Movie Review

পরিণত কোয়েলই ‘রক্ত রহস্য’-এর প্রাণভোমরা

মা হওয়ার পর প্রথম বার বড় পর্দায় রক্তের রহস্য সমাধান ও সন্তানকে খুঁজে পাওয়ার মরিয়া লড়াইয়ে কোয়েল মল্লিক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ২৩:১৭
Share:

সারা বিশ্বজুড়ে কোভিডের করাল থাবা, দীর্ঘ লকডাউন সবকিছুই কাটিয়ে উঠে পুজোর আগেই খুলেছে সিনেমা হল। তার পরেই পুজোতে একগুচ্ছ ছবি রিলিজ। এই পুজোয় বাংলা ছবির রিলিজে হলমুখো হলাম আমিও। সল্টলেকের একটি মাল্টিপ্লেক্সে ঢুকে সেই চিরাচরিত ছবিটা চোখে পড়ল না। চারিদিকটা একটু বেশিই ফাঁকা। খুব ভাল স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা, থার্মাল চেকিং সবকিছু পেরিয়ে অন্দরে প্রবেশ করেও বেশ অচেনা লাগলো চারিদিকটা। এরপরেও চমৎকৃত হওয়ার বাকি ছিল । প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম। যা এর আগে কখনো হয়নি। দর্শকাসনে ছিলাম এক মাত্র আমি। হল ফাঁকা। সত্যি করোনা কালে কত কিছুইনা সম্ভব! কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও খুশির রেশ একটাই পুজোয় নতুন বাংলা ছবি, সেটাও আবার প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার আনন্দ।

Advertisement

মা হওয়ার পর প্রথম বার বড় পর্দায় রক্তের রহস্য সমাধান ও সন্তানকে খুঁজে পাওয়ার মরিয়া লড়াইয়ে কোয়েল মল্লিক। সদ্য মা হয়েছেন তিনি। তার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সন্তানকে কাছে পাওয়ার জন্য পর্দা কাঁপালেন কোয়েল ওরফে স্বর্ণজা। স্বর্ণজা পেশায় একজন রেডিয়ো জকি। নিপাট, সাদাসিধে, অতিবিনয়ী, মানবিক একটি চরিত্র। ঘটনাচক্রে তার সাদামাঠা জীবন যাপনের সঙ্গে জুড়ে যায় রহস্য। রক্তকে ঘিরে রহস্য! নাকি রহস্যেই রক্ত? ছবির নামে প্রথম থেকেই একটা ধোঁয়াশা থেকে যায়। এই রক্ত কি কোনও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইঙ্গিত করে? কোনও ক্ষতের আভাস দেয়? নাকি সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটে রক্তের সম্পর্কের বন্ধনের কথা বলে? রহস্যটা জিইয়ে থাকে। রক্তের রহস্যের জট খুলতে থাকে ছবির সঙ্গে ধীর লয়ে।

দিম্মা, বাবাই এবং তার কাজের জগত নিয়েই জীবন স্বর্ণজার। 'রক্ত রহস্য' এক মায়ের লড়াই, আবার এক মা হারা মেয়েরও লড়াই। বিশ্বাসের গল্প, আবার বিশ্বাস ভাঙারও গল্প। স্বপ্ন যে সোয়েটারের উলের থেকেও নরম নয়, এটা প্রমাণ করার গল্পও কিন্তু বলে এই ছবি। একই ভাবে মা হওয়া যে মুখের কথা নয় সেটাও বার বার পর্দায় বুঝিয়েছেন 'স্বর্ণজা' কোয়েল।

Advertisement

আরও পড়ুন: সোহিনীর জন্য কষে মাটন রাঁধলেন আবির, মশলা নন্দিতা-শিবুর

ছবির প্রথমার্ধ বেশ গতিহীন। রহস্যের জাল বুনতে অনেকটা সময় খরচ হওয়ায় সেই জট তাড়াতাড়ি ছাড়াতে গিয়ে বেশ কিছু বার গল্পের খেই হারিয়ে যায়। সর্বোপরি যতটা সরল ভাবে এই রহস্যের জাল বোনা হয় তার থেকেও সরল ভাবে এ রহস্যের জাল খুলেও যায় সময়ের তালে। মোটের উপর দ্বিতীয়ার্ধ টানটান হলেও রহস্য সে ভাবে দানা বাঁধার সুযোগ পায় না।

পরিচালক সৌকর্য ঘোষালের সঙ্গে কোয়েল মল্লিক।

গোটা ছবি জুড়ে যে কোয়েলকে দেখা গেছে সেই কোয়েল আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত। ঠিক যেমন দর্শকরা গত বছর পুজোয় 'মিতিন মাসি' কোয়েলকে দেখেছিলেন সেই পরিণত ভাবটাই এ ছবিতে যেন আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। এই ছবির পর্দা জুড়ে সব সময় থাকার সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন তিনি ভেঙ্গেচুরে অভিনয়ের মাধ্যমে।কোয়েলের অভিনয়ের গতি টেনে নিয়ে গেছে ছবিকে। এই থ্রিলারে আবেগও পরিণত।ছবির 'ফার্স্ট লুক'-এ আমরা যে কোয়েলকে দেখেছিলাম সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে তার চোখের সেই অভিব্যক্তি একই ভাবে ফিরে আসে ছবির দৃশ্যে।

বাবাইয়ের চরিত্রে অসাধারণ ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। স্বভাবসিদ্ধ হাসিমুখের ঋতব্রতকে পাওয়া গেল ছবি জুড়ে। পর্দার স্বর্ণজাকে দিদি বলা বাবাই পরতে পরতে বুঝিয়েছেন ভাই আর বোনের সম্পর্কের মূল্য।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে কঙ্গনাকে ‘ধর্ষণের হুমকি’, অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে, জানাল অভিযুক্ত

সর্বোপরি দর্শকদের সঙ্গে অন্যভাবে বাবাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তার দিদি স্বর্ণজার। ছোট চরিত্রে শান্তিলাল মুখোপাধায়, কাঞ্চনা মৈত্র, বাসবদত্তা চট্টপাধ্যায় যথাযথ। এই ছবিতে একটা অন্যরকমের চরিত্রে পাওয়া গেল চন্দন রায় সান্যালকে। চন্দন যে কতটা এক্সপ্রেসিভ অভিনয় করতে পারেন তা তিনি আবার দেখালেন। দিম্মার চরিত্রে লিলি চক্রবর্তী অনেককেই হয়তো মনে করিয়ে দেবেন তাদের ঠাকুমা-দিদিমাদের কথা। একটা সাবলীল, সহজাত ভালবাসতে পারার গুণ রয়েছে এই দিম্মার মধ্যে। জয়রাজ ভট্টাচার্য্য এই ছবিতে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় বেশ ভাল। বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে রেডিয়ো জকি-সঞ্চালক মীরকে।

ছবিতে কোয়েলের ভাইয়ের চরিত্রে রয়েছেন ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়।

ছবি দেখতে দেখতে আর একজন মায়ের সন্তানের জন্য লড়াই এর কথা খুব মনে পড়ছিল। আর লেখার সময়ও বেশ কিছু মিল খুঁজে পেলাম। ২০১৫ সালে দীর্ঘ পাঁচ বছরের মাতৃত্বকালীন বিরতি কাটিয়ে ফিরেছিলেন আরেক অভিনেত্রী ঐশ্বর্য রাই বচ্চন 'জজবা'-তে। সেই ছবিতেও ছিল হারানো সন্তানকে ফিরে পাওয়ার জন্য এক মায়ের অদম্য লড়াই। 'রক্ত রহস্য' মা হওয়ার পর কোয়েল মল্লিকের প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি। কাকতালীয়ভাবে দুটো ছবিতেই আমরা পেয়েছি চন্দন রায় সান্যালকে।

আরেকটু সময়ের অভাবে বেশকিছু অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি তৈরি হতে গিয়েও হলনা। একটাই অনস্ক্রীন কেমিস্ট্রি ভালো করে বুনেছেন পরিচালক; স্বর্ণজা আর বাবাই। ছবির গান তো বলছে, কিন্তু সত্যিই কি মন ফুরফুরে থাকলে ডিপ্রেশন দূরে দূরে থাকে? উত্তর দেবে 'রক্ত রহস্য'।

আরও পড়ুন: বিনা দর্শনার্থীতেই পুজো হবে কোন কোন তারকার বাড়িতে?

সিনেমায় রহস্যের জাল বোনা আর ছাড়ানো ব্যাপারটা অনেকটা হেলান দিয়ে থাকে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের গায়ে। এছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দু একটা ক্ষেত্র ছাড়া একে অপরের পরিপূরক হতে ব্যর্থ হয়েছে।

অনেক সময়ই দেখা যায় আমাদের চারপাশে অনেক কিছু ঘটে যার কোনও ব্যাখ্যা হয় না। ঠিক তেমন ভাবেই একজন মা তার সন্তানের জন্য কি কি করতে পারেন তারও বোধহয় কোনও ব্যাখ্যা হয় না, শুধু মায়েদের চাওয়াগুলো ভীষণভাবে একরকম হয়। এটা ভাবতে ভাবতে হল থেকে বেরিয়েই নজরে পড়ল একটা ছবি যাতে লেখা, "দ্য হার্ট ওয়ান্টস্ হোয়াট ইট্ ওয়ান্টস্; দেয়ার ইজ্ নো লজিক - উডি অ্যালেন।"

পরিচালক সৌকর্য ঘোষালের তৃতীয় ছবি ‘রক্ত রহস্য’। তবে যারা রক্তের সঙ্গে সঙ্গে রহস্যের গন্ধ শুঁকতে হল মুখো হবেন ঠিক করেছেন, তারা খুব হাই ভোল্টেজ রহস্য পাবেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement