকদিন পরে সংবাদপত্রের অবিচুয়ারি থেকে জানা গিয়েছিল জৌলুসহীন এক নক্ষত্র ঝরে গিয়েছেন সবার অগোচরে।