ফাইল চিত্র।
সঙ্গীতশিল্পী নির্মলা মিশ্র প্রয়াত। শনিবার রাতে বাড়িতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। রাত ১২টা ৫ মিনিট নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার চেতলায় নিজের বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। পরিবারে তাঁর স্বামী, পুত্র এবং পুত্রবধূ রয়েছেন।
রাতে তাঁর দেহ সার্দান অ্যাভিনিউতে একটি নার্সিংহোমে রাখা থাকবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ তাঁর দেহ রবীন্দ্রসদনে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। শিল্পীর চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই নির্মলা অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসার জন্য গত ৫ বছরে বেশ কয়েক বার হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন। তিন বার হৃদ্রোগে আক্রান্তও হয়েছেন। তিন-চার দিন আগে অসুস্থতা হঠাৎই বাড়ে। গত বৃহস্পতিবার তাঁর রক্তচাপ বেশ খানিকটা কমে যায়। কিন্তু তিনি আর হাসপাতালে যেতে চাইছিলেন না। শনিবার সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। রাতে তিনি মারা যান।
নির্মলার পুত্র শুভদীপ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, পরিবারের সকলের চোখের সামনেই শিল্পী প্রয়াত হন। তাঁর কথায়, ‘‘চোখের সামনেই মা চলে গেল। ২০১৫-তে সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়। তার পর থেকেই শরীরের একটা পাশে পক্ষাঘাত। তখন থেকেই বিছানায় পুরো শোওয়া থাকতেন মা। ২০১৮ থেকে ২০২২— এই চার বছর হাসপাতাল আর বাড়ি করেছে। শনিবার সকাল থেকেই শ্বাসকষ্ট। তার পর রাতে সব শেষ।’’
শিল্পীর শেষকৃত্য রবিবার হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর পুত্র। তিনি জানিয়েছেন, নার্সিংহোম থেকে নির্মলার দেহ প্রথমে বাড়িতে আনা হবে। সেখান থেকে রবীন্দ্রসদন, রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমি হয়ে ক্যাওড়াতলা মহাশ্মশান।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের পক্ষ থেকে রবীন্দ্রসদনে রবিবার সকাল ১১টা থেকে প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নির্মলার বিখ্যাত গানগুলির মধ্যে অন্যতম— এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না, সেই একজন দিও না তাকে মন, আবেশে মুখ রেখে, বলো তো আরশি তুমি, আমি তো তোমার হাসি কান্নার চিরদিনের সাথী, কাগজের ফুল বলে, ও তোতা পাখি রে... ইত্যাদি। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে শিল্পীর জন্ম অধুনা দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, ১৯৩৮ সালে। তাঁর বাবা পণ্ডিত মোহিনীমোহন মিশ্র এবং মা ভবানীদেবী। বাবার চাকরিসূত্রেই তাঁদের কলকাতায় আসা। ষাটের দশকের একেবারে শুরুতে সঙ্গীত জগতে তাঁর প্রবেশ।
বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী নির্মলা মিশ্রের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কণ্ঠের জাদুতে তিনি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। তাঁর গাওয়া এই বাংলার মাটিতে, এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না, ও তোতা পাখি রে-র মতো অজস্র কালজয়ী গান আজও শ্রোতাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। আধুনিক, নজরুলগীতি, শ্যামাসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক, লোকগীতি ছাড়াও বহু ছায়াছবিতে তিনি গান গেয়েছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির উপদেষ্টা পরিষদ ও বাংলা সঙ্গীতমেলা কমিটির কার্যকরী সমিতির সদস্যা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে 'সঙ্গীতসম্মান' এবং ২০১৩ সালে 'সঙ্গীত মহাসম্মান' ও 'বঙ্গবিভূষণ' সম্মাননা প্রদান করে। নির্মলা মিশ্রের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তাঁর প্রয়াণে সঙ্গীত জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি নির্মলা মিশ্রের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’