পুরীর ভিতর দানা বেঁধেছে রহস্যপুরী

যদি কখনও গোয়েন্দার চরিত্রের চেয়েও ভিলেনের চরিত্র ছাপিয়ে ওঠে, তা স্বভাবতই রেখে যায় অন্য রকম দাগ। যেমনটা হয়েছে এই ছবিতেও। পুরী, কোনারক, জেলেদের বস্তি, গ্রামের মেঠো পথ, নদীর ধার... ‘নীলাচলে কিরীটি’র ক্যামেরার কাজ এককথায় ভাল।

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০৩
Share:

মধ্য গগনে সূর্য। রোদে ঝাঁ ঝাঁ করছে পুরীর অলিগলি। তার মাঝেই মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে কিরীটী রায় (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) সেলফি তুলছে নতুন বউ কৃষ্ণার (অরুণিমা ঘোষ) সঙ্গে। কিন্তু মধুচন্দ্রিমা আর মধুর রইল কই? যেখানে গোয়েন্দার বিচরণ, সেখানেই যে খুনখারাপি, রক্তের ছোপ, রহস্যের ঘনঘটা দানা বাঁধবে, এ আর নতুন কী? এ হেন কিরীটীকে নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘বসন্ত রজনী’ থেকে সোজা তুলে এনে বড় পরদায় দাঁড় করিয়েছেন পরিচালক অনিন্দ্যবিকাশ দত্ত।

Advertisement

কিরীটী-কৃষ্ণা ওডিশার লোকনৃত্যের উৎসব থেকে বেরোতেই দেখা হয়ে যায় পুরনো পাড়ার দাদা কালী রায়ের (অভিষেক চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে। কিন্তু ফেলে আসা পরিচিতের সঙ্গে দেখা হয়েও কেমন যেন তাড়াহুড়ো সেই লোকটার। পরদিন দেখা করার কথা দিয়েও চটজলদি হোটেল ছেড়ে পাততাড়ি গোটায় সে। জানা যায়, কালীর জন্য হোটেলে ঘরটা সারা বছর বরাদ্দ করাই থাকে। কিরীটীর দেখা হয় হোটেলের মালকিন রুনা সান্যালের (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) সঙ্গে। হঠাৎই মেলে হোটেলের ওয়েটারের দেহ। রাতের অন্ধকারে চুরি হয় হোটেলে। রুনাকে কেউ খুন করার চেষ্টা করে। এরই মাঝে খুন হয়ে যায় রুনার স্বামী হারিত সান্যাল (শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়)। কালীর প্রেমিকাকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যায় একদল গুন্ডা। নিখোঁজ কালীর খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকে গোয়েন্দা, প্রেমিকা, পুলিশ। আর কী ভাবে যেন এই সমস্ত রহস্যগুলো এক সুতোয় বাঁধা পড়তে থাকে।

যদি কখনও গোয়েন্দার চরিত্রের চেয়েও ভিলেনের চরিত্র ছাপিয়ে ওঠে, তা স্বভাবতই রেখে যায় অন্য রকম দাগ। যেমনটা হয়েছে এই ছবিতেও। পুরী, কোনারক, জেলেদের বস্তি, গ্রামের মেঠো পথ, নদীর ধার... ‘নীলাচলে কিরীটি’র ক্যামেরার কাজ এককথায় ভাল। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে উপন্যাসের চেয়ে বদল এসেছে ছবিতে। তবে সব রহস্যই কিরীটীর নিজে হাতে তুলে নেওয়ার গতি স্বাভাবিক ভাবে বুনলে ভাল হতো।

Advertisement

নীলাচলে কিরীটি

পরিচালনা: অনিন্দ্যবিকাশ দত্ত

অভিনয়: ইন্দ্রনীল, ঋতুপর্ণা, অভিষেক, অরুণিমা, ঋষভ

৫.৫/১০

সাহিত্যের দৌলতে বাংলা সিনেমা বহু গোয়েন্দা পেয়েছে। পরদায়ও দর্শকদের সামনে এসেছে নানা গোয়েন্দা চরিত্র। সে দিক দিয়ে ‘কিরীটী’ ইন্দ্রনীল কিন্তু গড়পরতাই। অরুণিমার অভিনয় যথাযথ। কিরীটীর সহকারী সুব্রতর চরিত্রে সমদর্শী দত্তের জন্য ছবিতে তেমন কিছু রাখাই ছিল না! তবে অবশ্যই আলাদা করে বলতে হয় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের কথা। আবারও প্রমাণ করলেন, তিনি যতটা সাবলীল, ততটাই দক্ষ। একাকী রমণী আবার অসহায় মায়ের চরিত্র ঋতুপর্ণা বুনেছেন অনায়াসে। এ ছবির আবিষ্কার রামানুজের চরিত্রাভিনেতা ঋষভ। চরিত্রের নানা দিক, হতাশা, আক্রোশ... সুচারু ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নবাগত ঋষভ।

সব মিলিয়ে রহস্যপুরীতে যে থ্রিলারের জাল বুনেছেন অনিন্দ্যবিকাশ, তার সমাধান করতে একটি বারের জন্য দর্শক হলমুখী হতেই পারেন।

পুনশ্চ: এই লেখায় নীহাররঞ্জন গুপ্তের চরিত্র ‘কিরীটী’র বানানই রইল। শুধুমাত্র ছবির নাম ‘নীলাচলে কিরীটি’র বানানটি অপরিবর্তনীয় রাখা হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement