Palan Movie Review

অতীত ‘খারিজ’ করে আধুনিকতা, কেমন হল ‘পালান’? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে ‘পালান’। জন্মশতবর্ষে প্রয়াত পরিচলক মৃণাল সেনের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসাবে এই ছবির ভাবনা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২২
Share:
Movie review of Palan Starring Anjan Dutt and directed by Kaushik Ganguly

‘পালান’ ছবির একটি দৃশ্যে (বাঁ দিক থেকে) শ্রীলা মজুমদার, মমতা শঙ্কর, পাওলি দাম, যিশু সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

সময় এগোতে থাকে। কিন্তু সময়ের চাকায় ফিরে আসে অতীত। কখনও কখনও তা আয়নার কাজ করে। চিনিয়ে দেয় ফেলে আসা স্মৃতিকে। পরিস্থিতির চাপে অঞ্জন সেনের কাছেও চার দশক পর সেই অতীত স্মৃতি হাজির হয়েছে। সেই সঙ্গে অঞ্জনের মনে পড়ে জীর্ণ বাড়িতে এক সময় ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনার কথা। বছর ১২-র পালান নামের পরিচারক ছেলেটি এক শীতের রাতে ওই বাড়ির রান্নাঘরে দমবন্ধ হয়ে মারা যায়। আজকে সেই বাড়িকেই ‘বিপজ্জনক’ ঘোষণা করেছে পুরসভা। তিন দিনের নোটিসে বাড়ি ছাড়তে হবে। শিকড় উপড়ে ফেললেও গাছ পোঁতার জন্য মাটির সন্ধানে এক দম্পতি লড়তে থাকেন।

Advertisement

পরিচালক মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষে প্রয়াত পরিচালককে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে ‘পালান’ ছবিটি তৈরি করেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। সূত্র নিয়েছেন মৃণাল সেনের তৈরি ‘খারিজ’ সিনেমাটি থেকে। মূল চরিত্ররা একই রয়েছে। কিছু চরিত্র যুক্ত হয়েছে। তবে এগিয়ে এসেছে সময়। বেলতলার বাড়িতেই থাকে অঞ্জন (অঞ্জন দত্ত) এবং মমতা (মমতা শঙ্কর)। এখন তাদের ছেলে পুপাই (যিশু সেনগুপ্ত) পাওলিকে (পাওলি দাম) বিয়ে করে কসবার ফ্ল্যাটে থাকে। স্থানীয় প্রোমোটার এখনও জীর্ণ বাড়িটিকে ফ্ল্যাটে পরিণত করার জন্য লড়াই চালাচ্ছে। বাবা-মায়ের ভবিষ্যৎ কী? সন্তাদের কাছেই কি তাঁদের ঠাঁই হবে, না কি কোনও ভাড়া বাড়িতে? এ রকমই কিছু প্রশ্ন নিয়ে গল্প এগিয়েছে।

Movie review of Palan Starring Anjan Dutt and directed by Kaushik Ganguly

‘পালান’ ছবির একটি দৃশ্যে অঞ্জন দত্ত এবং যিশু সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

‘পালান’-এ যে সমস্যার কথা কৌশিক তুলে ধরেছেন, আধুনিক ফ্ল্যাটের ভিড়ে শহর কলকাতার আনাচ-কানাচে তার সন্ধান মেলে। ইদানীং সেই সমস্যা কোথাও কোথায় মফস্‌সলকেও স্পর্শ করেছে। উচ্ছেদ এবং পুনর্বাসনের জাঁতাকলে পিষতে থাকে কিছু মানুষ এবং স্মৃতি। এই ছবিতে কৌশিকের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অতীত এবং বর্তমানের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন। তিনি কিন্তু সেখানে অভিযোগের কোনও অবকাশ রাখেননি। গল্প বুনেছেন যত্ন করে। যাঁরা ‘খারিজ’ দেখেছেন, তাঁদের কাছে ‘পালান’-এর আবেদন অনেক বেশি আবেগতাড়িত। আর যাঁরা দেখেননি তাঁদের কাছেও এই ছবি স্বতন্ত্র।

Advertisement

গল্পের মেরুদণ্ড অঞ্জন দত্তের অভিনয়। বলা যায়, সিংহভাগ দৃশ্যে তিনি চমকে দিয়েছেন। কখনও জেদি, কখনও সিস্টেম বিরোধী আবার কখনও মেজাজি মানুষটার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা একটা ছেলেমানুষ— অঞ্জন এক কথায় অসাধারণ। মমতা শঙ্করও তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন। হরি (দেবপ্রতীম দাশগুপ্ত) বা শ্রীলা (শ্রীলা মজুমদার) চরিত্ররা এসেছে কাহিনির প্রয়োজনে। স্বল্প পরিসরে প্রোমোটারের চরিত্রে নজর কেড়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবিতে অঞ্জনের ছেলে এবং পুত্রবধূর চরিত্র দু’টি নতুন। সেখানে যিশু এবং পাওলি কিন্তু মূল গল্পের সঙ্গে অনায়াসে মিশে গিয়েছেন। তাঁদের ‘নতুন’ বলে মনে হয়নি।

‘পালান’ ছবির একটি দৃশ্যে যিশু সেনগুপ্ত এবং পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত।

অপ্পু প্রভাকরের ক্যামেরা জীর্ণ বাড়িটিকেই ছবির অন্যতম চরিত্র হিসাবে স্থাপন করেছে। ছবি জুড়ে বিভিন্ন শব্দকে প্রাধান্য দিয়েছেন পরিচালক। রাস্তার কোলাহল থেকে শুরু করে বাড়ি ভাঙার শব্দ আরও বেশি করে দর্শক মনে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে নীল দত্তের আবহসঙ্গীত। তবে পাওলির চরিত্রের অতীত জানার আগ্রহ রয়ে গেল। ‘খারিজ’ ছবিতে বাড়ির একাধিক ভাড়াটের উপরে আলোকপাত করা হয়েছিল। এই ছবি কিন্তু অনেক বেশি অঞ্জন-মমতা কেন্দ্রিক।

এই ছবি যে কৌশিকের কাছে অনেকটাই ব্যক্তিগত যাত্রা, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সেই যাত্রায় শামিল হয়েছেন অভিনেতারাও। পরিচিত চরিত্র এবং পরিচিত লোকেশনের মেলবন্ধনে মৃণাল অনুরাগীদের কাছে ‘পালান’ অবশ্যই নজরকাড়া উপহার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement