Bhumi Pednekar

মুভি রিভিউ ‘ভূত পার্ট ওয়ান: দ্য হন্টেড শিপ’: রহস্যভেদ কমেডি হয়েই থেকে গেল

জনমানবহীন, ভাঙাচোরা, পরিত্যক্ত জাহাজটি কী ভাবে আচমকা এক দিন মুম্বইয়ের উপকূলে এসে ভিড়ল, তার তদন্তের দায়িত্ব বর্তায় তাঁদেরই উপরে।

Advertisement

পরমা দাশগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:৩৩
Share:

ভিকি কৌশল।

ছবি: ‘ভূত পার্ট ওয়ান: দ্য হন্টেড শিপ’

Advertisement

অভিনয়ে: ভিকি কৌশল, ভূমি পেডনেকর, আশুতোষ রানা

পরিচালনা: ভানুপ্রতাপ সিংহ

Advertisement



হাড় হিম হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটু আধটু শিহরনও জুটল না কপালে। উল্টে দর্শক হেসে কুটোপাটি। আর তার সৌজন্যেই হরর ছবি তৈরি করতে এসে প্রথম পরীক্ষাতেই ডাহা ফেল পরিচালক ভানুপ্রতাপ সিংহ। ফলে রামগোপাল বর্মার কাল্ট ছবিটির নামটুকু ধার করা ছাড়া তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারল না ধর্মা প্রোডাকশন্সের নতুন ছবি ‘ভূত পার্ট ওয়ান: দ্য হন্টেড শিপ’। এবং বেসামাল গল্প, ততোধিক দুর্বল চিত্রনাট্য, হাস্যকর সিনেম্যাটোগ্রাফির ফাঁসে কার্যত হাঁসফাঁস করেই কাটিয়ে দিলেন ভিকি কৌশল, আশুতোষ রানার মতো বলিষ্ঠ অভিনেতারা। তাঁদের অভিনয়ের শত চেষ্টাতেও শেষমেশ ডুবেই গেল ভুতুড়ে জাহাজ। আর ভূমি পেডনেকরের ভাগ্যে জুটল সাকুল্যে দেড়খানা সিন। ফলে তাঁর হাতে প্রায় কিছু ছিলই না।

ছবির শুরুতে দর্শক দেখেন সাজানো গোছানো এক জাহাজের ডেকে জন্মদিনের পার্টি চলছে। জন্মদিনের হুল্লোড় ছেড়ে তিন বছরের সেই মেয়ে গিয়ে পড়ে ভুতুড়ে কার্যকলাপের খপ্পরে। ব্যস, সেখানেই তার ইতি।


কাট টু দশ বছর পরে। এ বার দর্শকের আলাপ মুম্বইয়ের শিপিং অফিসার পৃথ্বীর (ভিকি কৌশল) সঙ্গে। নিজের অসাবধানতার জেরে র‍্যাফটিং দুর্ঘটনায় স্ত্রী স্বপ্না (ভূমি পেডনেকর) ও ছোট্ট মেয়ে মেঘাকে হারিয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত পৃথ্বী কোনওরকম ওষুধপত্র খেতে নারাজ। কারণ, হ্যালুসিনেট করে মৃত স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে সময় কাটিয়েই শান্তি খোঁজেন তিনি। ফলে সারাক্ষণই ভুতুড়ে অভিজ্ঞতায় ঘিরে থেকে পৃথ্বী যখন তখন আছাড় খান, হাতেপায়ে চোট লাগতেই থাকে লাগাতার। আর তাঁকে আগলে রাখার ভার নিয়ে সর্বদাই ব্যতিব্যস্ত এবং নাজেহাল হতে থাকেন বন্ধু-সহকর্মী রিয়াজ। এ ছবিতে একমাত্র স্বাভাবিক মানুষ বোধহয় এই চরিত্রটিই। কারণ ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেকে নিজের যুক্তিবুদ্ধি কাজে লাগানো, সেটুকু একমাত্র রিয়াজই করে থাকেন।

আরও পড়ুন: কন্যাসন্তানের মা হলেন শিল্পা শেট্টি

যাই হোক, এ হেন পৃথ্বী-রিয়াজের জীবনে এর পরেই ঢুকে পড়ে ভুতুড়ে জাহাজ সি-বার্ড। জনমানবহীন, ভাঙাচোরা, পরিত্যক্ত জাহাজটি কী ভাবে আচমকা এক দিন মুম্বইয়ের উপকূলে এসে ভিড়ল, তার তদন্তের দায়িত্ব বর্তায় তাঁদেরই উপরে। শুধু তদন্ত নয়, সেই জাহাজের অন্দরে ঘোরাফেরা করতে গিয়ে পৃথ্বী নিজেও ভূতের পাল্লায় পড়েন। ইতিমধ্যে ওই জাহাজে উঠে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় এক যুগলেরও। এবং সে সময়েই রিয়াজের স্ত্রী নিলোফারের মাধ্যমে পৃথ্বীর আলাপ হয় প্রফেসর জোশীর (আশুতোষ রানা) সঙ্গে। প্রেতবিদ্যার গবেষক জোশী তাঁর এক যন্ত্রের মাধ্যমে ভূতের উপস্থিতি ও গতিবিধি টের পান।

ছবির দৃশ্যে ভিকি কৌশল এবং ভূমি পেডনেকর

পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে, জাহাজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে, জাহাজের ভিতর থেকে পাওয়া জিনিসপত্র হাতড়ে পৃথ্বী জানতে পারেন, দশ বছর আগে একই দিনে সি-বার্ডের সমস্ত ক্রু একসঙ্গে মারা গিয়েছিল। তার আগে তিন বছর ধরে সেই জাহাজের বিরুদ্ধেই উঠেছিল স্মাগলিংয়ের অভিযোগ। এবং এ-ও জানতে পারেন, এ সবের পর থেকেই এ জাহাজে লাগাতার ভূতের উপদ্রব ঘটেছে। ফলে সি-বার্ড এখন ভুতুড়ে জাহাজ হিসেবেই পরিচিত। রহস্য সমাধানের ভৃত এ বার চেপে বসে পৃথ্বীর মাথায়। রহস্যের হদিস করতে যত বারই তিনি সেই জাহাজে পা দেন, তত বারই একের পর এক ভৌতিক অভিজ্ঞতাও হতে থাকে তাঁর। আর সেই সূত্রেই দর্শকও জানতে পারেন, এই জাহাজেই হয়েছিল মীরার জন্মদিনের পার্টি। ছোট্ট মীরার কথা জানতে পেরে, নিজের মেয়ের মৃত্যুর অপরাধবোধের সঙ্গে তাকে এক করে ফেলে পৃথ্বীরও জেদ চেপে যায়। ভুতুড়ে জাহাজের রহস্যভেদের জেদ। মীরার পরিণতি খুঁজে বার করার জেদ। এবং হয়তো বা নিজের অপরাধবোধ থেকে মুক্তি খোঁজার জেদও। আর সেই জেদের জোরেই এবং প্রফেসর জোশী ও রিয়াজের সহায়তায় শেষমেশ রহস্যের জাল কেটে সত্যিটা বেরিয়ে আসে দিনের আলোয়। এবং ভূতের সঙ্গে গল্পের গরুও উঠে পড়ে একেবারে গাছের মগডালে!

আরও পড়ুন: কেন ব্রেক আপ হয়েছিল শাহিদ-করিনার? করিনা বললেন...

ছবির দৃশ্যায়নে এবং শব্দের কারিকুরিতে চেনা ছকে দর্শককে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা হয়েছিল যথেষ্টই। কিন্তু সবটাই মাঠে মারা গিয়েছে দুর্বল চিত্রনাট্য এবং ভাবনার গলদে। ফলে চোখে আলো জ্বলা, ছাইরঙা ভূতের সাক্ষাতে, ভুতুড়ে পুতুলের গানে, তুড়ির আওয়াজে, হাড় মটমট করা এবং প্রায় টিকটিকির কায়দায় এ দেওয়াল থেকে ও সিলিংয়ে বেয়ে চলা পেত্নীর আচমকা ছুটোছুটিতে গা ছমছম করা দূরে থাক, দর্শক হেসে গড়াগড়ি। বলাই বাহুল্য, ভয় পেয়েছেন শুধু পর্দায় থাকা পৃথ্বীই।


আশুতোষ রানা ওরফে প্রফেসর জোশী তাঁর আবির্ভাব দৃশ্যে ছিলেন খানিক পাগলাটে বৈজ্ঞানিক বা প্রেতচর্চার গবেষক। তার পরে আচমকাই পৃথ্বীর সঙ্গে নেমে পড়লেন গোয়েন্দাগিরিতে। এবং ক্লাইম্যাক্সে এসে সেই তিনিই তান্ত্রিকের মন্ত্র আওড়ে ভূত তাড়ানোর কাজে নেমে পড়লেন! কেন? সে উত্তর খোঁজা বৃথা।


এবং শেষমেশ ছবিটা আসলে ভূতের গল্প, নাকি পৃথ্বীর মনগড়া দুনিয়ার সাইকোলজিক্যাল ড্রামা, নাকি নাটকীয় ভাবে উপকূলে এসে ভেড়া জাহাজের রহস্যভেদের থ্রিলার— সবটাই গুলিয়ে, ঘেঁটে ঘ! তীরে এসে, (নাকি যাত্রার শুরুতেই?) তরীও ডুবে যায় সেইখানেই। কেউই তাকে টেনে তুলতে পারে না আর!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement